উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে
যাওয়া মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা পূরণের
লক্ষ্যে বাজারে মুদ্রা সরবরাহের ছক সাজিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ
ব্যাংক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য এই মুদ্রানীতিতে প্রত্যাশিতভাবে
রেপো হার বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার মুদ্রানীতি
ঘোষণা করেন। সেখানেই তিনি এসব পরিবর্তনের কথা জানান। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণে রেপো হার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। এতে রেপো হার ৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি
পেয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠবে। সেই সঙ্গে রিভার্স রেপো হার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানো
হয়েছে ৪ দশমিক ২৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তা হবে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
উচ্চ
মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় গত বছর থেকেই রেপো হার বাড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ফলে তখন থেকেই বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদহার সীমা তুলে নেওয়ার আলোচনা হচ্ছে।
এবার মুদ্রানীতি ঘোষণায় বলা হয়েছে, নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদহার সীমাও তুলে
নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুদহার সীমার বদলে প্রতিযোগিতামূলক ও বাজারভিত্তিক
সুদহার কার্যকর হবে, যদিও তার মার্জিন থাকবে।
বাংলাদেশ
ব্যাংক বলছে, এর মধ্য দিয়ে সমাজে অতিরিক্ত মুদ্রার সরবরাহে রাশ টানা হবে। মূল্যস্ফীতি
মোকাবিলায় এই সিদ্ধান্তও কাজে আসবে।
প্রশ্নোত্তর
পর্বে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার জানান, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে চার ধরনের
লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রচলিত আছে। সুদহার, মূল্যস্ফীতি,
মুদ্রা সরবরাহ এবং বিনিময় হার টার্গেটিং। বাংলাদেশ ব্যাংক এত দিন ‘মূল্যস্ফীতি টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি প্রণয়ন
করে আসছিল। এবার ‘সুদহার টার্গেটিং’
মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। মুদ্রানীতিতে এটা কাঠামোগত পরিবর্তন
বলা যায়।
গভর্নর
বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে টাকার চাহিদা কমাতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ঋণের
সুদহারের যে ৯ শতাংশ ক্যাপ ছিল তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন সুদহার ব্যবস্থা হলো ‘স্মার্ট’ তথা শর্ট টার্ম
মুভিং এভারেজ রেট। ১৮২ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের সঙ্গে
আপাতত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করিডোর বা সীমা দেওয়া থাকবে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড়
সুদহার ৭ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মানে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১০
শতাংশের আশপাশে।
নতুন
মুদ্রানীতিতে নীতি হার হিসাবে বিবেচিত রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক
৫০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে
অর্থ নিলে গুনতে হবে অতিরিক্ত সুদ।
পাশাপাশি
রিভার্স রেপো ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ শতাংশ ২৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ করা
হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখলে ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে বেশি সুদ পাবে।