নদীর স্রোতধারা ফিরিয়ে আনতে দেশের মৃত শতাধিক নদী সংস্কারের কথা ভাবছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পার্বত্য তিন জেলা বাদে জেলাওয়ারি দুটি নদী চিহ্নিত করে এ সংস্কার কর্মযজ্ঞ চালাবে সংস্থাটি।
এরই মধ্যে বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে জেলা পর্যায়ে পাউবোর প্রকৌশলীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। নদী পাড়ের স্টেকহোল্ডারদের অংশীজন হিসেবে মতামত নেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে পাউবোর একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জেলায় দুটি করে নদী সংস্কারের নিমিত্তে একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের প্রধান অংশীজন হওয়া দরকার কৃষক। তাদের মতামত নিয়ে কীভাবে নদী সংস্কার করা হলে সরকারের অর্থের যথার্থ ব্যবহার হবে তা নিশ্চিত করা। কিন্তু যাদের সম্পৃক্ততা নেই, এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে মতামত নেওয়া হয়। ফলে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে নদী সংস্কার করা হলেও প্রকৃত উপকারভোগীরা সুবিধা পান না। তাই এ ধরনের প্রকল্প নেওয়ার আগে সব দিক বিবেচনা করাই শ্রেয়। তবে প্রকল্প প্রেজেন্টেশনের দিন বোঝা যাবে কীভাবে করা হবে নদীর সংস্কার কাজ।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা নিয়ে নানা মত রয়েছে। শিশু একাডেমির শিশু বিশ্বকোষের তথ্যনুযায়ী, বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা বলা হয়েছে ৭০০-এর অধিক। অশোক বিশ্বাস নদীকোষ গ্রন্থে একই সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। তবে, মোকারম হোসেন বাংলাদেশের নদী গ্রন্থে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১০০০-এর কথা বলা হলেও সৈয়দ শামসুল হক তার কবিতায় এ সংখ্যা ১৩০০টি উল্লেখ করেন।
তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্যনুযায়ী বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা ৪০৫টি। একই মত দিয়েছেন নদী গবেষক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক। নদী কর্তৃপক্ষ পাউবোর তথ্যমতে, ৪০৫টি নদীর মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীর সংখ্যা ১০২টি, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১১৫টি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৮৭টি, উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৬১টি, পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী ১৬টি এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদীর সংখ্যা ২৪টি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঢাকা জেলায় ১৫টি নদী রয়েছে। রাজধানীর আশপাশের গত ৫০ বছরে পাঁচটি নদী হারিয়ে গেছে। বেড়িবাঁধের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ নষ্ট করা হয়েছে। এরপর আবার বেড়িবাঁধের দুপাশই দখল করা হয়েছে। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর অনেক শাখা নদী ছিল, সেগুলো দখল হয়ে গেছে। আর হারিয়ে যাওয়া নদী চেষ্টা করলেও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে না সরকার।
সারা দেশের নদ-নদীর পূর্বের-বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজধানীর নিকটবর্তী জেলা মানিকগঞ্জে নদীর সংখ্যা ১৬টি আর খাল ১১৭টি; দখলদারের সংখ্যা ১ হাজার ৩৯৯ জন। ফরিদপুর জেলায় ১৩টি নদী ও ১৫টি খাল রয়েছে; দখলদারের সংখ্যা ১ হাজার ৮৩৪ জন। টাঙ্গাইল জেলায় নদী দখলদারের সংখ্যা ১ হাজার ৭৮৮ জন। নদী কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৪ জেলায় মোট ৫৭ হাজার ৩৯০ জন নদী দখলদারের ১৮ হাজার ৫৭৯টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও সক্ষমতা না থাকার কারণে জেলা প্রশাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যাশিত উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারছে না।
তবে মৃত প্রায় নদীগুলোকে স্বরূপে ফেরাতে ফের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ৬১ জেলার শতাধিক নদীকে সংস্কার করা হবে।