Logo
শিরোনাম

ক্ষতিকর প্রসাধনী দিয়ে রং ফর্সা করে লাখ লাখ নারী সমস্যায়

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১৪ এপ্রিল ২০২২ | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ |

Image

আবেগময় কণ্ঠে শিরোমা নীরা বলেন, ‘বিয়ের দিন আমাকে দেখতে সত্যিই খুব খারাপ লাগছিল। এতো খারাপ আর কখনো লাগেনি।’ এটা (নীরা ) তার আসল নাম নয়। সামাজিক কারণে এ প্রতিবেদনে তার নাম বদলে দেয়া হয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় রাজধানী কলম্বোর কাছেই থাকেন ত্রিশোর্ধ বছর বয়সী নীরা । বিয়ের আগে তিনি তার ত্বকের রঙ ফর্সা করতে চেয়েছিলেন। তার মতো দক্ষিণ এশিয়ায় আরো অনেক নারীই তাদের গায়ের রঙ উজ্জ্বল করতে আগ্রহী।

তিনি বলেন, ‘বিয়ের দু'মাস আগে আমি একটি সেলুনে গিয়েছিলাম। রঙ ফর্সা করার জন্য তারা তখন আমাকে একটি ক্রিম দিয়েছিল। দু'সপ্তাহ ব্যবহার করার পর দেখলাম আমার মুখ জ্বলে গেছে। আমি ত্বক ফর্সা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা পুড়ে গেল। আমার মুখে প্রথমে শাদা রঙের ছোপ ছোপ দেখা গেল যা পরে কালো দাগে পরিণত হলো 

নীরার যখন তার বিয়ের কেনাকাটা ও অনুষ্ঠানে কারা কারা অতিথি হয়ে আসবেন সেদিকে নজর দেয়ার কথা ছিল তখন তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তার ত্বকের চিকিৎসায়। এর পেছনে অনেক অর্থও খরচ হলো তার।

সেলুন থেকে তাকে রং ফর্সাকারী যে ক্রিম দেয়া হয়েছিল সেটি কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত কোনো প্রসাধনী সামগ্রী ছিল না। এ ক্রিম অবৈধভাবে আমদানি করে কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছিল।

এক বছর ধরে চিকিৎসার পর নীরার গলায় এখনো ওই কালো দাগ রয়ে গেছে। এরকম আরো কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর শ্রীলংকার কর্তৃপক্ষ এখন অনুমোদন নেই এরকম রং ফর্সাকারী ক্রিম বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।

কিন্তু এ সমস্যা শুধু শ্রীলঙ্কারই সমস্যা নয়। এশিয়া ও আফ্রিকাতে লাখ লাখ মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী, গায়ের রং ফর্সা করার জন্যে এমন কিছু ব্যবহার করেন যা শেষ পর্যন্ত তাদের জন্যে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।

বাজার

সারা বিশ্বে গায়ের রং ফর্সা করার এই বাজারের আকার ২০১৭ সালে ছিল প্রায় ৪৮০ কোটি ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এই বাজার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৮৯০ কোটি ডলারে।এর চাহিদা মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যবিত্ত পরিবারে।

রং ফর্সাকারী এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে সাবান, ক্রিম, ব্রাশ, ট্যাবলেট। এমনকি ইঞ্জেকশনও রয়েছে। মানব দেহে মেলানিন পিগমেন্টের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এ ইঞ্জেকশন এবং এগুলো অনেক জনপ্রিয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসেবে দেখা গেছে, আফ্রিকাতে প্রতি ১০ জন নারীর চারজন রং ফর্সাকারী পণ্য ব্যবহার করে থাকেন।

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় নাইজেরিয়াতে। সেখানে ৭৭% নারী ত্বকের রং উজ্জ্বল করার জন্যে নানা ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। তার পরেই রয়েছে টোগো, ৫৯% ও দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৫%।

এশিয়ায় ৬১% ভারতীয় নারী ও চীনে ৪০% নারী এসব ব্যবহার করেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, এসব জিনিসের প্রতি ভোক্তাদের চাহিদাও বাড়ছে। একই সাথে এসব মোকাবেলা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

