Logo
শিরোনাম

সাজেকের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ি ও সাজেকের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ১০টার দিকে দিঘীনালা সাজেক সড়কের শুকনা ছড়া এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার।

তিনি জানান, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের ফলে বাঘাইছড়ির ১০ নংশুকনাছড়ি বড়ইতলী সংলগ্ন ৫৪ বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা ও সাজেকের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, সীমান্ত সড়কের জন্য পাথর নিয়ে যাওয়া একটি ট্রাকও বর্তমানে আটকা পড়েছে। তবে পাহাড় ধসে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, পাহাড় ধসের বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সকলকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি সকালের মধ্যে সড়কের মাটি সরিয়ে ফেলা যাবে। এতে পর্যটকদের কোনো সমস্যা হবে না।


আরও খবর



হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিচ্ছে ইরান

প্রকাশিত:রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

টানা কয়েকদিন ধরে ইরান-ইসরায়েলের হামলা ও পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। গত শুক্রবার ভোরে তেহরানসহ ইরানের বেশ কিছু স্থানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। পরে তীব্র শক্তি নিয়ে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। জবাবে শনিবার ইরানের তেল ও জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

এ অবস্থায় ইরানের তেল ও জ্বালানি স্থাপনায় হামলা আরও বাড়লে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে দেশটি। বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে রোববার (১৫ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক সিনা তুসি জানিয়েছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের তেল ও জ্বালানি অবকাঠামোতে আরও বড় ধরনের হামলা চালায়, তাহলে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে এবং এটাই হতে পারে তাদের (তেহরানের) চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া।

আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটাই ইরানের সর্বোচ্চ মাত্রার জবাব হতে পারে।

অবশ্য হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরআইএনএন শনিবার জানিয়েছে, সরকার হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

প্রসঙ্গত, এই প্রণালী হলো পারস্য উপসাগরে প্রবেশের একমাত্র সমুদ্রপথ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা (ইআইএ)-এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের মোট তেল চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়।

সিনা তুসি আরও জানান, আমরা এখনো সেখানে (হরমুজ বন্ধের মতো পদক্ষেপে) পৌঁছাইনি। তবে শনিবার ইসরায়েল ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে একটি গ্যাসক্ষেত্রে হামলা চালিয়েছে।

অন্যদিকে, ইরানও হাইফায় হামলায় ইসরায়েলের কিছু জ্বালানি স্থাপনায় আঘাত করেছে বলে খবর রয়েছে।”

তিনি বলেন, শনিবার জ্বালানি স্থাপনাগুলো ঘিরে পাল্টা-পাল্টি হামলা হয়েছে। এই ধারা চলতে থাকলে পুরো পারস্য উপসাগর অঞ্চল থেকে জ্বালানি সরবরাহ হুমকির মুখে পড়তে পারে।

প্রসঙ্গত, হরমুজ প্রণালী হচ্ছে ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ পানিপথ, যার মাধ্যমে উপসাগরীয় দেশগুলোর অধিকাংশ তেল রপ্তানি হয়।

এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তেল রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ইরান এই প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল।


আরও খবর



জরুরি সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে

প্রকাশিত:রবিবার ১৮ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৬ জুন ২০২৫ |

Image

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন, আবার আপনি সরে গেলেন, আপনি মনে করছেন আপনাকে জনগণ অসীম ক্ষমতাশীল বানিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো পরামর্শ আপনার মানার দরকার নেই। যদি তাই মনে করেন আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হবে, ইতোমধ্যে কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে উচ্চাভিলাষ প্রকাশ করছে। তাদের উদ্দেশ্য অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অনির্বাচিতভাবে যেন এই সরকার থাকতে পারে। আপনার কী উদ্দেশ্য তা অবশ্য আমরা জানি না।

খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যদি কোনোদিন নির্বাচনের দাবিতে এই সরকারকে ঘেরাও করতে হয়, তা হবে আমাদের জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্য। আপনি কি (প্রধান উপদেষ্টা) চান এই নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক, এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক।

তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনি সম্মানের সঙ্গে ডিসেম্বরের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করুন। সংস্কার এবং বিচার চলমান প্রক্রিয়া, তা চালু থাকবে যারাই সরকারে আসুক না কেন। অনন্তকাল ধরে আপনি বিচার এবং সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করবেন না। যাদের পরামর্শে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন, সেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণ করুন। আমরা আগেও বলেছিলাম আপনার উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে, আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। এখন কিছু বিদেশিদের দোসর আছে। এখন আমরা তাদের অপসারণের কথা বলছি। আর যারা এনজিও মার্কা উপদেষ্টা আছে, যারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের কথা শোনার প্রয়োজন নেই, তাদেরকে অপসারণ করুন। না হলে সসম্মানে বিদায় নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনার নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের পরে সাংবিধানিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু মনে করবেন না রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদের আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইবো। এখন মানুষ বলছে, আপনার সরকার এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির ২ জন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা, তারা আবার এনসিপি সংগঠন করে। যদিও অফিসিয়ালি করেন না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানে, ওপেন সিক্রেট। যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান তাহলে এনসিপি মার্কা ২ জনকে পদত্যাগ করতে বলুন, যদি পদত্যাগ না করে আপনি বিদায় করুন।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে, এটা কীভাবে ভাবলেন? তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেননি। অত্যন্ত ‘অ্যারোগ্যান্টলি’ আপনার সেই উপদেষ্টা বলছেন তাতে নাকি কিছু যায় আসে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা দাবি করছি- সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয় নিজে পদত্যাগ করবে, না হয় আপনি তাকে বিদায় করবেন। এই দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য, আমরা তা হতে দেব না। এই দেশে বন্দর- করিডোর সবকিছু নাকি ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে, বিদেশে আপনি কী কন্ট্রাক্ট করে এসেছেন জানি না। আপনি কি চুক্তি করে এসেছেন অবলীলাক্রমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর, নদী বন্দর, করিডোর সব বিদেশিদের হাতে হস্তান্তর করবেন? আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন করা।

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।


আরও খবর



নওগাঁর পশুর হাটগুলোতে ফিরেছে শৃঙ্খলা, আদায় হচ্ছে নির্ধারিত খাজনা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৬ জুন ২০২৫ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :

পূর্বের দিনগুলোতে কোরবানীর ইদে নওগাঁর পশুর হাটগুলোতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের ধুম পড়তো। সরকারের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত টোলের হার অনেক কম হওয়ার কারণে সারা বছরের লোকসানের অজুহাতে হাটের ইজারাদাররা কোরবানীর ইদে গবাদিপশুর অতিরিক্ত টোল আদায় করতো। এতে করে বছরের পর বছর ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই প্রতারিত হয়ে আসতো। এমন প্রতারণার হাত থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের রক্ষা করতে চলতি বছরে জেলা প্রশাসন হাটের প্রতিটি পণ্যের খাজনার পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি করে। এছাড়া হাটের শৃঙ্খলা ফেরাতেও জেলা প্রশাসনের গৃহিত নানামুখি পদক্ষেপে এবার জেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল পশুর হাটে জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া হারেই গবাদিপশুর খাজনা আদায় করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এমন তৎপরতার কারণে হাটের যেমন শৃঙ্খলা ফিরেছে তেমনি ভাবে ক্রেতা ও বিক্রেতারা প্রতারণার হাত থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন নওগাঁর সচেতন মহল।

নওগাঁ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় তালিকাভুক্ত ছোট-বড় মোট ৬৭টি হাট-বাজার রয়েছে। পূর্বে দীর্ঘদিন যাবত এই হাটগুলোতে গরু-মহিষের নির্ধারিত টোল ছিলো ৫শত টাকা আর ছাগল-ভেড়ার টোল ২শত টাকা। ফলে বছর শেষে ইজাদারদের লভাংশ খুবই কম হতো। যার ফলে ইজারাদাররা কোরবানীর ইদকে টার্গেট করে রাখতো। কোরবানীর ইদের কয়েকটি হাটে ইজারাদাররা রাজনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে পেশী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গবাদিপশুর টোল দ্বিগুনের চেয়ে বেশি আদায় করে বছরের লোকশান পুষিয়ে নিতো। ফলে খাজনা আদায়ের নামে হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়দের গলা কাটা হতো। এছাড়া খাজনার রশিদে আদায়কৃত টাকার পরিমাণও উল্লেখ করা হতো না। ফলে অন্যান্য সাধারণ মানুষরা জানতে পারতো না যে কত টাকা খাজনা আদায় করা হয়েছে। ওই সময়ে প্রতিটি হাটে প্রশাসনের কঠোর তৎপরতার মধ্যেও এমন কর্মকান্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিলো না। এমন নৈরাজ্য থেকে মুক্ত হতে চলতি বছর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জেলার সকল ইজাদার ও হাট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে একাধিক শর্ত সাপেক্ষে হাটে আসা সকল পণ্যের টোলের হার বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক হাটের প্রধান পণ্য হিসেবে গরু-মহিষ জাতীয় পশুর খাজনা বৃদ্ধি করে ৭শত টাকা ও ছাগল-ভেড়া জাতীয় পশুর খাজনা ৩শত টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া খাজনা আদায়ের রশিদে আদায়কৃত খাজনার পরিমাণ লিখা বাধ্যতামূলক করা হয়। আসন্ন কোরবানীর ইদে জেলার হাটগুলোতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের সচেতন করাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার কারণে এখন পর্যন্ত জেলার কোন হাটে গবাদিপশুর অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।  

