শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বরের বাকী আর ৬ দিন। ১৯৭১ সালের ১০ডিসেম্বর নওগাঁর রাণীনগর বাসীর জন্য একটি স্মরনীয় দিন। এই দিনে ৩৬ঘন্টা সম্মুখ যুদ্ধের পর নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা প্রথম হানাদার মুক্ত হয়। স্বাধীনতার সংগ্রামে সাড়া দিয়ে সারা দেশের ন্যায় এই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে আগামী প্রজন্মের কাছে এই বার্তা পৌছে দিতে আজও নির্মাণ করা হয়নি কোন স্মৃতি স্তম্ভ কিংবা বিজয় স্তম্ভ।
সূত্রে জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর নওগাঁর রাণীনগর উপজেলাবাসী আজকের এ দিনে শত্রুমুক্ত হয়ে বিজয় উল্লাস আর “জয় বাংলা, বাংলার জয়” জয়ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তুলেছিল রাণীনগর উপজেলার আকাশ-বাতাস। ১৯৭১ সালের ৯ই ডিসেম্বর রাণীনগর পাক-হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা থানা সদরে থাকা হানাদার ক্যাম্প চারিদিক থেকে ঘেরাও করেন। পরদিন ১০ই ডিসেম্বর ভোরে উভয় পক্ষের ৩৬ঘন্টার সম্মুখ যুদ্ধে গোলাগুলির এক পর্যায়ে ১৭জন রাজাকার অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করেন। এই সময় পাক-হানাদার বাহিনী রেললাইন দিয়ে সান্তাহার অভিমুখে পালিয়ে যায়। সম্মুখ যুদ্ধে লুৎফর রহমান নামের এক মুক্তিযোদ্ধা পাক-বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। আর লুৎফর রহমানের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে পাক-হানাদার মুক্ত হয় রাণীনগর উপজেলা। তবে আগামী প্রজন্মের কাছে এই বার্তাটি পৌছে দিতে আজও উপজেলার কোন স্থানে নির্মাণ করা হয়নি কোন স্তম্ভ কিংবা কোন স্থাপনা যে স্থাপনা থেকে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মরা জানতে পারবে যে ১০ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়েছিলো এই উপজেলা।
রানীনগর উপজেলার চকমনু গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ দুলুর ছেলে মিজানুর রহমান জনসন বলেন, আমি বাবার মুখে শুনেছি যে ১০ ডিসেম্বর জেলার প্রথম উপজেলা হিসেবে হানাদার মুক্ত হয় রাণীনগর উপজেলা। কিন্তু দু:খ্যের বিষয় হলো এই যে এতোবড় একটি অর্জনকে শত শত বছরের ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখতে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে এই গৌরবান্বিত অর্জনকে পৌছে দিতে আজোও উপজেলার কোন স্থানে নির্মাণ করা হয়নি কোন স্মৃতি কিংবা বিজয় স্তম্ভ। তাই বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষন করে উপজেলায় একটি বিজয় কিংবা স্মৃতি স্তম্ভ দ্রুত নির্মাণের জন্য দৃষ্টি আর্কষন করছি।
রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে যে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য রয়েছে সেটিকে আধুনিকায়ন করে সেখানে ১০ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে স্থায়ী ভাবে লেখনি স্থাপন করার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। যেন প্রতিটি মানুষই এই ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে চলাচল করার সময় রাণীনগর উপজেলা যে ১০ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়েছিলো সেই বিষয়ে জানতে পারে। এছাড়াও সেখানে উপজেলাকে হানাদার মুক্ত করার যুদ্ধে যিনি শহীদ হয়েছিলেন তার সম্পর্কেও তথ্যবিবরনী স্থাপন করা হবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ দুলু বলেন এটি উপজেলাবাসীর জন্য খুবই দু:খ্যজনক যে স্বাধীনতার অর্ধশতাধিক বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত একটি বিজয় স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি যা থেকে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মরা জানবে যে ১০ডিসেম্বর রাণীনগর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়েছিলো। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয় এই বিষয়ে আমি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।