গত বছর ঘানাতে কর্তৃপক্ষ গর্ভবতী নারীদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিল রং ফর্সাকারী ট্যাবলেট না খাওয়ার জন্যে। কারণ এসব ট্যাবলেটে পাওয়া গেছে এন্টিঅক্সিডেন্ট গ্লুটাথিওন।

গর্ভবতী নারীরা মনে করেন তারা যদি এই ট্যাবলেট খান তাহলে তাদের গর্ভে থাকা সন্তানের গায়ের রং ফর্সা হবে।

এ ধরনের পণ্য মোকাবেলার জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকাতে আছে কঠোর কঠোর আইন। গাম্বিয়া, আইভরি কোস্ট ও রোয়ান্ডাতে রং ফর্সাকারী যেসব পণ্যে হাইড্রোকুইনোন আছে সেগুলো নিষিদ্ধ করেছে।

শরীরে মেলানিনের (বাদামী কিম্বা কালো পিগমেন্ট, যার কারণে ত্বকের রঙ নির্ধারিত হয়) উৎপাদন কমিয়ে দেয় হাইড্রোকুইনোন। একই সাথে এটি স্থায়ীভাবে ত্বকের ক্ষতিও করতে পারে।

চিকিৎসা

ব্রিটিশ স্কিন ফাউন্ডেশন বলছে, ‘চর্ম চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে হাইড্রোকুইনোন আছে এরকম পণ্য নিরাপদে ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকের যেসব স্থানে কালো দাগ পড়ে গেছে সেগুলো এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায় এবং তাতে ভালো ফল পাওয়াও সম্ভব।’

ব্রিটিশ স্কিন ফাউন্ডেশনের একজন মুখপাত্র এন্টন আলেকজানড্রফ বলেন, রং ফর্সাকারী ক্রিমের কোনো কোনোটি হয়তো সহায়ক। কিন্তু সেটা একজন ত্বক বিজ্ঞানীর পরামর্শে ও তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।

কার্যকারিতা


তবে ব্রিটিশ স্কিন ফাউন্ডেশন বলছে, "পুরো ত্বক ফর্সা করার নিরাপদ কোন উপায় নেই।

দোকানে যেসব ক্রিম বিক্রি হয় সেগুলো যে আসলেই গায়ের রং ফর্সা করে এমন প্রমাণ নেই। এর উল্টো ফলও হতে পারে। এই ক্রিম আপনার ত্বককে অস্বাভাবিক রকমের শাদা অথবা আরো কালোও করে দিতে পারে। এর ফলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে ত্বকের স্বাভাবিক গুণাবলীও," সতর্ক করে দিয়েছেন আলেকজানড্রফ।

তবে ম্যালাসমার মতো কিছু কিছু সমস্যার চিকিৎসার জন্যে চিকিৎসকরা রং ফর্সাকারী পণ্য প্রেসক্রাইব করে থাকেন।

বয়স হলে শরীরে এরকম সমস্যা দেখা দেয়া খুবই সাধারণ বিষয়। এতে ত্বকে বাদামী কিম্বা ধূসর রঙের দাগ তৈরি হয়। বিশেষ করে মুখে। নারীদের দেহে এরকম হওয়ার হার বেশি। বিশেষ করে গর্ভধারণের সময়।

আলেকজানড্রফ বলেন, ‘একজন চর্ম চিকিৎসকের মাধ্যমে ত্বকের রং ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে সেজন্যে অনুমোদিত কিছু ক্রিম আছে যা ডাক্তারদের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে।


পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে নারীরা চিকিৎসকদের পরামর্শ ও নজরদারি ছাড়াই এসব রং ফর্সাকারী কসমেটিক ব্যবহার করতে শুরু করে দেন। কিন্তু এসব প্রসাধনীর গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন:

১. ত্বকে চুলকানি
২. প্রদাহ
৩. জ্বালাপোড়া
৪. ফুলে যাওয়া
৫. ফুসকুড়ি পড়া

মার্কারি

কিছু কিছু পণ্য যেগুলো দ্রুত রং ফর্সা করার দাবি করে সেগুলোতে নানা রকমের ক্ষতিকর উপাদানও থাকতে পারে। যেসব পণ্যে মার্কারি আছে সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর," বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কিন্তু তারপরেও মার্কারি আছে এরকম পণ্য চীন, লেবানন. মেক্সিকো, পাকিস্তান, ফিলিপিন, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত হচ্ছে।