নওগাঁর আহসানগঞ্জ হাটে গরু কিনতে আসা আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী এলাকার ক্রেতা রহিম শেখ জানান তিনি দুটি গরু কিনেছেন। তার কাছ থেকে প্রতিটি গরুর খাজনা হিসেবে ৭শত টাকা নেয়া হয়েছে। হাটে কয়েকবার সেনাবাহিনীর দল আসার কারণে খাজনা বেশি আদায় করা হচ্ছে না।

নওগাঁ জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম পশুর হাট রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাটে পশু বিক্রি করতে আসা আসলাম শেখ জানান তিনি হাটে একটি ষাড় বিক্রি করেছেন। ক্রেতার কাছ থেকে ষাড়ের খাজনা হিসেবে ৭শত টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিগত সময়ে খাজনা আদায়ের নামে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই গলা কাটা হতো। এবার হাটে ভিন্ন একটি পরিবেশ বিরাজ করছে। এতে করে আমরা সুবিধাভোগীরা চরম ভাবে উপকৃত হচ্ছি।

রাণীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী হাটের ইজাদার মো: বেদারুল ইসলাম জানান প্রশাসনের বেঁধে দেয়া নিয়মেই খাজনা আদায় করা হচ্ছে। যেহেতু প্রশাসন সকলের কথা ভেবে খাজনার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে তাই বিন্দুমাত্র অতিরিক্ত খাজনা আদায় করার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া দীর্ঘদিনের অনিয়ম থেকে বেরিয়ে এসে এবার খাজনার রশিদে আদায়কৃত খাজনার পরিমাণ লিখে দেয়া হচ্ছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান তিনি।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসান জানান জেলার হাটগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরাতে জেলা প্রশাসক স্যারের গৃহিত এমন সিদ্ধান্তের কোন বিকল্প ছিলো না। জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত নতুন হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে কিনা তা আমরা উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করছি। বিশেষ করে জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম হাট উপজেলার আবাদপুকুর হাটে গত একমাস প্রশাসন খাজনা আদায় করার কারণে ওই অঞ্চলের মানুষসহ হাটে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতারা খাজনার পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন। যার ফলে কোন অজুহাতে হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কোন সুযোগ নেই। এছাড়া উপজেলার প্রতি হাটেই প্রশাসনের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত রাখা হবে। নিয়মের বাহিরে খাজনা আদায় করা হলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুশিয়ারী দেন এই কর্মকর্তা।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন কোরবানীর ইদে প্রশাসনের গলার কাটা ছিলো হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়টি। এমন সমস্যা থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে জেলার সকল হাটে খাজনা আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ও খাজনা আদায়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে যাচাই-বাছাইয়ের পর খাজনার পরিমাণ কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যার ফলে এখন পর্যন্ত জেলার ছোট-বড় কোন পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কোন ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি হাটেই সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিবির পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রতিটি হাটের খাজনা আদায়ের বিষয়ে মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এবার নওগাঁতে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার গবাদিপশু বিক্রয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই হাটগুলোতে পশু কিনতে এসে যেন কোন ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা প্রতারিত না হোন সেই জন্য প্রতিটি হাটে নকল টাকা চিহ্নিত করতে মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এককথায় এবার জেলার কোন হাটে বিন্দুমাত্র অনিয়ম করার কোন সুযোগ দেয়া হবে না বলে জানান জেলা প্রশাসক।


আরও খবর



কুড়িগ্রা‌মে বৃ‌দ্ধি পে‌য়ে‌ছে নদ-নদীর পা‌নি

প্রকাশিত:সোমবার ০২ জুন 2০২5 | হালনাগাদ:রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ |

Image

কুড়িগ্রাম  প্রতিনিধি :

