আমিনুল ইসলাম কাসেমী,শিক্ষক ও কলামিষ্ট :
আল্লামা আহমাদ শফি রহ, কে বলা হয় মুকুটহীন বাদশা। আলেম- উলামা এবং সাধারণ মানুষের মাঝে তাঁর ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা ছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর মত এরকম গ্রহণযোগ্য আলেম আর ইতিপুর্বে দেখা যায় নি। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছিলেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার, কতুবে আলম সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ, এর বিশিষ্ট শাগরেদ এবং খলিফা ছিলেন আল্লামা আহমাদ শফি। মাওলানা মাদানী যেমন ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে অবদান রেখে বিশ্ববিখ্যাত নেতা রুপে আভির্ভুত হয়েছিলেন, এমনি ভাবে মাওলানা মাদানী বিশ্বখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দের সেরপুরুস্ত এবং আধ্যাত্মিকতার সাধনায় প্রাণপুরুষ ছিলেন, ঠিক আল্লামা আহমাদ শফি যেন স্বীয় উস্তাদের পরিপুর্ণ অনুসারী।
আল্লামা আহমাদ শফি দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে হাটহাজারীর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি হাটহাজারীকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। এমনিতে হাটহাজারী দেশ সেরা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আল্লামা আহমাদ শফির তীক্ষ্ন মেধায় জামেয়াকে আরো উর্ধে নিতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের আনাচে- কানাচে ছড়িয়ে পড়ে এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম। তাঁর যোগ্য পরিচালনায় যেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সোনালী জীবন ফিরে আসে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষারমান তিনি অনেক উন্নত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এক সময় হাটহাজারী শুধু নামেই চলেছে। কিন্তু আল্লামা আহমাদ শফি সাহেব মাদ্রাসার মহাপরিচালক এর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে, তিনি শিক্ষাব্যবস্হাকে ঢেলে সাজান। তা'লীমের মান অনেক উচ্চতায় নিয়ে যান।
শিক্ষার মান বাড়াবার জন্য তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসাকে বেফাকভুক্ত করেন। বাংলাদেশ বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যার ( কওমী শিক্ষাবোর্ড) এর অধীনে তাঁর হাটহাজারী মাদ্রাসাকে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর থেকে হাটহাজারীর ছাত্ররা বেফাক বোর্ডে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে।
আল্লামা আহমাদ শফি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যাহ এর চেয়্যারম্যান সেই ২০০৮ সন থেকে। তিনি চেয়্যারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই হাটহাজারী মাদ্রাসা বেফাকের আওতায় নিয়ে আসেন। এবং ছাত্রদের বেফাকের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায়ে তা'লিমী হালাত শীর্ষ পর্যায়ে পৌছে দেন।
একজন খ্যাতনামা মুহাদ্দিস ছিলেন তিনি। অতি আকর্ষীয় ছিল তাঁর বুখারী শরীফের দরস। বহু বছর যাবত তিনি বুখারী শরীফ সহ সিহাহ সিত্তার দরস দিয়েছেন। হাজার হাজার ইলম পিপাসু ছাত্র তাঁর থেকে উপকৃত হয়েছেন। বাংলাদেশের খ্যাতনামা সব প্রতিষ্ঠানে তাঁর শিষ্য রয়েছে। দেশের সব জায়গাতে জরীপ চালালে দেখা যাবে, প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানে আল্লামা আহমাদ শফির শাগরেদ। কেউ হয়ত সরাসরি, আর কেউ হয়ত কারো মাধ্যমে তিনি আল্লামা আহমাদ শফির ছাত্র।
অনেক মেধাবী একজন শিক্ষক ছিলেন তিনি। হাদীস পড়াবার ক্ষেত্রে একজন মুহাদ্দিসের যেমন স্মরণশক্তি এবং মেধার প্রয়োজন, তেমনি গুনেই তিনি পরিপুর্ণ ছিলেন।