শরীরে মেলানিন গঠনের প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দেয় এ হাইড্রোকুইনোন।

যেসব পণ্যে মার্কারি আছে সেগুলোর বিক্রি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকার বহু দেশে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফিলিপিন ও আরো কয়েকটি দেশ অল্প পরিমাণে মার্কারি আছে যেসব পণ্যে সেগুলো বিক্রির অনুমোদন দিয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য

আলেকজানড্রফ বলেন, ‘মার্কারি হচ্ছে বিষ।’ তিনি বলেন, এর ফলে নানা রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।

মার্কারি আছে যেসব সাবান ও ক্রিমে সেগুলো ব্যবহার করলে যেসব ক্ষতি হতে পারে। তা হলো:

১. কিডনির ক্ষতি

২. ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া, রং বদলে যাওয়া, কালশিটে দাগ পড়া

৩. ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাল সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাওয়া

৪. উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, বিষণ্ণতা, মানসিক অস্থিরতা থেকে বৈকল্য

৫. স্নায়ু-জনিত সমস্যা

ধারণা

মার্কিন ত্বক বিজ্ঞানী শুয়াই জু বলেন, ‘লোকেরা মনে করেন যে ত্বকের ক্রিম সাধারণত নিরাপদ। এর ফলে স্বাস্থ্যের কী ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে তারা চিন্তাও করেন না। এ মানসিকতা পরিবর্তনের প্রয়োজন। আমার কাছে যেসব রোগী আসেন তারা আমাকে বিভিন্ন রকমের ক্রিম দেখান যেগুলো তারা কোনো ধরনের প্রেসক্রিপশান ছাড়াই বাজার থেকে কিনেছেন। সেগুলো দেখে সত্যিই আমি অবাক হয়ে যাই।

তিনি যেখানে পড়ান সেখানে এসব ক্রিমের ব্যবহারের ওপর একটি গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে স্টেরয়েড আছে এরকম কিছু কিছু ক্রিম ঠিকমতো ব্যবহার না করলে শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

বিপদ

বিপদজনক এসব পণ্যের বিক্রি ঠেকাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে শুয়াই জু।

তিনি বলেন, ‘ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প যেরকম নিয়ন্ত্রিত, কসমেটিক শিল্প সেরকম নয়। শীর্ষস্থানীয় যেসব কোম্পানি আছে তারা এ ধরনের বিপদজনক পণ্য তৈরি করে না। কিন্তু এধরনের পণ্য যখন বাইরে থেকে আমদানি করে আনা হয় তখনই নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বাজারে এরকম অনেক জাল পণ্য বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করা কঠিন। যারা এসব উৎপাদন করে তাদেরকে পাকড়াও করা সহজ নয়। কিছু কিছু পণ্য আছে যেগুলোতে কী উপাদান আছে সেসবও উল্লেখ করা হয় না। আপনি জানতেও পারেন না কারা এসব উৎপাদন করেছে। পণ্যটি ধরে এর উৎপাদনকারীদের খুঁজে বের করাও সম্ভব হয় না।

ফলে ত্বকের রং ফর্সা করার এরকম দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে লোকজনকে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।


সামাজিক আন্দোলন

এসব পণ্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে অনেকে সিনেমা নাটকের মতো বিনোদন শিল্পকে দায়ী করে থাকেন। কারণ এগুলোতে বিশেষ ধরনের শারীরিক কাঠামো ও ত্বকের রং-এর ওপর জোর দেয়া হয়।

আর এর ফলে হুমকির মুখে পড়ে লাখ লাখ নারীর স্বাস্থ্য।

গায়ের রং ফর্সা হতে হবে - এ মানসিকতার পরিবর্তনের জন্যে বিভিন্ন সমাজে নানা ধরনের আন্দোলন চলছে।

ভারতে এরকম এক আন্দোলনের নাম: 'কালোই সুন্দর।'

পাকিস্তানে এরকম এক আন্দোলনের স্লোগান: ‘সুন্দর হতে হলে আপনার ত্বকের রং ফর্সা হতে হবে না।

