টানা তিন দিনের ছুটিতে সমুদ্রশহর কক্সবাজারের সবক’টি হোটেল-মোটেলের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের রুম বুকিং শেষ।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বিকাল থেকে কক্সবাজারে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। এবার আগেই হোটেল-মোটেলের সব কক্ষ বুকিং হয়ে যাওয়ায় আশার আলো দেখছেন পর্যটন ব্যবসায় জড়িতরা। তারা বলছেন, অন্তত দুই লাখ পর্যটকের সমাগম হবে।
পর্যটন ব্যবসায়ী, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও শবে বরাতকে সামনে রেখে ১৭ থেকে ১৯ মার্চ তিন দিন সরকারি ছুটি। এ কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যেতে শুরু করেছেন পর্যটকরা।
নতুন তালিকা অনুযায়ী কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসের সংখ্যা ৫১৬টি। এসব হোটেলের সবক’টি কক্ষ বুকিং হয়ে যাওয়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা প্রশাসনের কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচকর্মীরা। এছাড়া মোতায়েন করা হবে সাদা পোশাকধারী পুলিশও।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, টানা তিন দিনের ছুটি ঘিরে কক্সবাজারের অন্তত দুই লাখ পর্যটক আসতে পারেন। পর্যটক আসা-যাওয়ার মধ্যে দুই লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আশার আলো দেখছেন তারা। তাদের হিসাবে, শুধু আবাসিক খাতে অন্তত ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা আছে।
ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের রুম বুকিং শেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেখা গেছে, কক্সবাজার শহর ছাড়াও হোটেল-মোটেলের অলিগলি ও বিচে পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ভিড় বাড়ছে পর্যটকবাহী ও সাধারণ পরিবহন, ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশায় বাইপাস সড়ক, কলাতলী ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী ও শৈবাল সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং শবে বরাতকে সামনে রেখে ১৭ থেকে ১৯ মার্চ তিন দিন ছুটি। এ কারণে পর্যটকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে আসতে শুরু করেছেন। এ উপলক্ষে শুধু আবাসিক খাতে ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।’
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান বলেন, ‘এবারের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক কক্সবাজারে আসছেন। দীর্ঘদিনের নানা সমস্যা কিংবা করোনার থাবা থেকে মুক্ত হয়ে প্রথমবার বড় ব্যবসার আলো দেখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ৫১৬ হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসের শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে পর্যটন নগরীতে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা
বে রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘তিন দিনের ছুটি সামনে রেখে হোটেলের সব কক্ষই বুকিং হয়ে গেছে। এখনো অনেক ফোন আসছে বুকিংয়ের জন্য। কিন্তু আমরা বুকিং নিতে পারছি না। আশা করছি, অনেকদিন পরে ভালো ব্যবসা হবে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, সারা বছরের মধ্যে এই দুই-তিন দিন ব্যবসা হবে। কারণ করোনা বড় ধরনের লোকসানে ফেলেছে ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে হোটেল ব্যবসায়ী ও পর্যটনে জড়িতরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই দুই-তিন দিনের ব্যবসা তেমন কিছুই হবে না।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকা সৈকতের তিনটি পয়েন্টকে গুরুত্ব দেয়া হবে। এর বাইরেও যেকোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পর্যটদের কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না। আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করবো।’
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মহিউদ্দিন বলেন, এমনিতে পর্যটকে ভরপুর থাকে কক্সবাজার। তার ওপর টানা তিন দিনের ছুটি। এতে পর্যটকমুখর হবে সমুদ্রসৈকত। এই কারণে কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে টহলে থাকবে পুলিশ। পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।