রোকসানা মনোয়ার : জ্বালানি তেলে আরোপিত শুল্ক কমিয়ে বা প্রত্যাহার করে মূল্য সমন্বয়ের চিন্তা করছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে গত ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় সূত্রে তখন বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, তেল পাচার ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। বাড়তি আর্থিক চাপের ফলে শিল্প উৎপাদনে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত খরচ। রপ্তানি আদেশ কমে গেছে, ফলে এ মুখী শিল্প-কারখানা রয়েছে হুমকির মুখে।
পাশাপাশি পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল ও অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের দামও লাগামছাড়া। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষিকাজে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
গত কয়েক দিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে ছিল। সর্বশেষ পরিশোধিত তেলের দাম নেমে আসে ব্যারেলপ্রতি ৮৮ দশমিক ১১ মার্কিন ডলারে। একই সময়ে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৯১ দশমিক ৫১ ডলারে নামে, যা গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে বিপিসি বলছে, ব্যারেলপ্রতি দাম ৮০ ডলারের উপরে চলে গেলে তাদের লোকসান গুনতে হয়। হ্রাসকৃত দামের তেল সেপ্টেম্বর মাসে অর্ডার করা হবে। ফলে অক্টোবর নাগাদ ধীরে ধীরে কমতে পারে জ্বালানি তেলের দাম।
জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব তৈরি করতে এরই মধ্যে বিপিসি ও পেট্রোবাংলাকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় আমদানি খাতে ভ্যাট ও ট্যাক্স কতটা কমিয়ে কীভাবে তা মানুষের আয়ত্তে রাখা যায়, তার বিস্তারিত তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে আয়কর ও ভ্যাটের নতুন হার ঠিক করা হয়েছে। শিগগির পুনর্নির্ধারিত হার কার্যকরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এনবিআরকে অনুরোধ করা হবে। যদিও গত বছর সেপ্টেম্বরে জ্বালানি বিভাগ আয়কর ও ভ্যাট পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু তা গ্রহণ করেনি এনবিআর। তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, শুল্ক এবং ভ্যাট প্রত্যাহার করে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো সম্ভব। বহু দেশেই শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করে দাম কমানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে, জ্বালানি তেলের দাম কমলে, নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অবস্থা তৈরি হবে না। সরকার চাইলে পরিবহন খরচও কমাতে পারে। তেলের দাম কমানো সরকারের পক্ষে সম্ভব, আবার তেলের দামও এখন বিশ্ববাজারে কমে গিয়েছে। সরকারের কাছে আগের তেলের মুনাফার টাকাও আছে। তেলের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই সরকারের কাছে, তবে দাম কমানোর হাজারটা যুক্তি রয়েছে।