Logo
শিরোনাম

এনিমেল ছবি সম্পর্কে কিছু আলোচনা

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

ড. রাশেদা রওনক খান, শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় :

Animal ছবি সম্পর্কে এতোসব লেখা/ রিভিউ (বেশিরভাগই নেগেটিভ) পড়ে আগ্রহ জেগেছিলো ছবিটি দেখার, কিন্তু ছবিটি দেখে মনে হলো, রিভিউগুলোর অধিকাংশই ছবিটির মূল জায়গা জুড়ে যে 'মেন্টাল হেলথ', সেটার উপর গুরুত্ব কম দিয়ে অন্যদিকে আলোচনা বেশী করেছেন| আলোচনাগুলো বেশিরভাগই নায়ক রনবীরের সাথে রাশ্মিকার (স্বামী-স্ত্রীর) সম্পর্ক কিংবা রনবীরের মিসোজিনিস্ট আচরণ এর উপর  ভিত্তি করে করা, অথচ আমার মনে হচ্ছে, মূল বিষয়টা আরও অনেক গভীরে, এতো সার্ফেস লেভেলে নয়| 

Animal এর সাথে সাথে কলা (Qala) মুভিটা নিয়েও আলাপটা আগাতে চাই, কেননা - এই দুটি মুভির মূল বক্তব্য খুব কাছাকাছি|  শুরুতেই বলে নেই, বলিউড মুভির যে নাচ, গান, গতানুগতিক নায়ক -নায়িকার প্রেম, ভালোবাসা, ভিলেনের আগমন, পারিবারিক মিলন-বিচ্ছেদের গল্প -তা হতে কিছুটা ভিন্ন দুটি গল্পের কাহিনী । দুটো ছবিই মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরী, মূল জায়গা একই সূত্রে গাঁথা, তবে গল্প বলার ঢং, নির্মাণ শৈলী ও নায়ক- নায়িকা কাস্টিং একটি ছবিকে (এনিমেল) নিয়ে গেছে ৫০০ কোটির ঘরে, অন্যটিকে (কলা) ভিন্ন ধারার নান্দনিকতায়। 

মূলত দুই ছবির গল্পের মূল বক্তব্য নায়কের (এনিমেল) ও নায়িকার (কলা) 'চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট' এর সময় কি ধরণের ক্রাইসিস তাদের কোমল মনোজগতে শূন্যতা তৈরী করে, কি করে তাদের 'শিশুবেলা চুরি' হয়ে যায়, পরিবারের সদস্যদের মাঝে যাদের প্রতি তাদের সবেচেয়ে বেশী অবসেশন  কাজ করে তাদের অবজ্ঞা ও অবহেলা শিশুমনে কি প্রভাব ফেলে, এবং এসব পরবর্তীতে মানসিকভাবে একজন মানুষকে কতোটা দুর্বলচিত্তের বানিয়ে ফেলে, পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার তৈরি হয়, তার উপর। 

৫০০ কোটির ঘর উতরে গেলেও 'এনিমেল' ছবিটিকে ঠিক সাদাকালো, নাচগানে প্রেমে ভরপুর- এমন ছবির কাতারে ফেলা যাবেনা| এনিমেল ও কলা দুটো মুভিই গ্রে লাইন টেনেছে এমন কিছু চরিত্র নিয়ে খেলা করেছে, যেখানে ছবি দুটিতে  ভালো-মন্দ, সুন্দর-অসুন্দর, স্বামী-স্ত্রীর সংসারে ভালোবাসা-দ্বন্দ্ব, পরিবারে নারী-পুরুষ এর চিরাচরিত যে 'বাইনারি অপজিশন' (ফরাসি নৃবিজ্ঞানী লেভি স্ত্রস এর ধারণা হতে নেয়া) তা গতানুগতিকভাবে বর্ণিত হয়নি, বরং হয়েছে বেশ সূক্ষ্মভাবে, একই সাথে প্রবলভাবে| যেমন, 'এনিমেল' ছবিতে বাবা অনিল কাপুরের অবজ্ঞার ফলে ছেলে রনবীরের মনে শূন্যতা ও পরবর্তীতে তা মেন্টাল ট্রমায় পরিণত হয় যা তাঁকে দিক্বিদিকশূন্য করে দেয়, অন্যদিকে 'কলা' ছবিতে মা স্বস্তিকা মুখার্জির অবজ্ঞা ও অবহেলায় মেয়ে তৃপ্তি দ্রিমি সঙ্গীত জগতের 'গোল্ডেন ভিনিল' অর্জনের মতো সাফল্য, যশ-খ্যাতি পাওয়ার পরও সেই ট্রমা হতে বের হতে পারেনি মৃত্যু পর্যন্ত| 