ক‌য়েক‌দি‌ন ধ‌রে টানা বৃ‌ষ্টি আর উজা‌নের ঢ‌লে কুড়িগ্রামের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পা‌নি বৃদ্ধি পে‌য়ে‌ছে। ফ‌লে দেখা দি‌য়ে‌ছে নদী ভাঙন। সেই স‌ঙ্গে ত‌লি‌য়ে গে‌ছে ফস‌লের ক্ষেত। এতে আতং‌কিত হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছেন নদী তীরবর্তী মানুষজন, ক্ষ‌তিগ্রস্ত হ‌য়ে‌ছেন চরাঞ্চ‌লের চা‌ষিরা।

জানা গে‌ছে, তিস্তা নদীর পা‌নি বৃ‌দ্ধির ফ‌লে জেলার রাজারহাট উপ‌জেলার বিদ‌্যানন্দ ও ঘ‌ড়িয়ালডাঙা এবং  উলিপুর উপ‌জেলার দলদলিয়া, থেতরাই ও বজরা ইউনিয়‌নের চরাঞ্চল পা‌নি‌তে নিম‌জ্জিত হ‌য়ে‌ছে। ফ‌লে ত‌লি‌য়ে গে‌ছে বাদাম, মরিচ, পাটসহ রবি শষ্য।

কু‌ড়িগ্রাম পা‌নি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সোমবার তিস্তার পানি বিপদ সীমার ২৪সে.মি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সময় যতই যাচ্ছে তিস্তার পানি কমছে। ধরলা,দুধকুমোর ব্রক্ষপুত্র সহ অন্যান্য নদ-নদী গুলোর পানি বিপদনীমার অনেক নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  

রাজারহাট উপজেলার চর বিদ্যানন্দ গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম ব‌লেন, চ‌রে দুই একর জমিতে বাদাম চাষ ক‌রে‌ছি। ক‌য়েক‌দিন আগেও নদীর পা‌নি বে‌ড়ে যায়। কিন্তু তেমন ক্ষ‌তি হয়‌নি। এবার পা‌নি বাড়ায় সেই ক্ষেত ত‌লি‌য়ে গে‌ছে।

উলিপুর উপ‌জেলার চর গোড়াইপিয়া‌রের কৃ‌ষক আব্দুস সালাম ব‌লেন, ধারদেনা ক‌রে এক একর জ‌মি‌তে বাদাম চাষ ক‌রে‌ছি। ক‌য়েকদি‌ন আগে কিছু অংশ পা‌নি‌তে ত‌লি‌য়ে  যাওয়ায় সেগু‌লো অপ‌রিপক্ক অবস্থায় তু‌লে নিই। এবার বা‌কি অংশ ত‌লি‌য়ে যাওয়ায় সে‌টি নস্ট হওয়ার সম্ভাবনা র‌য়ে‌ছে। এ প‌রি‌স্থি‌তি‌তে লোকসা‌নের মু‌খে পড়‌তে হ‌বে।

কু‌ড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রা‌কিবুল হাসান ব‌লেন, আগামী দুইদিন তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল হা‌রে বৃদ্ধি পেতে পারে। ত‌বে আতং‌কিত হওয়ার কিছু নেই, পা‌নি ‌বিপৎসীমা অ‌তিক্রম কর‌বে না। এ ছাড়া পা‌নি বৃ‌দ্ধির ফ‌লে প্রায় ১৩‌টি জায়গায় ভাঙন দেখা দি‌য়ে‌ছে। এসব ভাঙন রো‌ধে কাজ করা হ‌চ্ছে।

                    


আরও খবর



মুন্সীগঞ্জে আমাদের বাড়ি…

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

কাওসার চৌধুরী, লেখক, গবেষক, নির্মাতা :

মুনশিগঞ্জে ‘আমাদের বাড়ি’ হলেও ‘আমার বাড়ি’ কিন্তু মহেশখালির মাতারবাড়িতেই। বিষয়টি একটু গোলমেলে ঠেকছে তো? জ্বী, পরিষ্কার করে দিচ্ছি এক্ষুণি।   

মাতারবাড়িতে আমার জন্ম। আমার চৌদ্দ পুরুষ মাতারবাড়িতে জন্ম নিয়েছেন, মাতারবাড়ির কাদামাটি জল-হাওয়ায় জীবন যাপন করেছেন; অত:পর বিদায় নিয়েছেন। 

অপরপক্ষে, আমাদের এক বন্ধু- তাঁদের জন্মস্থান মুনশিগঞ্জে একটি বাড়ি তৈরি করেছেন ক’বছর আগে। আট ভাইবোনের এই বাড়িটির তারা নাম দিয়েছেন- ‘আমাদের বাড়ি’। বন্ধু-মহাশয়ের নিমন্ত্রণে সেই বাড়িতে গিয়েছিলাম গত শীতের সময়ে- সম্ভবত ১৮ জানুয়ারি (২০২৫) শনিবারে। বন্ধুবরের বাড়ির নামটি এতটাই চমকপ্রদ যে, ‘আমার বাড়ি’ আর ‘আমাদের বাড়ি’ নিয়ে চমৎকার একটি ধাঁধা হয়ে গেলো :-) ! বলিহারি- এই নাম যিনি দিয়েছেন। 

খুবই সুন্দর একটি বাড়ি করেছেন তারা। বেশ দৃষ্টিনন্দন। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুটি তাঁদের বাড়ি দেখতে নিমন্ত্রণ করে আসছিলেন। কিন্তু তাঁরই সময়ের সীমাবদ্ধতার কারনে আমার আর যাওয়া হচ্ছিলনা! গত বছরের ডিসেম্বরে অনুজপ্রতীম এক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম মানিকগঞ্জে; তার নাটকের শুটিং উপলক্ষে। ফিরে এসে বেশ মজা করে লিখেছিলাম সারাদিনের অনুভূতি নিয়ে। 


সেটা দেখে আমার এই বন্ধুটি বেশ উদ্দীপ্ত হন, উতলে উঠে তাঁর নিমন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা। সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতেই সেদিন গিয়েছিলাম তাঁদের বাড়ি- ‘আমাদের বাড়ি’তে। 


কথা ছিল খুব সকালেই যাত্রা করবো ঢাকা থেকে। কিন্তু আমারই আলসেমিতে একটু দেরি হয়ে গেলো যাত্রা করতে। বন্ধুটি তার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কের মাঝামাঝি, বেঙ্গলের উল্টোদিকে। আমি একটু গজগম্ভীর চালে হেলেদুলে কিছুটা দেরিতেই গিয়ে উঠি তার গাড়িতে। গাড়ি চলতে শুরু করে মুনশীগঞ্জের উদ্দেশ্যে। 


ও হ্যাঁ, আমার বন্ধুটির সাথে আপনাদের পরিচয়্টাই করিয়ে দেওয়া হয়নি এতক্ষণ; মার্জনা করবেন। উনার নাম আব্দুল হালিম খান। চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যকার সব কম্ম সেরে এখন অবসর জীবন যাপন করছেন অন্য দশজন বাঙালির মতো। তবে উনার সবচেয়ে বড়ো পরিচয়- তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্যালুট হালিম ভাই।  


পরিচয়টা হয়েছিলো বেঙ্গলেই-‘বঙ্গীয়’ সাংষ্কৃতিক সংগঠনের প্রাণ পুরুষ,  লেখক কামরুল ইসলামের মাধ্যমেই। সেই থেকে শুরু। হালিম ভাই বেশ সদালাপী, আড্ডাবাজ এবং মহৎ হৃদয়ের অধিকারী। 


ফিরে আসি আমাদের মুনশিগঞ্জ-যাত্রায়। ভেবেছিলাম মাঝপথে রাস্তার পাশে কোন ছাপরা দোকানে চা-পান করবো এটা-ওটা দিয়ে। কিন্তু হালিম সাহেবের নিষেধে আমরা সরাসরি চলে যাই মুনশিগঞ্জেই। উনি লোভ দেখালেন বাড়ীতে পৌঁছে খেজুর রস আর পিঠাপুলি দিয়ে সকালের নাশ্তা করার। কিন্তু বিধি বাম! কী একটা কারনে সেটা আর হয়ে উঠেনি সেদিন! চা আর বিষ্কুট দিয়েই নাশ্তা-পর্ব সমাপ্ত হলো। 


এবারে বাড়িটি ঘুরে দেখার পালা। 

বাড়িটি যতটা না সুন্দর তার চাইতে দশ গুণ বেশী সুন্দর বাড়ির চারপাশের বিস্তৃত পরিবেশ আর আয়োজন। ফুলের বাগান আর ফল-ফলারের গাছের পাশাপাশি পারিবারিক আড্ডা, বনভোজনের আয়োজন আছে বিশাল এই প্রান্তরে। কয়েক বিঘা জমির উপোরে গড়ে উঠা এই কমপ্লেক্সের অন্যতম আয়োজন হলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি পারিবারিক মিলনায়তন এবং অনন্যসাধারণ একটি পাঠাগার। 


