গাজায় ‘অতিসত্বর ও টেকসই’ যুদ্ধবিরতির আহ্বানে
একটি নতুন প্রস্তাবে ভোটাভুটিতে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। অবরুদ্ধ
গাজায় ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানোর সুযোগ দিতে এবং বেসামরিক হতাহত হ্রাসে ইসরায়েলকে
কিছুটা চাপ দিতে সোমবার তেলআবিবে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড
অস্টিন। এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান জোরদার হওয়ার মধ্যেই
জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১১০ জন নিহত
হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা ১৯ হাজার
ছাড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার সংক্ষিপ্ত এক
বিবৃতিতে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, জাবালিয়ার বিভিন্ন
বাড়িতে হামলায় ৫০ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে রবিবার থেকে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা
দাঁড়িয়েছে ১১০ জনে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এ বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা বলেনি। তবে তারা
ওই এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে। গাজার উত্তরের এ জাবালিয়া শরণার্থীশিবির
বারবারই ইসরায়েলের বিমান হামলার শিকার হয়েছে। যুদ্ধে ইসরায়েলের স্থল হামলারও
কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে জাবালিয়া।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) তারা এলাকাটিতে সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসের অবকাঠামোকে নিশানা করে হামলা চালাচ্ছে। এতে বহু বাড়িঘর এবং সড়ক হামলায় ধ্বংস হয়েছে। গাজার ৮টি শরণার্থীশিবিরের সবচেয়ে বড়টিই জাবালিয়ায় অবস্থিত। ১৯৪৮-৪৯ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এ শরণার্থীশিবির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে বাস করে জাতিসংঘের নিবন্ধিত ১ লাখ ১৬ হাজার শরণার্থী
ইসইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এ শরণার্থীশিবিরকে হামাসের ঘাঁটি হিসেবেই দেখে থাকে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের স্থলবাহিনী এ শিবিরকে কেন্দ্র করেই অভিযান চালিয়ে আসছে। ইসরায়েল সরকার বলেছে, তারা গাজায় অভিযান চালানোর সময় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার চেষ্টা করছে। কিন্তু হামাস সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র লেভি। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস মানবিক আইন এবং মানবতার নীতি ভঙ্গ করে ইচ্ছা করেই বেসামরিক অবকাঠামোর নিচে লুকাচ্ছে। স্কুল, হাসপাতালের নিচে লুকিয়ে পড়া এ সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছাতে ইসরায়েল সাধারণ নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে সরে যেতে বলছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ঘনবসতিপূর্ণ গাজার বিভিন্ন লক্ষ্যে অবিরাম বোমা হামলা চালাচ্ছে। এতে এ পর্যন্ত ১৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান জেনারেল সিকিউ ব্রাউন ইসরায়েলের তেলআবিব পৌঁছেছেন। সোমবার তারা সেখানে পৌঁছান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লয়েড অস্টিন লিখেছেন, তেলআবিবে বিমান অবতরণ করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করব। এসব বৈঠকে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থন আবার তুলে ধরব, হামাসকে নির্মূলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযান, বেসামরিকদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং গাজায় ত্রাণের প্রবেশ অব্যাহত রাখা নিয়েও আলোচনা হবে।
জানা গেছে, এ সফরে গাজায় অভিযানের তীব্রতা কমিয়ে আনতে ইসরায়েলকে চাপ প্রয়োগ করতে পারেন অস্টিন। যুক্তরাষ্ট্রের অটুট সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ইসরায়েলকে রাজি করাতে পারবে কিনা, সেটির একটি পরীক্ষা হিসেবে এ সফরকে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানে শামিল হয়েছে। ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীরা দাবি জানান, গাজায় হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের উদ্ধারে আলোচনা আবার শুরুর করার জন্য। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেন, গাজায় হামাসকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার আগ পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে।
খবর: বিবিসি ও আলজাজিরা