আজো স্মরণ হয় আল্লামা আহমাদ শফির সেই দরসের কথা। আমাদের খতমে বুখারীর প্রধান মেহমান ছিলেন তিনি। বুখারী শরীফের শেষ হাদীস পড়ানোর পর তিনি যখন সনদ বর্ননা করেন, তখন তো তাক লেগে গিয়েছিল পুরো মাহফিলের লোকদের মাঝে। একদম তাঁর থেকে নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত হাদীসের সুত্রপরম্পরা মুখস্হ বলে গেলেন। বড় প্রাণবন্ত হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানটি।
একজন বাগ্মী ছিলেন তিনি। পুরো বাংলাদেশের খ্যাতনামা দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের ইসলামী সন্মেলনের প্রধান মেহমানের অাসন অলংকৃত করেছেন বহু বছর ধরে। ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি তাকরীর করেছেন। ক্লান্তহীন ভাবে তিনি দ্বীনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌছেছেন।
বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে দেশের বাইরে তাঁর জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন মুসলিম কান্ট্রিতে দ্বীনের প্রচার- প্রসার এর নিমিত্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। সেসব জায়গায় দ্বীন ইসলামের আলো প্রজ্বলিত করেছিলেন তিনি।
আল্লামা আহমাদ শফি সাহেবের বেশী জনপ্রিয়তা এবং পরিচিতি লক্ষ্য করা যায়, ২০১০ সনে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। দ্বীন ইসলামকে বাতিলের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত এবং বেদআত- শিরক ও ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য হেফাজত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি ছিলেন। হেফাজতের কার্যক্রমে তিনি ব্যাপক ভাবে প্রসংসিত হন।
সবচেয়ে বেশী তিনি পরিচিতি লাভ করেন, ২০১৩ সনে হেফাজতের আন্দোলনের মাধ্যমে। হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসুচিতে দেশব্যাপি ব্যাপক সাড়া পড়ে। বিশেষ করে হেফাজতের লংমার্চ কর্মসুচি এবং শাপলা চত্তরের মহা-সমাবেশে তাঁর পরিচিতি আরো বেশী বেড়ে যায়। ওসব কর্মসুচিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছিল। যার জন্য তার জনপ্রিয়তা আরো উর্ধে চলে যায়। দেশ - বিদেশের সকল মিডিয়ায় আল্লামা আহমাদ শফির জনপ্রিয়তা উঠে আসে। একজন অবিসংবাদিত ইসলামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি পরিচিতি লাভ করেন।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান এর মহাপরিচালক এবং লাখো আলেমের উস্তাদ এবং পীর ছিলেন। যার কারণে যেখানে যেতেন, সেখানে যেন তাঁকে সকলে মাথায় করে রাখত। তাঁকে এমন ইজ্জত করতেন ছাত্ররা যারা কল্পনা করা যায় না। এমনিতে কওমী অঙ্গনের ছাত্ররা আদবী - আখলাকী, আর প্রিয় উস্তাদকে কাছে পেলে যেন তাঁর জন্য জীবন উৎসর্গ করে দিত।
আল্লামা আহমাদ শফি রহ, শেষ জীবনে হুইল চেয়ারে ছাড়া চলতে পারতেন না। তাই তো দেখা গেছে, শায়েখের হুইল চেয়্যার ধরার জন্য ছাত্ররা পাগলপারা ছিল। বহু জায়গায় দেখাগেছে, হুইল চেয়্যার চলে না, সেখানে ছাত্ররা হুজুরের চেয়্যার মাথায় করে মঞ্চে ওঠায়েছেন। তিনি যেরকম আমাদের মাথার মুকুট, ঠিক ছাত্ররা সেটা বাস্তবে দেখায়েছিলেন।
তিনি রাজা ছিলেন না। দুনিয়াবী কোন পাওয়ার ছিলনা। তবে তিনি ইলমে হাদীসের জগতের সম্রাট, আধ্যাত্মিকতার ভুবনের বাদশা বলা যায়। লক্ষ লক্ষ ছাত্রের মুরুব্বী যিনি, তিনি দুনিয়ার রাজা- বাদশার থেকে অধিক সন্মানী ছিলেন।
দুনিয়ার রাজা- বাদশাদের সন্মান তো টাকা দিয়ে কিনতে হয়, পাইক- পেয়াদা, কর্মকর্তা- কর্মচারী সবই তো টাকা দিয়ে কেনা। কিন্তু আল্লামা আহমাদ শফি যে রাজত্ব করেছেন, সেটা কোনদিন টাকা দিয়ে কিনতে হয়নি। এ সন্মান ও ইজ্জত ছিল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে।