রনবীর এর এই চাইল্ডহুড ট্রমা তাকে এতোটাই মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে, তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য সে সেট করলো সেই বাবার মনোযোগ আকর্ষণ করা, কেবল মাত্র এই কারণে অন্য কোন লক্ষ্য সে জীবনে সেটই করতে পারলনা এই জীবনে| বিষয়টি তাকে এতোটাই অসহায় করে তুলেছিল যে, বড় হবার পরও পাগলের মতো বাবার মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে রইলো| কেননা দিনে দিনে তিনি তার নিজের তৈরি করা একটি ভুবনে আটকে গেছেন যা থেকে নিজেকে মুক্ত করার সকল শক্তি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন|  কারণ তিনি সারাজীবন ভর বাবার ভ্যালিডেশন খুঁজতে গিয়ে নিজের প্রতি অবিচার করে, নিজের প্রতি নিজের যে শ্রদ্ধা ও আত্মবিশ্বাস সেটাই তিনি হারিয়ে ফেলেছেন! শেষপর্যন্ত যে বাবার প্রতি এতো অবসেশন সেই বাবাকেই রনবীরের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, "তুমি আগেও "ক্রিমিনাল" ছিলে, এখনও ক্রিমিনাল, তুমি আসলে একজন ক্রিমিনাল মেন্টালিটি নিয়ে এসব করছ, আমাকে বাঁচানোই তোমার মূল উদ্দেশ্য নয়।" 


 'আলফা মেল' এর ধারণাটি নিয়ে যে হৈচৈ তৈরি হল, তারও আসলে কোন ভিত্তি আমি দেখছিনা, কারণ এই ধারণা সিনেমায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এটা একান্তই রনবীর এর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিফলন হতে তৈরি নিজের ইন্সিকিউরিটি হতে একধরনের ডিলিউশনাল আইডেন্টিটি তৈরির প্রক্রিয়া| বরং বাবার মুখে তাকে ক্রিমিনাল বলেই প্রতিষ্ঠা করা হয়| বাবার এই ক্রিমিনাল উচ্চারণ রনবীরকে আরও বিধ্বংসী করে তুলে| রণবীরের বাবার এই ভ্যালিডেশন না পাওয়ার বেদনা তাকে আরও  চূড়ান্ত পর্যায়ের ভায়োলেন্ট বানাবে, তা পার্ট টু'র ক্লু থেকে কিছুটা ইংগিত মেলে। 


এনিমেলে রনবীর (babar) ও কলা ছবির তৃপ্তি (মায়ের) অবহেলা-অবজ্ঞা পাওয়া সত্ত্বেও তারা দুজনেই তাদেরকেই (যার যার বাবা মা) গুরু হিসেবে মেনে নিলো আমৃত্যু| সারাজীবন তারা কেবল সেই বাবা ও মায়ের ভালোবাসা আর আকর্ষণ চেয়েছিল| এই ধরণের ট্রমা তাদেরকে একটা হিংসুটে মানসিকতা বিকাশের জায়গা তৈরি করে দেয়, সাথে আরও কিছু দেয়, যেমন; প্রতিযোগিতাপরায়ণ, আধিপত্য বিস্তার, অপ্রয়োজনীয়ভাবে শক্তি ও সামর্থ্য দেখানো, ইত্যাদি| 

কিছু বাবা মায়েরা সব সন্তানকে এক চোখে না দেখে, একইভাবে গুরুত্ব দেয়না বলে সন্তানদের মাঝে এই প্রতিযোগিতা মনোভাব তৈরি হয়ে যায়, সাথে হীনমন্যতা, পজেসিভনেস ও হিংসা প্রবলভাবে ঢুকে যায়| ফলে, ছোটবেলা হতেই যাদের বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন বাবা মা, সেই ভাই বোনকে তারা সহ্য করতে পারেনা, যা পরবর্তীতে একটা চর্চায় রূপান্তরিত হয়ে যায়,  অন্যকে ভালো না বেসে বরং হিংসা করার প্রবণতা প্রকট হয়ে উঠে সেই সন্তানদের|  তাদের একমাত্র আগ্রহের লক্ষ্য হয়ে উঠে সেই বাবা বা মায়ের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার, ভ্যালিডেশন আদায়ের| আর এভাবেই তারা নিজের একান্ত এক জগত তৈরি করে ,যেখানে 'অন্য'র কোন স্থান হয়না| 

