সদরুল আইন, প্রধান প্রতিবেদক :
ভোট সুষ্ঠু হবে কি না বা সরকারের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নির্বাচনের ফলাফল অন্য রকম হবে, এ নিয়ে নানা সমীকরণ চলছে আওয়ামী লীগের দূর্গ গাজীপুরে।
ইতিমধ্যেই গাজীপুর-৩ আসনে সহিংসতা বিস্তার লাভ করায় মানুষ স্বস্তিতে নেই এখানে।অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে এখানকার ভোটারদের।
এই আসনের বেশিরভাগ এলাকায় নৌকার সমর্থকদের বাধার মুখে পড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থি ইকবাল হোসেন সবুজ সমর্থকেরা।সুষ্ঠু ভোট হলে ফলাফল কি হবে তা নিয়ে চলছে নানামুখি হিসেব।কেউ কেউ বলছেন সুষ্ঠু ভোট হবে না কি সরকার এ আসনে প্রভাব বিস্তার করবে তা দৃশ্যমান হবে কয়েকদিনের মধ্যেই।
গাজীপুরের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় গোটা নির্বাচনি এলাকা এখন সরগরম থাকলেও মুখোমুখি অবস্থান ও দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিভক্তির কারনে জনমনে সংশয় ছড়িয়ে পড়েছে।
গাজীপুরের ৫টি আসনেই প্রার্থীদের প্রতীকে ভোট চেয়ে এলাকায় মাইকিং, পোস্টার ঝোলানো, লিফলেট বিতরণ ও পথসভা চলছে জোরেশোরে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীরা তাদের দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা ও কুশলবিনিময় করছেন।
এ সময় তারা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
প্রার্থীর সঙ্গে কর্মীরাও লিফলেট নিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটারদের কাছে তাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরছেন। গাজীপুরের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুটি আসনে দুজন মন্ত্রীও প্রার্থী রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। তাদের প্রার্থিতার কারণে ভোটের মাঠে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। তার ওপর গাজীপুর-১, গাজীপুর-২ এবং গাজীপুর-৫- স্বতন্ত্র তিন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নির্বাচনি প্রচারণায় নেমেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীর আলমের মা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে।
গাজীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রাসেল। এ আসনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
গাজীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।
গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মো. আখতারউজ্জামান।
এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই আসনগুলোতে ওই তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সরাসরি কাজ করছেন জাহাঙ্গীর আলম।
এ ছাড়া গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলীর মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি রুমানা আলী টুসী।
এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এবার মনোনয়ন পাননি। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
প্রচার প্রচারণা, আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, একে অপরকে কোনঠাঁসা করে মাঠে আসতে বাধা প্রদান সহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় এ আসনটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে গাজীপুর-৪ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ আসনেও সিমিন হোসেন রিমির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাজউদ্দীন আহমদের ভাগ্নে কৃষক লীগ নেতা শিল্পপতি আলম আহমেদ। তিনিও নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন।
নৌকার প্রার্থীরা বলছেন, বিগত দিনে গাজীপুরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। মানুষ অবশ্যই নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নতুনদের সুযোগ দেওয়ার জন্য ভোটারদের সমীহ আদায়ের চেষ্টা করছেন।
বিশেষ করে গাজীপুরের ৫ টি আসনে নৌকার প্রার্থির বিপরীতে রয়েছেন স্থানীয় হেভিওয়েট প্রার্থিরা।আর তাদের পেছনে রয়েছেন জেলার শীর্ষ রাজনৈতিকদের আশীর্বাদ।যে কারনে সবগুলো আসনেই নৌকার প্রার্থিরা কোনঠাঁসা হয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন।
জেলার তিনটি আসনে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করেছেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।তার কারিসম্যাটিক পদার্পণে নৌকার ভরাডুবির আশঙ্কার কথা ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।গাজীপুরের ৫ টি আসনেই নৌকা চরম অস্বস্তিতে যেমন রয়েছে তেমনি অনেকেই মনে করছেন এবারের নির্বাচনে গাজীপুরে বিপর্যয় ঘটতে পারে এবং এ বিপর্যয় সত্যিই যদি ঘটে তবে তার রুপকার হবে এখানকার আওয়ামী লীগই।