হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল হাসানী এমনই এক মহান অলিয়ে কামেল ছিলেন, যিনি বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অন্ধকার পথ থেকে আল্লাহ্ ও রাসুলের (সাঃ) পথে এনেছেন। হাজার হাজার বিধর্মীরা তার পবিত্র হাতে হাত রেখে শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহন করেছেন।
ফুলের মধু আহরনে মৌমাছিরা যেমন পাগলপারা হয়ে যায়। বাবা মইনুদ্দীন নামটাও ঠিক তেমনই। চৌম্বকের দুই বিপরীত মেরুর যেমন আকর্ষণ, বাবা মইনুদ্দীন এবং তার আশেকদেরও তেমন।
২০১১ সালের ১৭ই আগস্ট হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (রঃ) মহামহিম স্রষ্টার ডাকে সাড়া দেন৷ তার এ ওফাত সম্পর্কেও তার অজানা কিছুই ছিল না।
প্রায় ২/৩ বছর আগে থেকেই তিনি যেখানেই সফরে যেতেন, দরবারের মাহ্ফিলগুলোতে তিনি সকলকে বলতেন এটাই তার শেষ সফর এবং স্বীয় স্থলাভিসিক্ত স্নেহধন্য শাহ্জাদা হযরত সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী (মাঃজিঃআঃ) এর হাত মুবারক উঠিয়ে সকলের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতেন।
তিনি জানতেন তার জানাযা শরীফে এত মানুষের সমাগম হবে যে, তা সামলানো অত্যন্ত কঠিন হবে। আশেকদের যেন অংশগ্রহণে কষ্ট না হয়, সে জন্য তিনি তার স্থলাভিষিক্ত শাহ্জাদাকে অসিয়ত করেন, পৃথকভাবে ৩ টি প্রধান স্থানে জানাযাহ্ শরীফ আয়োজনের জন্য।
তিনি বলেন, ঢাকাতে মিরপুর-১ হযরত শাহ্ আলী বাগদাদী (রঃ) এর মাযার শরীফ প্রাঙ্গনে, আমার প্রিয় খলিফা মাওলানা নুরুল ইসলাম জামালপুরী (রঃ) এর ইমামতিতে ১ম জানাযা, চট্টগ্রাম শহরের জাতীয় মসজিদ জামিয়াতুল ফালাহ্ ময়দানে খতিবে বাঙ্গাল মাওলানা জালালুদ্দিন আল ক্বাদেরী (রঃ) এর নেতৃত্বে ২য় জানাযা এবং মাইজভাণ্ডার শরীফে হযরত সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী (মাঃজিঃআঃ) এর ইমামতিতে সর্বশেষ ও প্রধান নামাযে জানাযাহ্ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে।
হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী (রঃ) সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে ওফাত বরণের পরে, সিঙ্গাপুরে দুটি জানাযা শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার প্রবাসী ও স্থানীয় মুসলিম এতে অংশগ্রহণ করেন।
হযরত শাহ্জালাল (রঃ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হযরতের কফিন মুবারক আগমন করলে, এয়ারপোর্টে লাখো জনতার ভীড়ে এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ চারদিকে তীব্র যানজটের দেখা দেয়।
ঢাকাস্থ হযরত শাহ্ আলী (রঃ) মাজার প্রাঙ্গনে জানাযা শরীফের ব্যাপ্তি মিরপুর-১ ওভারব্রিজও অতিক্রম করে। বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীবর্গ, সিটি মেয়র, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিজীবীগণ সহ লাখ লাখ জনতা এতে অংশগ্রহণ করেন।
চট্টগ্রামের জানাযা শরীফের জানাযা, চট্টগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম জানাযা শরীফ। স্মরণকালের দীর্ঘ এ জানাযা শরীফেও সিটি মেয়র, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ওলামায়ে কেরামগণ সহ লাখ লাখ জনতা শরীক হন।
এরপর শুক্রবার ১৯শে আগস্ট, ২০১৭, ১৯ শে রমজান বাদ জুম'আ লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে হযরতের সর্বশেষ জানাযা শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। জামাআত এত দীর্ঘ ছিল যে, নাজিরহাট পর্যন্ত ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে৷ দরবার শরীফের মসজিদ, বাড়ি, খানকাহ্, মঞ্জিলগুলোর ছাদেও তিল পরিমাণ জায়গা অবশিষ্ট ছিল না৷
সুবহান আল্লাহ্ সুবহান আল্লাহ্! সার্থক জীবন বাবা মইনুদ্দীন ক্বেবলা ক্বাবার৷ যার প্রয়াণে চোখের পানি ঝরিয়েছেন, জানাযা শরীফে শরীক হয়েছেন কোটি মানুষ৷ এর চেয়ে কারো জীবনে আর কি চাওয়া থাকতে পারে! মহান আল্লাহর জন্য যারা নিজেদেরকে উৎসর্গ করেন, মহান আল্লাহ্ও তাদেরকে এভাবেই সম্মানিত করেন।
পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ্ পাক বলেন,, "সম্মান আল্লাহর জন্য, আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) জন্য এবং মু'মিনদের জন্য"