
জ্ঞান, শ্রম, সত্য, ঐক্য আর আনন্দ—এই পঞ্চব্রত নিয়ে ব্রতচারীদের কাজ। ব্রতচারী শুধু নৃত্যগীতের চর্চা করে না, শ্রমসাধ্য কাজে যুক্ত হয়ে সমাজসেবায়ও নিয়োজিত হয়। সংস্কৃতিচর্চার সংকুচিত এই সময়ে ব্রতচারী চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম।
শনিবার ধানমণ্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন মিলনায়তনে ‘ব্রতচারী’ বাংলাদেশ-এর জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন আলোচকেরা।
সম্মেলনে সাংগঠনিক পর্ব শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ব্রতচারীর প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্ত প্রবর্তিত নৃত্যগীত সহযোগে ব্রতচারী প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হয়।
সন্ধ্যার এই অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ব্রতচারী আন্দোলন ও চর্চা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপরই রেকর্ড করা ভিডিও বক্তব্যে ব্রতচারীর সভাপতি সন্জীদা খাতুন বলেন, গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলন শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐক্যের ভেতর দিয়ে মানুষ হতে বলে। শাশ্বত বাঙালি হয়ে বাঁচার উপায় শিখিয়ে গেছেন তিনি।
ব্রতচারী চর্চার মধ্য দিয়ে যেন দেশের মানুষ সুগঠিত, সংগঠিত ও বাঙালি হতে পারে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন সন্জীদা খাতুন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ব্রতচারী চর্চা এ দেশের নিজস্ব মাটির ও সংস্কৃতির অংশ। শুধু শিক্ষানীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা নয়; প্রাত্যহিক জীবনে এর চর্চা করা উচিত। নতুন শিক্ষাক্রমে আনন্দের মধ্য দিয়ে শিক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া জরুরী বাংলার নৃত্যগীত, লোকসঙ্গীত, লোকগাথা, ছড়া, লোকখেলা সহযোগে। নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে শিকড়ের সাথে বন্ধন দৃঢ় হলেই একজন শিক্ষার্থী বিশ্বমানব হয়ে উঠতে পারে। মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন উদারমনস্ক বিশ্বমানব হয়ে ওঠার জন্য ব্রতচারীর বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ আক্ষেপ করে বলেন, সারা দেশ ব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্রতচারী কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চালু করা যায়নি। অনতিবিলম্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর পরামর্শে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ব্রতচারীর চর্চা জাতীয় শিক্ষানীতি ও পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করেছে। অনুষ্ঠানে জাতীয় পাঠ্যক্রমে ব্রতচারীর অন্তর্ভুক্তিকে আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর করার বিষয়েও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি'র সাথে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং ব্রতচারীর পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।