কলা সিনেমায় তৃপ্তির যমজ ভাই জন্মের সময় মারা যায় বলে তার মা স্বস্তিকা মেয়ের বেঁচে থাকাটা মেনে নিতে পারেনা, বিশেষত যখন তিনি একটি ভ্রান্ত ধারণায় ভুগতে থাকেন যে, কন্যাভ্রুন বেশী পুষ্টি পাওয়ায় ছেলেভ্রূণটি গর্ভেই মারা গেছে| সঙ্গীত পরিবারের মা স্বস্তিকা জানতেন, ছেলেদেরই কেবল সঙ্গীতে 'পণ্ডিত'  আখ্যায়িত করা হয়, তার স্বামী ছিলেন একজন পণ্ডিত, সেই লিগ্যাসি কন্যা 'কলা'র পক্ষে অর্জন সম্ভব নয়, তাই তিনি এতিম জগন (বাবিল খান) কে লালন পালন এর দায়িত্ব নেয় এবং ছেলে হিসেবে সব সময় তৃপ্তির চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতেন| ভাইকে মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা ও গুরুত্ব  বেশী পেতে দেখে হিংসায় জ্বলে যেতো তৃপ্তির মন| 


এই জ্বলন তিনি আমৃত্যু বয়ে বেড়ালেন এক দুঃসহ মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে| ঠিক এমন একটা জ্বলন এনিমেল ছবিতে রনবিরেরও থাকে তার বোনের স্বামীর প্রতি প্রথম থেকেই| যেহেতু সে বাবাকে আকর্ষণের ও রক্ষার সকল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে বড় হতে থাকে, সেখানে একধরনের পজিসিভনেস তার ভেতরে তৈরি হয়, যা তিনি তার বোনদের প্রতি, স্ত্রীর প্রতিও জারি রাখেন| 

 সমাজে ঘরে ঘরে এই ধরণের প্রশংসা পাবার জন্য উদগ্রীব সন্তানের উদাহরণ আমরা দেখতে পাই, কেবল মাত্র ঊর্মিলার (স্বস্তিকা) মতো জাজমেটাল অভিভাবকদের নিরপেক্ষভাবে সকল সন্তানদের গড়ে তুলতে ব্যর্থ হবার কারণে। তারা সবাই যে রণবীরের মতো 'এনিমেল' হয়ে উঠে তা নয়, কিন্তু এর চেয়েও ভয়ঙ্কর কাজ করতে পারে, যেমন নিজেই আত্মাহুতি দিতে পারে শুধুমাত্র তার সেই বাবা বা মা কে বা অন্য কাউকে নিজের দিকে আকর্ষিত করতে। সুইসাইডাল প্রবণতাও এখান থেকেই জন্ম নেয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে| 

 জীবনে সঠিক কোন লক্ষ্য স্থির করতে না পারা, কিংবা নিজের কাছে নিজেকে সুখী রাখতে না পারার মতো বিষয়গুলোও তো অনেকটাই আত্মঘাতী, এসবেরও শুরু পরিবারের অসম আচরণ থেকে|ফলে, scapegoat  সন্তানটি মনের অজান্তেই যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও নিজেকে প্রমাণ করতে চায়, নিজের ভেতরে একধরনের হীনমন্যতাবোধ তৈরি হতে থাকে, নিজের জীবন যাপনকে ব্যাহত করে ফেলে|  তার জীবনের সহজ স্বাভাবিক চিন্তা শক্তি গ্রাস করে ফেলে এই ভয়ানক ট্রমা, নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস কমতে থাকে, এমনকি, এই ধরণের না পাওয়া তাকে সারাজীবন একের পর এক মানুষের ভ্যালিডেশন নিয়ে বাঁচার আকুতি তৈরী করে দিতে পারে, যা তাকে ভয়ংকরভাবে ডিপেন্ডেবল বা পরনির্ভরশীল করে তুলে। 