এই পাঠাগারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে অসাধারণ সুন্দর একটি নদী- ইছামতি। যদিও প্রায় শুকনো তখোন- অনেকটাই হাজামজা! কিন্তু চোখ বন্ধ করে একটু অনুভব করার চেষ্টা করলেই বোঝা যায়- বর্ষাকালে এই ইছামতির স্রোতের তেজ আর প্রমত্ত্বতা কতখানি থাকে! নিশ্চয়ই দু’কূল ভাসিয়ে উন্মাদিনীর মতো বয়ে চলে বর্ষাকালে! আহা নদী, আহা বর্ষা; আহা আমার বাংলাদেশ!  


পাঠাগারের পাশে, নদীর কোলঘেঁষেই তৈরি হয়েছে একটি আড্ডা-চত্ত্বর। অনেকটাই শান-বাঁধানো পুকুর ঘাটের আদলে। বাড়ির সমতল উচ্চতা থেকে একটু নিচে- অনেকগুলো সিঁড়ি-ধাপ নেমে গেছে ইছামতিতে, একদম পানির স্তর পর্যন্ত! আশেপাশে বিভিন্ন জাতের ক’টি গাছ আর তার পাশে কিছু লতাগুল্ম- একটি মায়া (illusion) তৈরি করে রেখেছে অলক্ষ্যে! সে এক ‘ভয়ানক সুন্দর’ পরিবেশ! দেখেই মনটা ভরে যায়। ইচ্ছে হলো, থেকে যাই ক’টা দিন! এই ঘাটে বসেই গোধুলি আর সূর্যাস্তটা দেখবো। গভীর রাতে তারাভরা আকাশটা একটু দেখবো প্রাণভরে। কল্পনায় শুনবো ইছামতির ভরা যৌবনের তরঙের ধ্বণি! আর, প্রাণখুলে একটু গান গাইবো বেসুরো গলায়! ……কিন্তু বাসনাটুকু কেন জানি প্রকাশ করতে মন উঠলোনা :-) ! চেপে গেলাম! আহারে মন, অবুঝ মন!   


এই চত্ত্বরে বসলে অনেক দূর পর্যন্ত দৃষ্টি চলে যায়- বিনা বাধায়। ঢাকা শহরে বসে তো জানালায় ফুচকী দিয়ে টুকরো টুকরো ভাঙ্গা ভাঙ্গা আকাশ দেখতে হয়! কিন্তু এই আড্ডা-চত্ত্বরে বসে দৃষ্টি মেলে ধরলেই বোঝা যায়- ‘আকাশ’ আজও তার আগের মাপেই আছে- দিগন্তজোড়া! কোন ‘কাট-ছাট’ করতে পারেনি কেউ; দখল করতে পারেনি এতটুকু! নদী দখলদার কিংবা ভূমি-দস্যুরা এখানটায়, এই আকাশের কাছে এসে- একদম ধরা, caught হয়ে গেছে :-) !  


জেনেছি, একাত্তরে এই নদী দিয়েই যাতায়াত করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। কখনো এখান থেকে ওখানে; আবার কখনোবা গিয়েছে কোন অপারেশনে। হালিম ভাইয়ের বোনের মুখে শুনেছি- একাত্তরে উনি নিজেই নাকি ৮/১০টি মুরগী রান্না করে, প্রচুর পরিমানে রুটি সেঁকে রেখে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। রাতের কোন এক প্রহরে মুক্তি-সেনা কিংবা তাদের লোকজন এসে নিয়ে যেতো সেসব খাবার। উনাদের মা দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন মুক্তিফৌজের নিরাপত্তা আর সাফল্যের জন্য।  


উনাদের পরিবারের অনেকেই কোন না কোনভাবে যুক্ত ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। আমি উনাদের সবাইকে অভিবাদন জানাই। কিন্তু হালিম ভাই এই চ্যাপ্টারটা কেনো জানি একটু ‘চেপে যেতে’ চান কখনো-সখনো! কী কারনে এটা করেন- জানি না, বুঝিনা! হয়তো আমার সাথে ‘মজা’ করেন; কিংবা আমায় একটু বাজিয়ে দেখেন এই বিষয়ে :-) ! 


