Logo
শিরোনাম

ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে চায় ইসি

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৮ জুন ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২১ মে ২০২৫ |

Image

শেষ পর্যায়ে এসে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি মাসেই এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যে এ সময়সীমা আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। এখন এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে ইসি।

গেলো কয়েক বছর ধরে দেশের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আলোচনায় থাকে ইভিএম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইভিএম যন্ত্রের অভাবে তা করা যায়নি।

২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ইভিএম প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। কেনা হয় দেড় লাখ ইভিএম। প্রতিটি ইভিএম কিনতে খরচ হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এগুলোর জীবনকাল কমপক্ষে ১০ বছর বলা হলেও পাঁচ বছরের মাথায় নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে এর বেশিরভাগ যন্ত্র। নেই রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা।

বর্তমানে এক লাখের বেশি ইভিএমই পড়ে আছে অচল অবস্থায়। এর বিপরীতে ভালো আছে ৪০ হাজারের মতো ইভিএম।

এ অবস্থায় আর কদিন পরই শেষ হতে যাচ্ছে ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্ত শেষ পর্যায়ে এসে ইসি আরও এক বছর এ মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে অবশিষ্ট প্রায় ১০০ কোটি টাকা দ্রুত ছাড় পেতেও আবেদন জানানো হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ইসির প্রস্তাব পাস হলে শুরু হবে ইভিএম-এর নতুন অধ্যায়।

ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল বলেন, প্রজেক্ট রান করলে আমাদের দেখতে হবে কতগুলো ইভিএম সচল আছে, আর কতগুলো নষ্ট হয়ে আছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে পুরো বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে পরবর্তীতে তা হস্তান্তর করা যায়।

তবে এর শেষ রক্ষা হবে কি-না, তা নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। প্রকল্প পাস না হলে জুনের পরেই ধ্বংস করতে হবে ইসির হাতে থাকা ইভিএমগুলো। পুড়িয়ে বা নষ্ট করে ফেলা হবে সচল-অচল মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার এ মেশিনগুলো।

সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ইভিএম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ইভিএম প্রকল্প বাঁচাতে নতুন করে তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।


আরও খবর



নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িক

প্রকাশিত:শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২০ মে ২০25 |

Image

দীর্ঘ কারাভোগের পর গত ১৫ জানুয়ারি ছাড়া পান ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। ছাড়া পাওয়ার ৩ মাস ২ দিন পর গত ১৭ এপ্রিল রাজনৈতিক দল আ-আম জনতা পার্টির ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়া ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। এ দলের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এবং মহাসচিব হয়েছেন সাংবাদিক শওকত মাহমুদ। শুধু রফিকুল আমীন কিংবা ইলিয়াস কাঞ্চনই নন; গত ৮ মাসে রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফরম হয়েছে ২৬টি। এর মধ্যে ২২টিই রাজনৈতিক দল। বিশ্লেষকরা বলেছেন, দেশের বাতাসে এখন নির্বাচনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাই নানারকম আর্থসামাজিক লক্ষ্য এবং সমাজে ব্যক্তিগত প্রভাব বাড়াতে এসব দল হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসকিল লীগ, নতুন বাংলা, বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টির মতো দলের আত্মপ্রকাশ নতুন আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দল গঠনের এ প্রবণতা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এমন নতুন নতুন দল গঠন করতে দেখা গেছে। আর নির্বাচনকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। এরশাদ আমলে এমন রাজনৈতিক দল তৈরির হিড়িক পড়েছিল। সেসময় ১২০টির মতো রাজনৈতিক দল গঠন হলেও পরে তা হারিয়ে গেছে। সেই পরিস্থিতি নতুন এসব দলের ক্ষেত্রেও হতে পারে।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অর্থাৎ ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫-এর ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত গত ৮ মাসে অন্তত ২২টি রাজনৈতিক দল ও ও চারটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম আত্মপ্রকাশের খবর এসেছে। যার মধ্যে গত বছর ১১টি আর চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে আরো ১১টি দল গঠিত হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে তিনটি করে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে ‘ব্যাঙের ছাতার মতো এমন অনেক দল গজিয়ে ওঠে’। তবে নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশকে আপাতদৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত করা হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক ক্ষেত্রেই তা স্বার্থ ও ক্ষমতাচর্চার একটি রূপ বলেই মত বিশ্লেষকদের। একইসঙ্গে ভোটের সময় জোট-রাজনীতিও এ প্রবণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে বলেও মনে করেন অনেকে।

ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত রফিকুল আমীনের হঠাৎ রাজনীতিতে নাম লেখানোর কারণ কী? প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাজনৈতিক পরিচয় না থাকার কারণে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর অন্য অনেকে জেল থেকে ছাড়া পেলেও তিনি তা পাননি। ‘যেদিন হাসিনা পালিয়ে গেল, ৫ তারিখ, ৬ তারিখ, ৭ তারিখ, ৮ তারিখ, ৯ তারিখ- এ কয়দিনে ঢাকা জেল খালি হয়ে গেছে। মানুষকে দিনরাত ছেড়ে দিছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এত লোকের জামিন কীভাবে হলো? বলে, না জামিন হয়নি তো। এদের রাজনৈতিক বিবেচনায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, আমি তখন সুপারের (জেল সুপার) কাছে দৌড়ায়ে গেলাম। আমি তো এত বছর আটকে আছি, আমাকে ছাড়েন। বলল, আপনি তো কোনো রাজনৈতিক দল করেন না। আপনি যদি অন্তত হরাকাতুল জিহাদও করতেন বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমও করতেন, তা-ও আপনাকে আমি ছেড়ে দিতাম। মানে ওনারা রাজনৈতিক লেবেল থাকলে ছেড়ে দেবে, বলেন তিনি। রফিকুল আমীন জানান, এ রাজনৈতিক মঞ্চকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে তিনি তার ‘জুলুমের কথা তখন যে প্রশাসক থাকবে, যে রাষ্ট্রশাসন করবে তার কাছে’ পৌঁছাবেন।

রাজনীতিতে আসা নতুন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব নিয়ে আলোচনায় রয়েছে এনসিপি। দলটি এখনো নিবন্ধন পায়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নামক যে রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম থেকে দলটি তৈরি হয়েছে, সেগুলোও বর্তমানে সচল আছে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি প্ল্যাটফরমগুলো থেকে নতুন ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ তৈরি হয়েছে। এছাড়া এনসিপির গঠন থেকে বেরিয়ে আসা শিবিরের সাবেক নেতাদের নতুন সংগঠন ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ’রও এ মাসের মধ্যেই আত্মপ্রকাশের কথা।

অদ্ভুত সব নামের দলগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নতুন দল হতেই পারে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের কাজই হবে রাজনীতি করা। কিন্তু দেশে একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানা হিসাব-নিকাশ হচ্ছে। নির্বাচন হবে কি না, হলে কী রকম হবে। ফলে রাজনীতির পানি, নির্বাচনের পানি ঘোলা হচ্ছে। এ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য অনেকেই রাজনৈতিক দল গঠন করছে। এদের হয়তো সাধারণ মানুষ চেনে না। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও নেই। তারপরও কিছু একটা পাওয়ার আশায় কেউ কেউ রাজনৈতিক দল করছে।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়। গত বছর ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আদালতের নির্দেশে এবি পার্টি নিবন্ধন পায়। এছাড়া নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) ও বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি ( বিএমজিপি)। এ অবস্থায় এখন ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০।

ইসি সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পেতে নতুন ৯৩টি দল আবেদন করে। এর মধ্যে ভুঁইফোঁড় দল হিসেবে পরিচিত দুটি দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে নিবন্ধন দেয় তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। তার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে আবেদন করা ৭৬টি দলের কোনোটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজের দল এনডিএম আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায়। ইসিতে নিবন্ধিত এ দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটের শরিকসহ ২৭টি দল গত বছরের ৭ জানুয়ারি বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এসব দলের বেশিরভাগের কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

ইসি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব দল আবেদন করে নিবন্ধন পায়নি, সেসব দলের তালিকাও সংরক্ষণ করে রেখেছে। এ ধরনের অনিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৮৭। এ দলগুলোর মধ্যে রয়েছে নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, মুসকিল লীগ, নতুন বাংলা, বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বৈরাবরী পার্টি, বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও নন-প্রবাসী কল্যাণ দল, গণরাজনৈতিক জোট (গর্জো), বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), নাকফুল বাংলাদেশ, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি), জনতার অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, গণঅধিকার পার্টি (পিআরপি) ও বাংলাদেশ গরিব পার্টির মতো প্রায় অপরিচিত ও বিচিত্র নামের দলগুলোও।

এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এর আগেও আমরা দেখেছি যখন নির্বাচনের গন্ধ এসে নাকে লাগে, তখন হঠাৎ করেই এমন অনেক দল গজিয়ে ওঠে ব্যাঙের ছাতার মতো। এ ধরনের দল তৈরির প্রবণতা দেখা গিয়েছিল এরশাদের আমলেও। এরশাদের আমলে বড় দলগুলো এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে সহযোগিতা করেনি বা করতে চায়নি, তখন এরশাদ দেখাতে চেয়েছিল যে দেশে প্রচুর রাজনৈতিক দল আছে। সুতরাং তারা নির্বাচনে এলে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। সেসময় ১২০টার বেশি দল গঠন হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ৯০টা দল নিয়ে জোট করার নজির আছে উল্লেখ করে ‘এরা জাস্ট সংখ্যা’ বলে মন্তব্য করেন এ বিশ্লেষক। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেও এসব দল তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, এটা নির্বাচনি রাজনীতির একটা প্রবণতা। ওয়ান ম্যান শোর মতো রাতারাতি রাজনৈতিক দল হয়। তারা নানা সুবিধার আশায় এটা করে। কখনো আবার সরকারের ইচ্ছায় হয়। গত নির্বাচনের আগেও আমরা দেখেছি। আর এটার সুযোগ তৈরি হয় রাজনীতিতে গুণগতমানের অবনমনের কারণে। ৯০-এর দশকের পরে দেশে কোনো আদর্শিক দল তৈরি হয়নি। এটা নির্বাচনকে সামনে রেখে হয়েছে।

বড় রাজনৈতিক দলগুলোও এরকম রাজনৈতিক দল তৈরিতে কাজ করে। তারা এদের নিয়ে জোট করে। জোটে দলের সংখ্যা বাড়ায়। শক্তি দেখায়। তবে নির্বাচনের পর এসব রাজনৈতিক দল আর সক্রিয় থাকে না। কয়েকটি বড় দলই থাকে। এরা নির্বাচন সামনে রেখে আসে আবার নির্বাচনের পর হারিয়ে যায়। এখন একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে সবার মধ্যে যে রাজনীতি করলে খুব দ্রুত লাভবান হওয়া যায়। রাজনীতি করলে খুব দ্রুত টাকা-পয়সা কামানো যায়, আর ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানো যায়- এটা ভেতরের উদ্দেশ্য আর কী। এর বাইরে এসব দলের রাজনীতিতে কতটুকু আদর্শ থাকে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। মূল যেটা সেটা হচ্ছে, এটার পেছনে একটা রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয় জড়িত আছে। তবে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলছে, অনেক দল এলেও তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই দিন শেষে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।


আরও খবর



রায়পুরে বখাটেদের তাণ্ডবে থেমে গেছে মুক্তার শিক্ষাজীবন, নীরব প্রশাসন

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২০ মে ২০25 |

Image

আতোয়ার রহমান মনির, লক্ষ্মীপুর :

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার শায়েস্তানগর এলাকার বানাতুল দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মুক্তা আর মাদ্রাসায় যায় না। প্রতিদিনের পথে বখাটেদের উৎপাত, উত্ত্যক্ততা আর শারীরিক হয়রানিতে জর্জরিত হয়ে শেষ পর্যন্ত শিক্ষাপথ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে সে।


ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ—বখাটেপনার ঘটনা বারবার জানানো হলেও প্রশাসন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা থেকেছেন নির্বিকার। তাদের এই নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।


মুক্তার বাবা মনির হোসেন বলেন, "ঘটনার কথা জানালেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবংজনপ্রতিনিধিরা গুরুত্ব দেননি। বরং সমঝোতার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।"


মুক্তা জানায়, "প্রতিদিন ভয় নিয়ে বের হই। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ছেলে আমার পথ আটকায়, মোবাইল নম্বর চায়। না বললে টানাহেঁচড়া, ভিডিও করা আর তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। একদিন কিছু পথচারী এগিয়ে না এলে কী হতো জানি না।"


একজন সাবেক ছাত্রী জানান, তিনিও এবং তার বান্ধবী একইরকম হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। "সেই সময়েও কেউ কিছু করেনি," বলেন তিনি।


বিএনপি নেতা খোরশেদ ঢালী বলেন, “এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এলাকায় এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বরাবরই নিষ্ক্রিয়। এখন সময় এসেছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার।”


রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভূঞা বলেন, “এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান খান বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে এলাকায় এবং মাদ্রাসাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হবে।”


লক্ষ্মীপুর জেলা বারের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, “এই ঘটনাটি শিশু নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রশাসন নিরপেক্ষ হলে অবশ্যই বিচার হতো, কিন্তু প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।”


ব্র্যাকের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৬৪ শতাংশ স্কুলগামী মেয়ে পথে উত্ত্যক্তের শিকার হয়। শিশু অধিকার ফোরামের মতে, ২০২৪ সালে দেশে দেড় হাজারের বেশি কিশোরী হয়রানির শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৩৮% ঘটেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে।

মুক্তার এই ঘটনা যেন হাজারো মেয়ের অব্যক্ত কষ্টের প্রতিচ্ছবি। মুক্তা আজ শুধুই একজন ব্যক্তি নয়—প্রতীক হয়ে উঠেছে সেই সব কণ্ঠের, যারা ভয়ে থেমে যায়, অপমানে হারিয়ে যায় শিক্ষার পথ থেকে।