এই ডিপেন্ডেন্সির জ্বালা কেবল সেই অনুধাবন করে, যে এই ধরণের মানসিক যাতনার ভেতর দিয়ে যায়। এই ধরণের মানুষের এই যাতনাকে আমরা অনেকেই জাজমেন্টাল হয়ে বলে ফেলি যে, "এটা তার নিজের তৈরী করা," অথবা "সুখে আছে তো, তাই এসব মনের অসুখ বয়ে বেড়ায়", ইত্যাদি|  ভুক্তভোগীরা এসব সম্পর্কে বেশ ভালভাবে অবগত হলেও তার অবচেতন মন বুঝতে বাধা দেয়। যেমনটি এখানে মনে হচ্ছে রণবীর যা করছেন নিজের মর্জি, বুঝে শুনে করছেন! কিন্তু আসলে তা নয়, রণবীরের বেড়ে উঠার বিভিন্ন পর্যায়ে সে বাবার অবজ্ঞাকে নিজের ভেতরে এমনভাবে পুষেছেন যে, এই অবজ্ঞা তাকে সারাক্ষন বাবার ভ্যালিডেশন পাবার জন্য পরিচালিত করছে। 

কেবল তাই নয়, এই আলফা মেল হয়ে উঠার আকাঙা, চাপ ও চর্চা সব এই না পাওয়ার বেদনা হতেই তৈরী। কিন্তু এই ধরণের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর দিকটা হলো, বাবার ভালোবাসা পাওয়ার পথে যাকেই তার হুমকি মনে হয়, তাকেই সে ঘৃণা করতে থাকে, যেটা একপর্যায়ে বাবা অনিল কাপুরকেও অস্থির করে তুলে| 

কলা সিনেমার গল্পটির একটা খুব শক্তিশালী ম্যাসেজ আমার মতে, সন্তান এর বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে নন-জাজমেন্টাল পরিবার কাঠামোর বিকল্প নেই, যেখানে ছেলে-মেয়ে, দুষ্ট বাচ্চা-শান্ত বাচ্চা, পড়ালেখায় ভালো-মন্দ এই ধরণের বিভাজন তৈরি না করে একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা জরুরী, যেখানে সকল সন্তানদের মানসিক বিকাশ ঘটবে সহজাতভাবে ও সমান তালে| কলা ছবিতে মা স্বস্তিকার 'বাই' এর বদলে সেইসময়ের সমাজ ব্যবস্থায় 'পণ্ডিত'  হতে না পারার যে চাপা বেদনা তা মেয়েকে হেয় করা ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে সান্ত্বনা খুঁজে পেতেন|

 সমাজে এখনও বাবা মায়েরা নিজেরা যা পারেননি অর্জন করতে , তা যেন সন্তানেরা অর্জন করতে পারে, তার জন্য প্রচণ্ড মানসিক চাপ দিতে থাকেন, এই চাপে পড়ে এক পর্যায়ে যে সন্তানেরা একেক জন নানা ধরণের মানসিক জটিলতায় ভুগছেন, সেটা যখন বুঝতে পারেন, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়| অন্যদিকে, যেখানে টক্সিসিটি আছে, সেখানেই  পজিসিভনেস, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিযোগিতা এসব জটিল সমস্যা মনোজগতে তৈরি হয়। এনিমেল এ বাবা- ছেলের সম্পর্ককে দেখিয়েছেন, কিন্তু এই ধরণের সমস্যা স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকা, মা- সন্তান, ভাই-বোনের মাঝেও হতে পারে। 

এবার আসি, রণবীর কাপুরের মিসোজিনিস্ট আচরণকে ঘিরে যে আলোচনা চলছে, তা নিয়ে। আমাদের চারদিকে স্বাভাবিক মানবিক মানুষ যেমন আছে, তেমনই মিসোজিনিস্ট (নারী বিদ্বেষী), নারসিসিস্ট (নিজের সকল কিছুর প্রতি অবসেশন) মানুষও (নারী পুরুষ নির্বিশেষে) আছে। যেমন অনেক মা'ই তার সন্তানকে মনের অজান্তে কিংবা স্বামীর প্রতি আক্রোশ ও স্বামীর তার প্রতি অবহেলা থেকে সন্তানের ভেতরে এসব বৈশিষ্ট্য ঢুকিয়ে দিতে সাহায্য করেন দিনের পর দিন। 'Rocky Aur Rani Kii Prem Kahaani' মুভিতে জয়া যেমন পরিবারের সকল নারী সদস্য তো বটেই পুরুষ সদস্যদেরও 'প্যাসিভ' বানিয়ে নিজে একইসাথে মিসোজিনিস্টিক ও নারসিস্টিক চর্চা করে চলছিলেন। 