কেনো এত ভয়, কীসের এতো ভয়, কাকে এতো ভয়- আমি বুঝতে পারিনা! মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একাত্তরে ‘শপথ’ গ্রহনের সময়, নিজের জীবনটা আগাম ‘উৎসর্গ’ করেই তো যুদ্ধে গিয়েছিলো প্রতিটি যোদ্ধা। যুদ্ধের মাঠেই তো চলে যেতে পারতো ‘প্রাণ’! সে ক্ষেত্রে, স্বাধীনতা পরবর্তী বিগত ৫৩ বছর তো বরং আমাদের extended life, অতিরিক্ত কিংবা সম্প্রসারিত জীবন কেটেছে- বলতে হবে! 


কতো বড়ো সৌভাগ্যবান আমরা! শুধু এইটুকুর জন্যই তো দেশের মাটি এবং মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানানো উচিৎ! উচিৎ, মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজারো কৃতজ্ঞতা জানানো।  


আচ্ছা বলুন তো, এই গ্রহের ক’খানা দেশ ‘যুদ্ধ’ করে স্বাধীন হয়েছে? খুবই অল্পক’টা মাত্র! এই সাতচল্লিশের কথাই ধরুণ না। ১৪ আগস্টে, আপোষে বৃটিশের পতাকা নেমেছে আর পাকিস্তানের পতাকা উঠেছে। ১৫ আগস্টে বৃটিশের পতাকা নেমেছে আপোষে, আর ভারতের পতাকা উড়েছে আকাশে। এরপরে দুই দেশের সাথে হ্যাণ্ডশেক করে বৃটিশরা তাদের রাজতরীতে চড়ে পাড়ি দিয়েছে নিজদেশে। এইতো কাহিনী!


কিন্তু একাত্তরে আমরা আপোষ করে দেশ নেইনি। যুদ্ধ করে জিতেছি। নয় মাসের যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেই পেয়েছি স্বাধীনতা। কিন্তু তিরিশ লক্ষ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে এই জন্যে। দুই লক্ষ মা-বোন ধর্ষণের শিকার হয়েছে! এক কোটি মানুষ শরণার্থীর জীবন যাপন করেছে ভারতে। লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহারা হয়েছে দেশের ভেতরেই। বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছে। দেশের মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে, মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের শিকার হয়েছে তারা- দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী আর রাজাকার আলবদরদের হাতে! 


** এত ত্যাগ তিথিক্ষার পরেই তবে আমরা অর্জন করেছি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। অর্জন করেছি আমাদের মানচিত্র, আমাদের সঙ্গীত আর লাল-সবুজ পতাকা। আমরা দাম দিয়ে কিনেছি বাংলাদেশ, কারো দানে নয়। 


আমার দৃঢ বিশ্বাস- হালিম ভাই হয়তোবা আমাকে একটু উষ্ণ করবার জন্যই আমাকে খুঁচিয়েছেন প্রসঙ্গটি ওভাবে উত্থাপন করে! যাক। 


হালিম ভাইদের বাড়ীতে সবচাইতে ঋদ্ধ যে বিষয়টি আমার নজরে এসেছে- সেটা হলো উনাদের পাঠাগার। খুবই সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার এটি। হালিম ভাইয়ের কাছেই জেনেছি- এই পাঠাগারের জন্ম ১৯৬৯ সালের ১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ, ১৩৭৬ বঙ্গাব্দ)। সেই থেকে আজ অব্দি এই পাঠাগারে বই সঞ্চিত হয়েছে প্রায় ছয় হাজার। বাংলা সাহিত্যের হেন কোন কবি-লেখক বাকী নেই- যার বই এই পাঠাগারে স্থান পায়নি।  


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে বঙ্কিম, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ, পঞ্চকবি, পঞ্চ পাণ্ডব- সবার বই-ই আছে এই পাঠাগারে। তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়, শীর্শেন্দু, বুদ্ধদেব বসু, বুদ্ধ দেব দাস গুপ্ত, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী- কার গ্রন্থ নেই ওখানে! আমাদের দেশের শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, ইমদাদুল হক মিলন, হুমায়ূন আহমেদ, হাসান হাফিজ, আবুল হাসান, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শওকত আলী, আকতারুজ্জামান ইলিয়াস, মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ প্রায় প্রতিটি লেখকের বই এই পাঠাগারকে করেছে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশী লেখকদের অধিকাংশরাই কিন্তু নিজেদের উদ্যোগেই এই পাঠাগারে তাদের বইয়ের 'সেট' প্রদান করেছে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।  


এমন সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার নিয়ে আমার একটি অভিমান আছে, অনুযোগ আছে হালিম ভাইদের কাছে। এমন একটি পাঠাগার- সীমাবদ্ধ হয়ে আছে সপ্তায় মাত্র দুই দিনের মধ্যে! অর্থাৎ হালিম ভাইদের কেউ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অর্থাৎ শুধুমাত্র শুক্র-শনিবারে বাড়িতে গেলেই কেবল এই পাঠাগারটি খোলা হয়ে থাকে। ভাইদের মধ্যে কেউ না গেলে ওই দুই দিনসহ পুরো সপ্তাহ-ই বন্ধ থাকে পাঠাগারটি! 


