মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল,সিনিয়র সাংবাদিক :
আজ ২৪ সেপ্টেম্বর (রোববার) প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আজিমপুর নিউ পল্টনের বাসা থেকে নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনেই চোখে পড়ল ময়লা আবর্জনার ঢিবি। ভেবেছিলাম এ আবর্জনা ঢিবি পাড়া মহল্লার বাসা বাড়ির।
নিউমার্কেটের কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী জানালেন, এগুলো বাসা বাড়ির ময়লা আবর্জনা নয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে রাজধানী ঢাকায় টানা কয়েক ঘন্টা বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় রাজধানীতে সেদিন ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়।
একটানা মুষলধারে বৃষ্টির ফলে আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের উত্তর গেট থেকে নীলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডের সামনে পর্যন্ত রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। রাস্তায় প্রায় কোমর সমান জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ এবং যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে।
সেদিন রাতে বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকার মাইক্রোবাস এবং মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। আজিমপুর কবরস্থান থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করা হয়। শুধু রাস্তায় নয়, আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর গেটের বিপরীতে আইয়ুব আলী কলোনির বিভিন্ন বাসা বাড়িতে জলবদ্ধতা দেখা দেয়। এ কারণে কোন কোন বাড়িতে খাবার পানি ও সুয়ারেজলাইনের পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। শুধু নিউ মার্কেটে নয়, পুরান ঢাকা সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
জলবদ্ধতার ফলে নিদারুণ ভোগান্তির পোহাতে হওয়ার সাধারণ মানুষ সিটি কর্পোরেশন তথা সরকারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে!
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্মীরা জলবদ্ধতা দূর করতে ২১ সেপ্টেম্বর রাত থেকে কাজ শুরু করে। বিশাল গাড়িতে মোটা মোটা পাইপসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজে নেমে পড়ে। টানা কাজ করলেও ১৮/২০ ঘন্টা পরও জলবদ্ধতা পুরোপুরি দূর হয়নি।
গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমার মনে প্রশ্ন জাগে কেন নিউমার্কেট এলাকার জলবদ্ধতা দূর হচ্ছে না। এইতো বছরখানেক আগে এ রাস্তায় বিশাল আকারের পাইপ বসানো হলো। ঠিকাদারের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে জেনেছিলাম বহু বছরের পুরনো পাইপ বদলে নতুন পাইপ বসানো হচ্ছে। এর ফলে টানা বৃষ্টি হলেও জলবদ্ধতা তৈরি হবে না। মোটা পাইপের মাধ্যমে পানি নেমে যাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখলাম ভিন্ন।
আজ সকালে প্রাতঃভ্রমণ করতে গিয়ে নিউমার্কেট এক নম্বর গেটের সামনে ছোট বড় পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট, টুকরা কাপড় এবং কাগজের ব্যাগ সহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত ময়লা আবর্জনা দেখার পর মনে মনে ভাবলাম নগর জুড়ে জলাবদ্ধতা-এর জন্য কি সরকার একা দায়ী? এজন্য আমরা সাধারণ মানুষ সব কম দায়ী না।
উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছোট বড় কেউ ময়লা আবর্জনা রাস্তাঘাটে ফেলে না। তারা নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলার জন্য জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। সিসিটিভির মাধ্যমে বিভিন্ন রাস্তাঘাট মনিটরিং করা হয়।
তাছাড়া উন্নত বিশ্বে প্রতিটি পরিবারের শিশুরা ছোটবেলা থেকে নিজেদের শহর ময়লা আবর্জনা মুক্ত রাখার জন্য পারিবারিকভাবে শিক্ষা লাভ করে। রাস্তাঘাটে ময়লা আবর্জনা ফেলাকে তারা অপরাধ মনে করে। ফলে তাদের রাস্তাঘাট চকচকে ঝকঝকে থাকে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার কু-অভ্যাস বন্ধ করার পাশাপাশি ময়লা ফেললে মোটা অংকের টাকা জরিমানা দেয়ার বিধান রাখতে হবে। তবেই শহর হবে জলবদ্ধতা মুক্ত।
ব্যাংকক থেকে ঢাকায় সোয়া ২ ঘন্টায়, বিমানবন্দর থেকে আজিমপুর যাতায়াতে তিন ঘন্টা
থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ফুকেট এবং পাতায়াতে ছয় দিনের ভ্রমণ শেষে খোশ মেজাজে গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম। ইমিগ্রেশন শেষ করে আনুমানিক ৭টায় এক আত্মীয়ের গাড়িতে চেপে আজিমপুর নতুন পল্টনের লাইনের বাসায় রওনা হলাম।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে কাওলায় এক্সপ্রেসওয়ের ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করেন।
নতুন চালু হওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যেহেতু এর আগে কখনো যাতায়াত করিনি তাই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ফার্মগেট পর্যন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলার পর মনে হল যেন উন্নত বিশ্বের কোন দেশের রাস্তায় চলাচল করছি। মাত্র ১৫ মিনিটেই ফার্মগেট এর কাছাকাছি চলে আসলাম।
কিন্তু ফার্মগেট থেকে নিচে নামতে দেখি অসংখ্য যানবাহন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। নড়াচড়ার কোন লক্ষণ নেই। আধঘন্টা পরপর পিঁপড়ের মত গতিতে যানবাহনগুলো সামনে এগোচ্ছিল। খামারবাড়ি পর্যন্ত প্রচন্ড যানজট থাকায় ২ ঘন্টা বসে থাকতে হলো।
অনেকের সাথে কথা বলে জানলাম শুধু সেদিন নয় উদ্বোধনের পর থেকেই নামার পথে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস এর মত বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সমীক্ষা ও পুন: সমীক্ষা করা হয়। নামার পথে যানজটের বিষয়টি আমলে নেয়া হয়েছিল কিনা তা খুব জানতে ইচ্ছা করে।
যে কথা বলছিলাম, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ফার্মগেটের রাস্তায় নামার সাথে সাথেই শুরু হলো বৃষ্টি।
ব্যাংকক থেকে সোয়া দুই ঘন্টায় ঢাকায় আসতে পারলেও বিমানবন্দর থেকে বাসায় পৌছাতে পৌছাতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।মুষলধারে বৃষ্টির কারনে রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতার ফলে যে আত্নীয় আমাকে নামিয়ে দিতে এসেছিলেন তার উত্তরা আশকোনার বাসায় ফিরেন রাত ২টায়।