
ড. মেহেতাব খানম , অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিটি মানুষের হাতেখড়ির মতো ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধ শিক্ষা পরিবার থেকেই হয়ে থাকে। তাই শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীর আচার-ব্যবহার কেমন হবে তা অবশ্যই বোধগম্য । যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে কেবল ছাত্রছাত্রীর আচরণই প্রাধান্য পাবে এমনটা নয়, বরং শিক্ষকের আচরণও অনেক বেশি প্রাধান্য পাবে। কারণ ছাত্রছাত্রী যখন শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, তখন বুঝতে হবে শিক্ষক তাঁর আচার-ব্যবহার, ব্যক্তিত্ব দ্বারা ছাত্রছাত্রীকে প্রভাবিত করতে পারেননি। তাই ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে উভয়েরই করণীয় রয়েছে। শিক্ষকের আচরণ
হছাত্রছাত্রীদের প্রতি শিক্ষকের অবশ্যই স্নেহ ভালোবাসা থাকতে হবে।
হছাত্রছাত্রীদের খারাপ ব্যবহারে শিক্ষক রাগ না করে তাঁকে বুঝতে হবে কেন ছাত্রছাত্রীরা খারাপ ব্যবহার করছে?
হশিক্ষক তাঁর ব্যবহার দ্বারা, ব্যক্তিত্ব দ্বারা ছাত্রছাত্রীকে প্রভাবিত করবেন। কেন শিক্ষক যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা পাচ্ছেন না, তার কারণ খুঁজে সমাধান বের করতে হবে।
হকোনো ছাত্র যত বেশি খারাপ ব্যবহার করবে, শিক্ষক তার সঙ্গে তত বেশি ভালো ব্যবহার করে তার মন জয় করে নেবেন।
হছাত্রছাত্রীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। কোনো ছাত্রকে বেশি ভালোবাসা আবার কোনো ছাত্রকে দেখতে না পারা চলবে না। তাহলে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীর আচরণের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব দেখা দেবে। সব ছাত্রছাত্রীকে সমান ভালোবাসার নজরে দেখতে হবে।
হকোনো ছাত্রকে বেশি নম্বর দেওয়া আবার কোনো ছাত্রকে কম নম্বর দেওয়া চলবে না। এতে শিক্ষকের প্রতি সম্মান কমে যাবে। পাঠদানে সব ছাত্রছাত্রীর প্রতি সমান সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করতে হবে। পরীক্ষার নম্বরের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব না করে যার যে নম্বর প্রাপ্য তাকে সে নম্বর দিতে হবে।
হক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল ছাত্র বা ছাত্রীর প্রতি অবহেলা করা বা তাকে লজ্জা দেওয়া যাবে না। বরং তার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ তার ব্যর্থতা মানে শিক্ষকের নিজের ব্যর্থতা।
ছাত্রছাত্রীর করণীয়
হছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই শিক্ষকের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান দেখাতে হবে।
হকখনোই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষকের সঙ্গে রাজনীতির প্রভাব দেখানো উচিত নয়।
হচালচলন, আচার-ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছদ সব কিছুই শিক্ষকের সামনে শালীন হতে হবে।
হশিক্ষকের প্রতি সম্মান দেখানোর সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে শিক্ষকের কাজ সঠিক ও সুন্দরভাবে করা, তাহলেই শিক্ষক সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।
হশিক্ষকের সঙ্গে কখনোই বন্ধুত্বমূলক আচরণ করা যাবে না। কারণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে শিক্ষককে অবান্তর প্রশ্ন করা বেয়াদবি করার শামিল। শিক্ষক ছাত্রছাত্রীর কাছে সবচেয়ে বেশি আশা করেন ভদ্রতা ও নম্রতা।
হছাত্রছাত্রী যদি কোনো শিক্ষককে ব্যক্তিগতভাবে বেশি পছন্দ করে, তবে সেই ছাত্র বা ছাত্রী তা শিক্ষকের কাছে প্রকাশ করবে। কিন্তু শিক্ষককে বিরক্ত করবে না। যেমন_অযথা শিক্ষকের রুমের পাশে ঘোরাফেরা করা, দেখলেই কথা বলতে চাওয়া, ফোন দিয়ে বিরক্ত করা, শিক্ষক ব্যস্ত থাকলে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া, শিক্ষককে গিফট দেওয়া, খাওয়া অফার করা ইত্যাদি। ছাত্রছাত্রী অবশ্যই দিতে পারে এমন কোনো গিফট শিক্ষক নিতে পারেন। তবে দামি বা অবান্তর কোনো গিফট দিতে শিক্ষক ছাত্রছাত্রীকে প্রশ্রয় দেবেন না।