এখনই সময়—প্রশাসন, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনার। প্রয়োজন কঠোর শাস্তি, যাতে আর কোনো মুক্তাকে স্কুল ছাড়তে না হয়।


আরও খবর



জাতীয় সনদ তৈরিতে সবার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে

প্রকাশিত:সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২০ মে ২০25 |

Image

চর্চা, ঐক্য এবং সম্মিলিতভাবে জাতীয় সনদ তৈরি করতে সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। যাতে করে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশ যাতে সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ২৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদের এলডি হলে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, গত ৫৩ বছর মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা যায়, পথ উন্মুক্ত করা যায়, যেন সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তারই অংশ হিসেবে এ আলোচনা।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, মতামত ও সুপারিশই যথেষ্ট নয়। সব রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জনমানুষের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে নতুন বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর করতে পারব। কাজে কী লিখছি তা নয়, চর্চার মধ্য দিয়ে, অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে, প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে আমাদের এ কাজে অগ্রসর হতে হবে। আমরা সেই প্রচেষ্টায় আছি।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের নেতৃত্বে প্রাণ দিয়ে যে সম্ভাবনা তৈরি করেছে, সবাই মিলে সে সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে হবে। সেই পথ ও প্রচেষ্টায় সবাই একত্রিত আছি, থাকব। একত্রিত থাকার তাগিদ জারি রাখব।

রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ৩৫টি দল মতামত জমা দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। রোববার পর্যন্ত কমিশন ১৯টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। ২০তম দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে কমিশন সংলাপ করছে।

২০১৮ সালে বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, তাদের অকুতোভয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের নতুন পর্যায়ের সূচনা হয়েছিল। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী পর্যায়ে একটি অভূতপূর্ব ও অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।


আরও খবর



ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা : নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:বুধবার ২১ মে ২০২৫ |

Image

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়েছে। এ সময় পরিষদের সদস্যদেশের প্রতিনিধিরা উত্তেজনা কমাতে ও সংলাপে বসতে দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানান।

১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ সভার পর কোনো বিবৃতি প্রকাশ করেনি। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের নিজেদের লক্ষ্যগুলোর বেশির ভাগই পূর্ণ হয়েছে। সভায় পরিষদের স্থায়ী ৫টি দেশ ও অস্থায়ী ১০ দেশের সব প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পেহেলগামে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, হামলাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। ভারত ও পাকিস্তানকে সামরিক সংঘর্ষ এড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভুল করবেন না। সামরিক সংঘর্ষ কোনো সমাধান নয় এবং আমি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই দেশের সরকারকেই সহায়তায় প্রস্তুত আছি।’

দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি ভিত্তিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি করেছে। বৈঠকে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখারের বক্তব্য শোনা হয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে ইফতিখার বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা যে ধরনের মনোযোগ ও সম্পৃক্ততা দেখিয়েছেন, তার জন্য পাকিস্তান কৃতজ্ঞ। তিনি কাশ্মীর ইস্যুকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ৭০ বছর ধরে চলমান একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।



আরও খবর



ব্রিটিশ নাগরিকদের ভারত-পাকিস্তানে ভ্রমণে সতর্কতা জারি

প্রকাশিত:সোমবার ০৫ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২০ মে ২০25 |

Image

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনায় দুই প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য নিজেদের নাগরিকদের জন্য পাকিস্তান ও ভারত ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে।৫ মে এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে তুর্কি গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।

ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে জারিকৃত সতর্কতায় বলা হয়েছে, পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব কন্ট্রোল/এলওসি) সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। তাই নাগরিকদের এই অঞ্চলগুলোতে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারত ও পাকিস্তানে নির্ধারিত বা পরিকল্পিত ভ্রমণ স্থগিত রাখাই বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় সম্ভাব্য সংঘাত বা সামরিক সরবতার ঝুঁকির কথাও তুলে ধরা হয়।

উল্লেখ্য, এর আগেই পহেলগাঁও হামলার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তান ও ভারতের জন্য একই ধরনের ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছিল।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের আরও সতর্কবার্তায় বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কোনো অংশে, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর, কোনো কারণেই ভ্রমণ করা উচিত নয়।

বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের সীমান্তে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। ভারতে প্রবেশের জন্য অবশ্যই বৈধ ভারতীয় ভিসা থাকতে হবে, এবং সীমান্তে কোনও ভিসা সুবিধা নেই।

দুই দেশের মধ্যে একমাত্র সরকারিভাবে স্বীকৃত সীমান্ত পারাপার পাঞ্জাব প্রদেশের ওয়াঘা (পাকিস্তান) ও আটারি (ভারত) সীমান্তপথ। তবে যাত্রার আগে সীমান্ত পথটি খোলা আছে কিনা, তা যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


আরও খবর