২০২৩
সালের মে মাসে দেশে ৪৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৮ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত
হয়েছেন ৬৩১ জন। নিহতদের মধ্যে ৬৭ জন নারী ও ৭৮ জন শিশু রয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পাঠানো এক
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংগঠনটি জানায়, নয়টি জাতীয় দৈনিক,
সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি
তৈরি করা হয়েছে।
সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৯১টি। এসব দুর্ঘটনায়
নিহত ৪০৮ জন ও আহত ৬৩১ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৬৭ ও শিশু ৭৮ জন। ১৫৬টি মোটরসাইকেল
দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪১ জন। যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহতের ৩৪.৫৫ শতাংশ।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩১.৭৭ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা
মোট নিহতের ২৫.৪৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭২ জন, অর্থাৎ মোট
নিহতের ১৭.৬৪ শতাংশ।
এ সময়ে
ছয়টি নৌ-দুর্ঘটনায় চারজন নিহত ও দুইজন নিখোঁজ হয়েছেন। ২৫টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৩ জন
নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন।
সংগঠনটি
জানায়, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও
আরোহী ১৪১ জন (৩৪.৫৫ শতাংশ), বাস যাত্রী ছয়জন (১.৪৭ শতাংশ), ট্রাক, কাভার্ডভ্যান,
পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি, ট্যাঙ্কার আরোহী ৩৬ জন (৮.৮২ শতাংশ ), প্রাইভেটকার,
মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১৮ জন (৪.৪১ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী
(ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, মিশুক) ৬৮ জন (১৬.৬৬ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে
তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন, করিমন, মাহিন্দ্র, ইট ভাঙার মেশিন গাড়ি) ১৫ জন
(৩.৬৭ শতাংশ) ও বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশা ভ্যান আরোহী ২০ জন (৪.৯০ শতাংশ)
নিহত হয়েছেন।
রোড
সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬৫টি (৩৩.৬০
শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২০১টি (৪০.৯৩ শতাংশ ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৩টি (১৪.৮৬ শতাংশ)
গ্রামীণ সড়কে, ৪৮টি (৯.৭৭ শতাংশ) শহরের সড়কে ও অন্যান্য স্থানে ৪টি (০.৮১ শতাংশ)
সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাগুলোর
৭১টি (১৪.৪৬ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৩৬টি (৪৮.০৬ শতাংশ ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে,
১০৭টি (২১.৭৯ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়ায়, ৫৪টি (১০.৯৯ শতাংশ) যানবাহনের
পেছনে আঘাত করায় ও ২৩টি (৪.৬৮ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায়
সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি,
লরি, ড্রামট্রাক, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ২৯.২০ শতাংশ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার,
অ্যাম্বুলেন্স, পাজেরো ৫.১২ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৩.৬৭ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৩.৭৮
শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, বেবিট্যাক্সি-মিশুক)
১৬.৬৬ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, করিমন, ভটভটি, চান্দের গাড়ি, টমটম,
মাহিন্দ্র, ডাম্পার, লোবেট, ইট ভাঙার মেশিন গাড়ি, ধানমাড়াই গাড়ি) ৪.২৭ শতাংশ,
বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান ৩.৮৪ শতাংশ ও অজ্ঞাত গাড়ি ৩.৪১ শতাংশ।
দুর্ঘটনায়
সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭০২টি। এর মধ্যে ট্রাক ১১৪টি, বাস ৯৬টি, কাভার্ডভ্যান
২৩টি, পিকআপ ২৭টি, ট্রাক্টর ৯টি, ট্রলি ১৩টি, লরি ৬টি, ড্রাম ট্রাক ৯টি, তেলবাহী
ট্যাঙ্কার ৪টি, মাইক্রোবাস ১১টি, প্রাইভেটকার ১৬টি, অ্যাম্বুলেন্স ৭টি, পাজেরো
২টি, মোটরসাইকেল ১৬৭টি, থ্রি-হুইলার ১১৭টি, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩০টি,
বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান ২৭টি ও অজ্ঞাত গাড়ি ২৪টি।
সময়
বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ভোরে ঘটেছে ৫.২৯ শতাংশ, সকালে ঘটেছে ২৫.২৫
শতাংশ, দুপুরে ঘটেছে ২৮.৭১ শতাংশ, বিকেলে ঘটেছে ১২.২১ শতাংশ, সন্ধ্যায় ঘটেছে ৮.৯৬
শতাংশ ও রাতে ঘটেছে ১৯.৫৫ শতাংশ।
দুর্ঘটনার
বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৭.২৯ শতাংশ, প্রাণহানি ২৫
শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৪৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১২.৯৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম
বিভাগে দুর্ঘটনা ১৭.৩১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭.৬৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.০৫
শতাংশ, প্রাণহানি ১৬.১৭ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৪৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৪.৯০
শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.২৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.৩৭ শতাংশ, রংপুর বিভাগে
দুর্ঘটনা ৭.৯৪ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.৮৪ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.১৬
শতাংশ, প্রাণহানি ৯.০৬ শতাংশ ঘটেছে।
সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি
ঘটেছে। এ বিভাগে ১৩৪টি দুর্ঘটনায় ১০২ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২১টি
দুর্ঘটনা এবং বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে কম প্রাণহানি (২০ জন) ঘটেছে। একক
জেলা হিসেবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ২৯টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম
শরীয়তপুর ও রংপুর জেলায়। এই ২টি জেলায় সামান্য মাত্রার ৭টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো
প্রাণহানি ঘটেনি।
রাজধানী
ঢাকায় ২৬টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছেন।
গণমাধ্যমে
প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা
শিক্ষক ১১ জন, পল্লি চিকিৎসক ৩ জন, পশু চিকিৎসক ১ জন সাংবাদিক ৪ জন, আইনজীবী ১ জন,
বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৩ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, ঔষধ ও
বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৭ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী
২৩ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ৮ জন, চিনিকল শ্রমিক ১ জন, বালু শ্রমিক ২ জন, পোশাক
শ্রমিক ৪ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৩ জন, ধানকাটা শ্রমিক ৪ জন, ইট ভাঙার শ্রমিক ৩ জন,
রিকশা মেকানিক ২ জন এবং মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন ছাত্রীসহ সারা দেশের
স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজের ৫৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।