সূত্র : বিবিসি


আরও খবর

তীব্র তাপপ্রবাহে সুস্থ থাকার উপায়

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ঈদে বালুচর এর পাঞ্জাবি

রবিবার ৩১ মার্চ ২০২৪




দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা, দুর্বিসহ অবস্থা

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ |

Image

ভারী বৃষ্টি ও তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলোর অন্যতম দুবাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত দুবাই বিমানবন্দর যেভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে সেটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। শহরটির বহু বাড়ি ও শপিংমল হাঁটু পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। দুবাইয়ের মতো শহরে এ ধরনের চিত্র অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। দুবাই বিমানবন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাতিল করতে হয়েছে শত শত ফ্লাইট। বিমানবন্দরের ভেতরে চরম এক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দরের পরে দুবাই বিমানবন্দরই হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। গত বছর এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছে আট কোটি যাত্রী। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে বিমানবন্দরটি প্লাবিত হওয়ায় দুবাইগামী ও দুবাই ছেড়ে আসা ফ্লাইট কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর থেকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ঢাকার বাসিন্দা প্রসূন রায় গত তিন ধরে দুবাই বিমানবন্দরে আটকে আছেন। কবে ঢাকায় আসতে পারবেন সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা ভর করেছে তার মধ্যে। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আটবার তার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ফ্লাইট কখন ছেড়ে যাবে সেটির কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।

দুবাই থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ফ্লাইট ছিল প্রসূন রায়ের। কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ফ্লাইটে উঠতে পারেননি। মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরে যাবার পর তিনি ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। ফ্লাইটের কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে এন্ট্রি ভিসা নিয়ে তিনি শহরের ভেতরে গেছেন। কারণ, এয়ারপোর্টের ভেতরে কোনো হোটেলে কক্ষ খালি নেই।

তার বর্ণনা অনুযায়ী, হাজার হাজার যাত্রী দুবাই এয়ারপোর্টের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। অনেকে স্লোগান দিচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রাত-দিন কাজ করেও কূলকিনারা করতে পারছে না।

ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে যারা বুধবার দুবাইতে অবতরণ করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা ছিল দুর্বিষহ। অবতরণ করার জন্য বিমানগুলো আকাশে চক্কর দিলেও অবতরণের অনুমতি পাচ্ছিল না। বিমানবন্দরের বাইরে শত শত গাড়ি বিকল অবস্থায় পড়ে ছিল।

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, অনেকবার ফ্লাইট বাতিল হবার পর শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকা থেকে দুবাই পৌঁছেছেন। ঢাকায় তিনি ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দুবাইয়ের উদ্দেশে প্লেন ছেড়ে যায়।

তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আকিব ইরফানের। তার স্ত্রী দুবাই থেকে ঢাকা আসার কথা ছিল। এক দিন অপেক্ষা করার পর শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকার উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে উঠতে পেরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফ্লাইট কনফার্ম না হলে কাউকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, ভেতরে যাত্রীদের এতো বেশি চাপ তৈরি হয়েছে যে আর যাত্রী ভেতরে নেওয়া সম্ভব ছিল না।

দুবাই বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন ব্রিটিশ টুরিস্ট অ্যান উইং, তার স্বামী ও তিন সন্তান। তারা লন্ডনের হিথ্রোতে যাবার জন্য অপেক্ষা করছেন। এটা খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমদের পশুর মতো করে রাখা হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক, বলছিলেন অ্যান উইং। তিনি বলছিলেন, তার পরিবারের সদস্যদের কাছে কোনো খাবার নেই।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আটকে পড়া যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে খাবার আনতে কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ, বিমানবন্দর অভিমুখে সবগুলো সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।

গত ৭৫ বছরের মধ্যে দুবাইতে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক মশিউর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুরেও বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা আছে বলে তিনি জানান। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬০ মিলিমিটার।

দুবাইয়ের সাংবাদিক সাইফুর রহমান বলছেন, সেখানে তীব্র জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের অপ্রতুল ব্যবস্থা। তিনি জানান, শহরের কেন্দ্রস্থলে ড্রেনেজ সিস্টেম আছে, কিন্তু এর বাইরে ড্রেনেজ সিস্টেমের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। তিনি জানান অল্প বৃষ্টিতেও অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় তীব্র জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।

দুবাইয়ে ভালো ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য ২০২৩ সালে দেশটির সরকার প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশটির সরকার বলছে, আগামী ১০০ বছরের কথা চিন্তা করে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সরকার এবং বেসরকারি খাত মিলে এই কাজ করবে।

