খুলনা
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের
এক দফা দাবি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
১৫ এপ্রিল
দুপুরে কুয়েট স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা
এ ঘোষণা দেন। এদিকে আজ কুয়েটের দাপ্তরিক কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণাপত্রটি
পাঠ করে বলেন, কুয়েট ভিসি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থতার
দায় নিতে অস্বীকার করেছে, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়েছে,
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছে, আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা ঘোষণা করছি। এই
ভিসিকে অপসারণ এখন আমাদের একমাত্র দাবি।
একই সঙ্গে নতুন ভিসির অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে
নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কুয়েটের
ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে ফেলেন।
তালা ভাঙার বিষয়ে কুয়েট উপাচার্য
অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি সিন্ডিকেটে বিষয়টা উপস্থাপন করব। এ
বিষয়ে সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটই নেবে।
হলের তালা ভাঙ্গার আগে ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার
পাদদেশে বেলা একটার দিকে সমাবেশ করে ‘মেক কুয়েট, ফ্রি এগেইন’
কর্মসূচি পালন করেন তারা।
সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে
বহিষ্কার করার সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে এ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেড়
শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেয়ার দাবি জানান। হল খুলে দেওয়ার
দাবিসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এখনই প্রশাসনের কাছে বহিষ্কার হওয়া
৩৭ শিক্ষার্থীর সবার নাম প্রকাশ করার দাবি জানান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল ও বহিরাগত
সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায় প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী রক্তাক্ত হন। আমাদের ওপর গুলি
চালানো হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবি করলে বিচারের নামে নাটক করে
দুই মাস পর কুয়েটের ৪২ জন প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।
এরপর সোমবার সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তেও বহিষ্কারের নামে নাটক করে
প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদেরও বহিষ্কার করার নির্দেশ দেয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এসব
নাটক আর সহ্য করা হবে না। আমাদের ধৈর্যের সীমা পার হয়ে গেছে। তিন দিন ধরে আমরা
খোলা আকাশের নিচে মশার কামড় খেয়ে কষ্ট সহ্য করছি।
এর আগে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায়
সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার
সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের
জন্য খুলে দেয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত
হয়।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে
ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে
অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন
শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা
হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে
প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক
ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ
দাবি করেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার
কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয়
দফা দাবি জানানো হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম
সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার
সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া
হয়।
১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে
বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি গত রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নগরের
মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি মেট্রোপলিটন
ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন।