বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভনে তরুণ-তরুণীদের কম্বোডিয়ায় পাচার করে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয় মানবপাচাকারী চক্র। এরপর তাদের ব্যবহার করা হতো সাইবার ক্রাইমে। এভাবে অন্তত পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষকে বিদেশে পাচার করেছে চক্রটি।
উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে ৪-৫ লাখ টাকা নিত চক্রটি। ওই বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের দিয়ে সাইবার প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে অর্থ হাতিয়ে নিত।
চক্রের মূলহোতা নাজমুল ইসলাম (৩০), নূর ইসলাম সাজ্জাদ (২৫) ও মো. সিরাজুল ইসলাম পঞ্চায়েত (৫৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, চারটি মোবাইলফোন, মানবপাচার সংক্রান্ত ২৫০ পাতার বিভিন্ন কাগজপত্র ও নগদ পাঁচ হাজার ১৬ টাকা জব্দ করা হয়।
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, চক্রের মূলহোতা নাজমুল ইসলাম কম্বোডিয়া প্রবাসী। তিনি বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি দেওয়ার নাম করে তরুণ-তরুণীদের এবং তাদের অভিভাবকদের প্রলুব্ধ করেন। কম্বোডিয়ায় পাঠানোর খরচ বাবদ তাদের কাছ থেকে ৪-৫ লাখ টাকা নিত। আগ্রহীদের প্রথমে কম্পিউটার বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হতো। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কম্বোডিয়া প্রবাসী আলীম ও শরিফুলের সহায়তায় তাদের জন্য কম্বোডিয়ান ট্যুরিস্ট ই-ভিসা দিয়ে কম্বোডিয়ায় পাঠাত।
এরপর তাদের প্রশিক্ষণের কথা বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে প্রতারণা, ভুয়া ক্লোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ করা, ভুয়া নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বা চ্যাটিং করে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার নাম করে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভয়েস কল ও ভিডিও কল রেকর্ডিং করে পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করার কৌশল শিখিয়ে তাদের প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা হতো। মানবপাচারকারীদের ভাষায় সাইবার প্রতারণার বিষয়টি স্ক্যামার হিসেবে পরিচিত।
কম্পিউটার ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরুষদের সঙ্গে ছদ্মনামীয় নারী অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এবং নারীদের সঙ্গে ছদ্মনামীয় পুরুষ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বাধ্য করা হয়। ভাষাগত বাধা দূর করার জন্য গুগল ট্রান্সলেটের সাহায্য নেওয়া হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পর ভিডিও কল দিয়ে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তা রেকর্ড করা হয়। সে রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। আবার কখনো উপহার পাঠানো, দেখা করার জন্য যাতায়াত খরচ ইত্যাদি প্রলোভন দেখিয়ে আদায় করাত অর্থ। এসব কাজে টিকটক, বিটকয়েন ও ফেক ওয়েবসাইটের সহায়তা নেওয়া হয়।