নিজস্ব প্রতিবেদক :
মাইজভাণ্ডার শরীফের সাজ্জাদানশীন, ড. সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেছেন, হিন্দুস্তান নামে পরিচিত উপমহাদেশের এ বিশাল জনবহুল ভূখণ্ডে রাতারাতি ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় নি। এখানে কোন নবী রাসুল (আঃ), সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর শুভাগমন হয়েছে বলেও ইতিহাস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় না৷ মানুষ ছিল পথহারা। সমাজে ছিল জুলুম নির্যাতনের রাজত্ব। মানবাধিকারের ছিটেফোঁটাও ছিল না। সত্য পথ ও পথপ্রদর্শকের সন্ধানে মানুষ চাতক পাখির মত অপেক্ষা করছিলো। ঠিক সেই সময়ে প্রিয় নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নির্দেশে পশ্চিমাঞ্চলের আরব দেশ থেকে পূর্বাঞ্চলের এ পাক-ভারত উপমহাদেশে ত্রাতারূপে আবির্ভূত হন হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ মইনুদ্দীন চিশতী (রাঃ)। বহু প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ইসলামের খেদমতে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তৎকালীন রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান তার ইসলাম প্রচারের পথে বহু বাঁধা সৃষ্টি করেও সফল হন নি। হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ (রাঃ) এর উসিলায় ও প্রত্যক্ষ আধ্যাত্নিক সাহায্যে ১১৯২ সালে ত্বরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বিরাজ চৌহানকে পরাজিত করতে সমর্থ হন মুহাম্মদ ঘুরী। এভাবে ইসলাম প্রচারের পথ সুগম হয়। তারই সেই পথ ধরে যুগে যুগে অগণিত অলি আল্লাহ্গণ মানুষের ঘরে ঘরে, এমনকি উঁচু পর্বতের চূড়ায়, গহীন অরণ্যে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।"
তিনি আরো বলেন, "হযরত খাজা মইনুদ্দীন চিশতী (রাঃ) এর দরবার ছিল গরীব-দুঃখী মানুষের আশ্রয়স্থল। সে জন্যই তার উপাধি 'গরীবে নেওয়াজ' হয়েছে। বিশেষত তিনি মানুষের অন্তরকে জয় করেছিলেন। ধূসর মরুসম হৃদয়ে আল্লাহ্ ও রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রেমের ঢেউ সঞ্চারিত করেছেন। ফলশ্রুতিতে ১২ শতাব্দীতে প্রায় ১ কোটি মানুষ তার পবিত্র হাতে হাত রেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। আজ সমগ্র বিশ্বে প্রায় ১৬০ কোটি মুসলমানদের মধ্যে সিংহভাগ মুসলিম এই উপমহাদেশে। ইসলামের প্রকৃত অনুসরণের দিক থেকেও এ অঞ্চল এগিয়ে আছে এবং প্রিয় নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর খাটি আশেক হিসেবে স্বীকৃত। নিঃসন্দেহে এটি মহান আল্লাহ্ পাকের বিশেষ অনুগ্রহ। তাই হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ (রাঃ) এর স্মরণ ও জীবনাদর্শ চর্চা আমাদের জীবনকে আল্লাহ্ ও তার প্রিয় হাবিব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সন্তুষ্টির দিকে পরিচালিত করবে।"
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ মাদারীপুরে "আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া, মাদারীপুর জেলা" এর আয়োজনে, হযরত খাজা মইনুদ্দীন চিশতী (রাঃ) স্মরণে আয়োজিত মাহ্ফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় খলিফাবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া ও মইনীয়া যুব ফোরামের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দোজাহানের বাদশাহ্ প্রিয় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আহলে বাইতে রাসুল (দ) গণের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম পেশ শেষে বিশ্ববাসীর কল্যাণ কামনায় মুনাজাত করেন ডক্টর শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী। হাজারো নবীপ্রেমিক জনতা অংশগ্রহণ করেন। আয়োজকবৃন্দ সকলের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করেন।