মা'জুর হওয়ার পর থেকে হেলিকপ্টারে চলেছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন, সবই ছিল ভক্তবৃন্দের স্বতস্ফুর্ত খেদমত। কত মানুষ তাঁকে পাওয়ার জন্য, তাঁর সোহবত গ্রহণের জন্য ব্যাকুল হয়েছিল তাঁর হিসাব নেই।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দ্বীনি মারকাজে কাটিয়েছেন। বলা যায়, পুরো জীবন তিনি আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করেছেন। পরিশেষে আল্লাহর রাস্তায় থাকা অবস্হায় বিদায় নিয়েছেন।
জীবন ও কর্মঃ
জন্মঃ ১৯২০ সনে চট্রগ্রাম জেলার রাঙুনিয়ার থানার পাখিয়ার টিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার নামঃ বরকত আলী, মাতার নামঃ মেহেরুন্নেছা
শিক্ষাজীবনঃ
প্রাথমিক শিক্ষা মায়ের কাছে। এরপর ১০ বছর বয়সে দারুল উলুম হাটহাজারীতে ভর্তি হন। সেখানে একটানা দশ বছর লেখাপড়া করেন
১৯৪১ সনে দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। সেখানে চার বছর কৃতিত্বের সাথে লেখাপড়া করেন। ইলমে হাদীস,ফিকাহ, তাফসীর বিভিন্ন বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করেন।
আল্লামা আহমাদ শফি সাহেব, তিনি বিশ্ববিখ্যাত আলেম ও বিশ্ব কুতুব এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহা নায়ক সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ, এর বিশেষ একজন শাগরেদ। তিনি মাদানী রহ, এর নিকট বুখারী শরীফের এর দরস নেন। পাশাপাশি তিনি মাদানী এর নিকট বায়আত গ্রহন করেন। অতি অল্প সময়ে মাদানী রহ, এর নিকট থেকে খেলাফত বা পীরত্ব লাভ করেন।
মাদানী রহ, এর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন কর্মি ছিলেন। ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বীয় উস্তাদের সোহবতে থেকে তিনিও অনেক অবদান রেখেছিলেন।
উল্লেখযোগ্য উস্তাদঃ
১/ সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ,
২/ শায়খুল আদব এ'জাজ আলী রহ,
৩/ ইব্রাহিম বলিয়াবী রহ:
৪/ শায়েখ ফখরুল হাসান রহঃ
৫/ মাওলানা জহিরুল হাসান রহঃ
কর্মজীবনঃ
দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফিরে তিনি ১৯৪৬ সনে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়।
অনেক সুনাম- সুখ্যাতির সাথে তাঁর শিক্ষকতার জীবন চলেছে। অত্যান্ত মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন সব জায়গাতে।
১৯৮৬ সনে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। একদম মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন তিনি হাটহাজারীর মহাপরিচালক। একটানা ৩৪ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং এদেশের কওমী মাদ্রাসাগুলিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
তিনি ছিলেন কওমী মাদ্রাসা সর্বোচ্চ বোর্ড, "আল হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমীয়া" এর চেয়্যারমান। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যা ( কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড) এর চেয়্যারম্যান। আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়্যাত এর চেয়্যারম্যান। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়্যারম্যান।
অবদানঃ
আল্লামা আহমাদ শফি সাহেব, কওমী মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য যে অবদান রেখেছেন, তা চিরস্মরনীয়। বাংলাদেশে কেউ এমন মহৎ কাজটি আর করতে পারেনি। তিনি কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদকে মাষ্টার্স বা এম এ সমমান সরকারের কাছ থেকে আদায় করেছেন। এদেশর কওমী মাদ্রাসাগুলোকে জাতির সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াবার কায়দা তিনি করে গেছেন।