অথচ উনাদের গ্রামে আছে ছয়টি স্কুল এবং একটা কলেজ। এখানকার শিক্ষার্থীরা এই পাঠাগারের ‘উপকার’ থেকে বঞ্চিত থাকে সপ্তায় প্রায় পুরো সাত-দিনই। তথাকথিত ‘গ্লোবালাইজেশনের’ নামে, ‘ডিজিটালাইজেশনে’র নামে আমাদের তরুণরা এমনিতেই বই থেকে দূরে! সারাক্ষণ পড়ে থাকে মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেটে! সে জায়গায় এতবড়ো সুযোগ থাকার পরেও শুধুমাত্র যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এত সমৃদ্ধ পাঠাগারটি নির্জীব হয়ে আছে; পড়ে আছে মৃত!  

তারওপরে, ওখানে যেতে হলে উনাদের বাড়ির ‘প্রাইভেসী’ ভেঙ্গে যেতে হয় লাইব্রেরীতে। কারন, লাইব্রেরীর লোকেশনটাই হয়েছে ওভাবে। এই প্রাইভেট লোকেশন ওখানে ‘পাঠক-সাধারণে’র অভিগম্যতা বিঘ্ন করেছে নিদারুনভাবে। 

হালিম ভাইয়ের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে- সর্ব সাধারণের জন্য, বিশেষত গ্রামের স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিগম্যতা নিশ্চিত করার জন্য যা করা প্রয়োজন- সেটা করবেন। নইলে এতবড়ো, মহান এই আয়োজন হয়ে পুড়বে নিষ্প্রাণ নির্জীব এবং অর্থহীন! আমি আশা করবো, আমার বিনীত অনুরোধটি হালিম ভাই আন্তরিক বিবেচনায় রাখবেন। 


এই পাঠাগারের সবচেয়ে মূল্যবান সংগ্রহটি হলো- আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানের একটি কপি। যাদের জানা নেই তাদের জন্য বলছি, বাহাত্তরের সংবিধান কিন্তু ছাপানো কোন সংবিধান/গ্রন্থ নয়! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শিল্পী আব্দুর রউফ এই পুরো সংবিধানটি হাতেই লিখেছিলেন। 


এই সংবিধানের প্রতিটি পাতায় কিন্তু আলপনা করা আছে। এই সংবিধানের অঙ্গসজ্জা করেছিলেন শিল্পী হাশেম খান। পুরো কর্মটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন শিল্পী জ্যনুল আবেদীন। অংকনের কাজটি করেছিলেন শিল্পী জুনাবুল ইসলাম, সমরজিৎ রায় চৌধুরী এবং আবুল বারাক আলভী। 


আরো চমকপ্রদ বিষয় হলো- এই সংবিধানে- তিয়াত্তরে নির্বাচিত ৩০০ (তিন’শ) জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর খচিত আছে। আগ্রহীরা এর একটি কপি নিজের সংগ্রহে রাখতে পারেন। এটা বাজারে পাওয়া যায়। 


কথায় কথায় লেখাটি অনেক বড়ো হয়ে গেলো। জানিনা, সবাই পুরো লেখাটি পড়তে আগ্রহী হবেন কীনা। তারপরেও বলছি- এই পর্যন্ত যারা দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে ফেলেছেন- তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। য়ামি তাঁদের অভিবাদন জানাই।


অনেক ভালো থাকুন বন্ধুগণ। তবুও ভালো থাকুন সবাই। 

হালিম ভাইকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই- ‘আমাদের বাড়িতে’ নিয়ে যাবার জন্যে। আপনাদের জয় হোক হালিম ভাই। 

বাঙালির জয় অবশ্যম্ভাবী। 

জয় বাংলা। শুভরাত্রি। 

-----------------------------------

আমার নিজের ছবিগুলো বাদে বাকী ছবিগুলো আমারই তোলা।


আরও খবর