রোকসানা মনোয়ার ; প্রতি
বছর এ সময়ে জমজমাট থাকত বঙ্গবাজার। তৈরি পোশাকের অন্যতম পাইকারি ও খুচরা বাজার
এটিও। কিন্তু সেই বাজারটি এখন ধ্বংসস্তূপ। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোরে লাগা আগুনে
কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেটের প্রায় ৫ হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে অনেকেই
জীবন বাজি রেখে কিছু মালামাল বের করতে পেরেছিলেন। সেসব মালামালই এখন ব্যবসায়ীদের
জীবিকার শেষ সম্বল। এই সম্বলটুকু নিয়েই বসেছেন হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের ফুটপাতে।
শুক্রবার
(৭ এপ্রিল) দুপুরে কথা হয় মহানগরী মার্কেটে অর্ণব গার্মেন্টস নামে দুটি দোকানের
স্বত্বাধিকারী মো. মুরাদ হোসেনের সঙ্গে। পাঞ্জাবি, ট্রাউজার আর শিশুদের কাপড়ের
রমরমা ব্যবসা ছিল তার। দুই দোকানে ঈদ উপলক্ষে ৬ লাখ টাকার নতুন মাল তুলেছিলেন, সব
মিলিয়ে ছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল। সাজিয়ে রাখা সামান্য কিছু মালামাল ছাড়া আর
কিছুই বের করতে পারেননি এই ব্যবসায়ী। ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ ২ লাখ টাকাও পুড়েছে।
দুই দোকানে ছয়-সাত জন কর্মচারী। নিরুপায় এই ব্যবসায়ী নিজেই লেগে পড়েছেন ফুটপাতে
বেচা-বিক্রিতে। কথা কথায় আক্ষেপ করে বললেন, ‘১৬ বছর প্রবাসে থাইকা যা কামাইছিলাম
তার সব দিয়া এই ব্যবসা শুরু করছিলাম। এখন আমার কিছুই নাই। নিঃস্ব হইয়া রাস্তায় খাড়াইছি,
কাপড় বেচতেছি।’
কথার
ফাঁকেই এক নারী ক্রেতা এলেন। ছেলে ও স্বামীর জন্য পায়জামা কিনবেন, সাইজ অনুযায়ী
দেখাতে বললেন। চাহিদা অনুযায়ী কাপড় পছন্দও করলেন। এবার দামাদামি করতে গেলে
বিক্রেতা মুরাদ হোসেন বললেন, ‘আপা, আমরা এহানে হাতিঘোড়া লাভ করমু
না। কেনা দামের থাইকা ১০ টাকা বেশি দিবেন। ফুটপাতে দাঁড়ায়া এইডাই আমার আবদার।
ব্যবসা করোনের মন-মানসিকতা নাই।’ ক্রেতা বললেন, অগ্নিকাণ্ডের পরোক্ষ
ভুক্তভোগী আমিও। আপনাদের সঙ্গে দামাদামি করার মতো মানসিকতা আমার নেই। এসব কাপড়ের দাম
আমি জানি। যেই দাম চাইছেন সেইটাই দিমু।’
সামনের
দোকানি আর ক্রেতার এমন আলাপের মাঝেই কানে এলো পাশের এক দোকানি ও ক্রেতার দরকষাকষির
আলাপ। দোকানি বলছেন, ‘ভাই আপনের মাল পছন্দ হইলে লইয়া যান।
দামে আটকাইবো না। পকেটে কোনো টেকা নাই। কিছু বেচা-বিক্রি হইলে এই টেকা দিয়া আমরা ইফতার
কিনতে পারমু, সেহরির লাইগা খাওন কিনতে পারমু।’
অস্থায়ীভাবে
ফুটপাতে বসা এমন আরো তিনজন দোকানির সঙ্গে কথা হলো। সবারই একাধিক দোকান ছিল
মহানগরী, আদর্শ ও গুলিস্তান মার্কেটে। দিনে কেউ কেউ কোটি টাকার ব্যবসা করতেন বলে
জানালেন।