ছিন্ন- ভিন্ন আলেম সমাজকে তিনি এক প্লাট- ফরমে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্যক্তিত্বের গুণে আলেমদের এক টেবিলে বসাতে পেরেছিলেন। মানে অসম্ভবকে সম্ভব করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন তিনি।
সর্বশেষ ২০১৭ সনের ১১ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমী সনদের স্বীকৃতি দেন। দাওরায়ে হাদীসের সনদ মাষ্টার্সের মর্য্যাদা পায়।
বিশেষ সন্মানঃ
আল্লামা আহমাদ শফি সাহেব ২০০৫ সনে শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভুষিত হন। বাংলাদেশের জাতীয় সীরাত কমিটি এ মর্য্যাদা তাকে প্রদান করেন।
রচনাবলীঃ
তিনি একজন প্রতিভাবান লেখক ছিলেন। কলমের ময়দানে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। মুহাদ্দিস হিসেবে, পীর হিসেবে যেমন তাঁর খ্যাতি রয়েছে, ঠিক লেখক হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম- সুখ্যাতি।
উর্দু - বাংলা মিলিয়ে তাঁর প্রায় ২৫ টি গ্রন্হ রয়েছে। যে গুলো থেকে আলেম- উলামা এবং সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
১/ হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্ধ , ২/ ইসলামী অর্থ ব্যবস্হা, ৩/ ইসলাম ও রাজনীতি ৪/ ইজহারে হাকিকত ৫/ মুসলমানকে কাফির বলার পরিণাম, ৬/ ধুমপান কি আশির্বাদ না অভিশাপ ৭/ একটি সন্দেহের অবসান ৮/ একটি গুরুত্বপুর্ণ ফতোয়া ৯/ তাবলীগ একটি অন্যতম জিহাদ ১০/ ইসমতে আম্বিয়া ও মিয়ারে হক ১১/সুন্নাত ও বিদআতের সঠিক পরিচয় ১২ / বায়আতের হাকীকত ১৩/ আল বয়ানুল ফাসিল বায়নাল হক্কে ওয়াল বাতেল ১৪/ আল হুজাজুল কাতিয়া লি দাফয়েল নাহজিল খাতিয়া ১৫/ আল খায়রুল কাছীর ফি উসুলিত তাফসীর ১৬/ ইসলাম ওয়া সিয়াসাত ১৭/ ইজহারে হাকিকত ১৮/ তাকফীরে মুসলিম ১৯ / চান্দ রাওয়েজাঁ ২০/ ফয়ুযাতে আক্ষদিয়া ২১/ ফয়জুল জারী ( বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্হ) ২২ / মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্হ
আল্লামা শফির উল্লেখযোগ্য ছাত্রঃ
চট্রগ্রামঃ
হাটহাজারী মাদ্রাসার বর্তমান যত শিক্ষক আছেন,সকলেই আল্লামা শফির ছাত্র। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যদের নাম লিখছি:
১/ মাওলানা আব্দুস সালাম চাটগামী ( রহ,)
২/ মাওলানা শেখ আহমাদ দাঃ বাঃ
৩/ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ( রহ,)
৪/ আল্লামা দিদার কাসেমী দাঃ বাঃ
ঢাকাঃ
১/ মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস সাহেব, মোহতামিম,ফরীদাবাদ মাদ্রাসা।ও মহাসচিব, বেফাক।
২/ মাওলানা আনোয়ার শাহ, সাবেক নায়েবে মোহতামিম,জামেয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, বর্তমান শায়খুল হাদীস, জামেয়া ফজলুল করীম, হাসনাবাদ,ঢাকা।
৩/ মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী ( রহ,) মোহতামিম, মাখজানুল উলুম, খিলগাঁও।
৪/ মাওলানা রুহুল আমীন খান উজনবী, দা: বাঃ
মোহতামিম, জামেয়াতুস সাহাবা, উত্তরা, ঢাকা।
৫/ ডঃ মুশতাক আহমাদ দা: বা: উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ও শায়খুল হাদীস, তেজগাঁও রেলষ্টেশন।
৬/ মাওলানা আহমাদ মায়মুন দা: বাঃ মুহাদ্দিস, জামেয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ,ঢাকা।
৭/ মাওলানা জাকির হোসেন, টঙ্গী।
ফরিদপুরঃ
১/ মুফতী আব্দুল কাদের রহঃ সাবেক মুহতামিম, জামেয়া আরাবিয়া শামসুল উলুম।
২/ মাওলানা কারামাত আলী দাঃ বাঃ
মোহতামিম,মদীনাতুল উলুম ফরিদপুর।
৩/ মুফতী ইসমাতুল্লাহ কাসেমী, পীর সাহেব নগরকান্দা।
সিলেটঃ
১/ মরহুম তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী
২/ শেখ জিয়া উদ্দীন, আংগুরা মুহাম্মদ পুর,ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কেন্দ্রীয় জমিয়ত,