দুবাইয়ের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

একটানা বৃষ্টি এবং তার ফলে সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ওমানে ২০ জন মারা গেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে জীবনযাত্রা অচল হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার দুবাইতে আসা কিছু ফ্লাইট অবতরণ করতে পারলেও সার্বিকভাবে বিমানবন্দর অনেকটাই অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দরটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার এক নম্বর টার্মিনালে কিছু বিমান অবতরণ করা শুরু করেছে। কিন্তু দুবাই ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলোর আরও বিলম্ব হবে। এটা এখনো সাংঘাতিক একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আমার মনে হয় না কেউ তার জীবনে কখনো এ ধরনের অবস্থা দেখেছে, জানান দুবাই বিমানবন্দরের প্রধান পল গ্রিফিথস।

বিমানবন্দরের আশপাশের সড়কগুলো যানজটে স্থবির হয়ে আছে। কারণ, হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।


আরও খবর



আল-আকসায় ঈদ জামাতে মুসল্লিদের ঢল

প্রকাশিত:বুধবার ১০ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ |

Image

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মতো ফিলিস্তিনেও ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে আজ বুধবার। তবে অন্যান্য সব দেশে ঈদ উৎসবে পরিণত হলেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সেটি অবাস্তব। ঈদের রাতেও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। স্বজনদের দাফনের মাধ্যমে গাজায় কাটছে ঈদ। ঈদের নামাজে আল আকসা মসজিদে সমবেত হন হাজার হাজার মুসলিম।

ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে নুসিরাত ক্যাম্পে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই শিশু। ইসরায়েলের গণহত্যা থেকে ছয় মাস বেঁচে থাকা গাজার বাসিন্দা আবুবকর বলেন, 'এবার ঈদ হবে আমাদের আরও প্রিয়জনকে কবর দেওয়ার মধ্য দিয়ে।' খবর আল জাজিরার ও মাকতুব মিডিয়ার।

আবুবকর বলেন, 'অপুষ্টির কারণে আরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে, আরও বেশি যুদ্ধে আহত হচ্ছে। প্রতিদিন আরও বেশি লোক মারা যাচ্ছে।পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'বাড়িতে বোমা ফেলা হচ্ছে, জায়গায় জায়গায় আঘাত করা হচ্ছে। রাফায় স্থল আক্রমণ করা হতে পারে এ নিয়ে মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।

মধ্য গাজার ফিলিস্তিনি যুবক জানান, এবারের ঈদের কোনো মানে নেই। তার কথায়, 'এটা শুধু দুঃখের। এটা শুধুই অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং বিষাদময়। আমরা উদযাপন করতে পারি এমন কিছু নেই।'

এরপরও আবুবকররা আশা দেখছেন যে, এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধের অবসান হবে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঈদুল ফিতরের বার্ষিক শুভেচ্ছায় গাজা এবং অন্যত্র মুসলমানদের উপর সহিংসতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, 'আমার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে যে গাজা, সুদান এবং আরও অনেক জায়গায়, সংঘাত ও ক্ষুধার কারণে মুসলিমরা সঠিকভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবে না।

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলায় ৩৩ হাজার ২০৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এখনও ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে রয়েছে অন্তত ৮ হাজার মানুষ।


আরও খবর



দামের উত্তাপে পুড়ছে মাংস-সবজির বাজার

প্রকাশিত:বুধবার ১০ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ |

Image

উৎসব এলেই ভারি হয় ব্যবসায়ীদের পকেট। পণ্যের দাম বাড়িয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। ব্যতিক্রম হয়নি ঈদুল ফিতরেও।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একদিনের ব্যবধানে ৪০ টাকা বেড়ে পটল ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। ঈদের সালাদের অন্যতম অনুষঙ্গ গাজরের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা।

শসায় বেড়েছে ২০ টাকা আর কাঁচামরিচে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে হয়েছে সেঞ্চুরি। বাড়তি দরের তালিকায় আছে টমেটো এবং লেবুও। ক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটিতে সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অথচ বাজার শাক-সবজিতে ভরপুর।

শুধু সবজি আর সালাদের অনুষঙ্গ নয়, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে আলুর কেজি ঠেকেছে ৫০-৫৫ টাকায়। আড়ৎদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুদামজাত করে মজুতের ফলে বাজারে দেখা দিয়েছে পণ্যের সংকট। পাশপাশি ঈদের কারণে পণ্যও আসছে কম। তাতেই চড়েছে বাজার।

এদিকে, একদিনের ব্যবধানে গরুর মাংসের কেজিতে ৫০-৭০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮৫০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, গরুর দাম বাড়ায় বেড়েছে মাংসের দামও।

আর গত ২৫ মার্চ গরুর মাংস বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয়া মাংস বিক্রেতা খলিলের দোকানেও কেজিতে বেড়েছে ৫৫ টাকা। দাম বাড়িয়ে কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।


আরও খবর



জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভোট দিলো বাংলাদেশ

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ |

Image

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। শুক্রবার হওয়া এ প্রস্তাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশ।

প্রস্তাবটির বিষয় ছিল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় করা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ইসরাইলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

এছাড়া এই প্রস্তাবে ইসরাইলে সব ধরনের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। কারণ গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা।

সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা বাংলাদেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে এবং ইসরাইলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এবং ইসরাইলের পক্ষে ভোট দিয়েছে ছয়টি দেশ এবং ভোটদানে বিরত ছিল ১৩টি দেশ।

প্রস্তাবের পক্ষে এবং ইসরাইলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, বুরুন্ডি, চিলি, চীন, আইভরি কোস্ট, কিউবা, ইরিত্রিয়া, ফিনল্যান্ড, গাম্বিয়া, ঘানা, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, কাতার, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভিয়েতনাম।

প্রস্তাবের বিপক্ষে ও ইসরাইলের পক্ষে ভোট দিয়েছে আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া, জার্মানি, মালাউই, প্যারাগুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্র।

ভোটদানে বিরত ছিল আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, ক্যামেরুন, কোস্টারিকা, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ফ্রান্স, জর্জিয়া, ভারত, জাপান, লিথুয়ানিয়া, মন্টিনিগ্রো, নেদারল্যান্ডস ও রোমানিয়া।

যুদ্ধপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ইসরাইলকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা এ প্রস্তাবটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সহকারী প্রফেসর মার্ক ওয়েন জোনস। তবে তিনি সঙ্গে এও জানিয়েছেন, বাস্তবে এটির খুব বেশি কার্যকারিতা নেই।

এই প্রফেসর সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেছেন, প্রতীকি অর্থে প্রস্তাবটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবারই প্রথমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই অবস্থান নিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইসরাইলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং তাদের অস্ত্র না দেওয়ার প্রস্তাবে ইউরোপের অনেক দেশ সমর্থন জানিয়েছে। অথচ যুদ্ধের শুরুতে বেশিরভাগ ইউরোপীয়ান দেশ ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

যারমধ্যে ফিনল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ এবং বেলজিয়াম সরাসরি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে এবং ফ্রান্স ভোটদানে বিরত ছিল। অর্থাৎ প্যারিসও এতে সমর্থন জানিয়েছে।

যেহেতু মানবাধিকার কাউন্সিলের মাত্র ছয়টি দেশ ইসরাইলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। সে কারণে গাজার যুদ্ধে ইসরাইল যে কৌশল অবলম্বন করছে। সেটি পরিবর্তন করতে তাদের ওপর চাপ তৈরি হবে।


আরও খবর



ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরলো ৪০৭ প্রাণ

প্রকাশিত:শনিবার ২০ এপ্রিল ২০24 | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ |

Image

এবারের ঈদে গতবারের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ঈদে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত হয়েছেন।

শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা পর্যন্ত এ তথ্য উঠে এসেছে।

একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ পথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় জন ৪৩৮ নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছেন।

আর বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭. দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে। দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মাসেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৯৮টি মোটরসাইকেল দুৰ্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত, ২৪০ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০ দশমিক ৩৭ শতাংশ প্রায়।

এ সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৮৭ জন চালক, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৪০ জন পথচারী, ৭৫ জন নারী, ৪৭ জন শিশু, ২৭ জন শিক্ষার্থী, ০৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, চারজন শিক্ষক, একজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, দুজন চিকিৎসকের পরিচয় মিলেছে।


আরও খবর