৩/ মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মুহতামিম দরগাহ মাদ্রাসা,
৪/ মুস্তাক আহমদ খান,
৫/ শায়খুল হাদীস মাওলানা মোহাম্মদ মুফতী ইউসুফ হরিপুর মাদ্রাসা।
৬/ শায়খুল হাদিস আল্লামা শিহাব উদ্দিন চতুলী।
মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস দারুল হাদিস চতুল ঈদগাহ মাদ্রাসা।
উল্লেখযোগ্য কিছু খলিফাঃ
১/ আল্লামা শেখ আহমাদ সাহেব, হাটহাজারী।
২/ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব, হাটহাজারী।
৩/ মাওলানা নোমান আহমাদ সাহেব, মোহতামিম ও শায়খুল হাদীস, বরুড়া, কুমিল্লা।
৪/ মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস সাহেব, মোহতামিম,ফরীদাবাদ,ঢাকা।
৫/ মাওলানা নুরুল আমীন সাহেব, ফরীদাবাদ,ঢাকা।
৬/ মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী,(রহ,) মোহতামিম,শায়খুল হাদীস, মাখজানুল উলুম,ঢাকা।
৭/ মাওলানা জাকির হোসেন, মোহতামিম, শায়খুল হাদীস, জামেয়া নুরিয়া,টঙ্গী।
৮/ মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ সাহেব, শায়খুল হাদীস, জামেয়া শারইয়্যাহ, মালিবাগ।
৯/ মাওলানা আহমদ মায়মুন সাহেব, মুহাদ্দিস, জামেয়া শারইয়্যাহ, মালিবাগ।
১০ / মাওলানা রুহুল আমীন খান উজনবী, মোহতামিম, জামেয়াতুস সাহাবা, ঢাকা।
এভাবে দেশ- বিদেশে লক্ষ লক্ষ ছাত্র ও খলিফা রয়েছে আল্লামা শফি সাহেবের। যেগুলো উল্লেখ করা সম্ভব নয়। বর্তমান বাংলাদেশের প্রতিভাবান আলেম, ওয়ায়েজ,লেখক,পীর, এভাবে যারাই যেখানে দ্বীনের খেদমত করছেন, তাদের অধিকাংশ আল্লামা শফির শাগরেদ।
ইন্তেকাল:
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ঢাকার আসগর আলী হসপিটালে ইন্তেকাল করেন।
সন্তান - সন্ততিঃ
দুই ছেলে, তিন মেয়ে।
জানাযা দাফনঃ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ হাটহাজারী মাদ্রাসায় বাদ জোহর জানাযা হয়। জানাযাতে ইমামতি করেন, হযরতের বড় সাহেবজাদা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ লোক সমাগম হয় আল্লামা শফির জানাযাতে। কত যে মানুষ, সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ বলার সাধ্যে রাখেনা।
পুরো হাটহাজারীর আশপাশের পাঁচ / সাত কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য ছিল।কোথাও তিলধরনের ঠায় ছিল না। মানুষ যে যেখানে পেরেছে, জানাযায় দাঁড়িয়েছে। এক অভুতপুর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল সেদিন। মিডিয়ার ক্যামেরাগুলো অচল। এত্ত মানুষ ক্যামেরাবন্দী সম্ভব ছিল না।
কোন মিডিয়া পাঁচ লক্ষ,কোনটা তাঁর অধিক লোকের কথা উল্লেখ করেছিল।
হযরতকে এক নজর দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটেছিল হাটহাজারীতে। জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল হাটহাজারী এবং তৎপার্শ্ববর্তী এলাকা।
আল্লামা শফিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার কবরস্হানে, মাকবারায়ে জামেয়াতে দাফন করা হয়।
একজন অবিসংবাদিত আলেমেদ্বীন এবং আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন আল্লামা আহমাদ শফি রহ,। এদেশের পরতে পরতে তাঁর অবদান। বিশেষ করে মাদ্রাসা শিক্ষা উন্নয়নে, দ্বীনি দাওয়াত পৌছানোর ক্ষেত্রে এবং বাতিল শক্তির মোকাবেলায় তাঁর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এদেশে লক্ষ - কোটি উলামায়ে কেরাম ও আমজনতার হৃদয়ে তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন। তাঁর অবদান চিরস্মরনীয়।
মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দুআ করি, আল্লাহ তায়ালা হযরতকে জান্নাতুল ফিরদাউসে সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।