ঠিক একই চরিত্র আমরা 'Queen Charlotte: Bridgerton Story' এর সিরিজেও দেখতে পাই কিভাবে কিং জর্জকে পারফেক্ট কিং বানাতে গিয়ে, মিসোজিনিস্ট স্বামীর মৃত্যুর পর জর্জের মা নিজেই একজন মিসোজিনিস্ট ও নারসিস্ট হয়ে উঠেছিলেন। 'Gone Girl' সিনেমাটির কথা মনে আছে?  মানসিক স্বাস্থ্য বুঝার ক্ষেত্রে আরেকটি মাস্টারপিস, যেখানে দেখা যায় নায়িকা বিখ্যাত লেখিকা এমি সমাজের চোখে 'এমেজিং এমি'  হলেও ব্যক্তি এমি তার স্বামীর উপর প্রতিশোধ নিতে স্বামীকে একজন খুনি বানানোর কি প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

 রণবীর এর জোয়ার সাথে সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে স্ত্রীকে যে অজুহাত দেয়  সেই 'পাপা' কে নিয়ে অনেকেই ট্রল করছেন। কিন্তু বিষয়টি ট্রলের মতো সহজ নয়, বরং রণবীরের মনোজগৎকে বুঝাটা জরুরি এখানে। এই ধরণের মানুষ তার যেকোনো কাজের জন্য উছিলা বা অজুহাত সেই একজনের উপরই বর্তে দেন মনের অজান্তেই। যেমন তিনি যে নির্বিচারে মানুষ মেরে চলছে তার পেছনেও অজুহাত সেই বাবার নিরাপত্তাকে ঘিরে। অর্থাৎ সে যাই করবে, তার পেছনে একটাই অজুহাত কাজ করে। এই অজুহাত যে কেবলই একটা অজুহাত, এর পেছনে কোনো যুক্তি নেই, তা তারা বুঝতে ও জানতে চায়না। এটাই এই চরিত্রের মানসিক বাস্তবতা। 

এই ছবির মূল প্লট কিন্তু স্বামী- স্ত্রীর নয়, ফলে দর্শক হিসেবে এতোকাল যে নায়ক-নায়িকার প্রেম, স্বামী-স্ত্রীর  সম্পর্কের আইডিয়ালাইজেশন আমরা করার চেষ্টা করছি, তা এখানে সেভাবে আনার চেষ্টাও করেনি পরিচালক খুব সচেতনভাবেই। অতয়েব, যারা গীতাঞ্জলির ভূমিকা বা গীতাঞ্জলির প্রতি রণবীরের অবজ্ঞাকে পুরুষতান্ত্রিকতার জায়গা হতে কন্টেক্সচুয়ালাইজ করছেন, তারা এই সূক্ষ ব্যাপারটি এড়িয়ে গেছেন। রনবিরের জায়গায় একজন নারী চরিত্রও এই ধরণের মানসিক সংকটে ভুগতে পারেন|  

যাই হউক, আমি এই বিষয়টির সাথে একমত নই যে, "গীতাঞ্জলির এই সিনেমায় কোনো ভূমিকা নেই। তিনি থাকা না থাকা ছবিতে আলাদা গুরুত্ব তৈরী করেনি।" তাহলে বুঝতে হবে, সিনেমার ন্যারেটিভ পাঠে এখনও আমাদের অনেক পরিপক্বতা জরুরী|  এই সিনেমার প্রতিটি চরিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ । মানসিক সংকটে ভুগতে থাকা পরিবারের একজন সদস্য যে কিনা এবার শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাকে ঘিরে তার আশপাশের সকল চরিত্রগুলো কিভাবে তাকে, তার ইমোশনকে হ্যান্ডল করে তা কেবল গীতাঞ্জলি নয়, এই ছবির প্রতিটি নারী চরিত্র (রণবীরের মা, বোনেরা, বাসার নার্সগুলো) ফুটিয়ে তুলেছে। 

রণবীরের মানসিক অবস্থার কারণে সকলের মনের মাঝে যে সিচুয়েশনশিপ, তা খুব সাবলীলভাবে উঠে এসেছে এনিমেলে। কোথাও কারো চরিত্রে অতি অভিনয় ছিলোনা, এমনকি রণবীরের মায়ের যে একধরণের অসহায়ত্ব, সেটাও প্রবলভাবে অসহায়ভাবেই উঠে এসেছে, মাত্রাতিরিক্ত কোনো ডায়ালগ ব্যবহার করে মা এর চরিত্রকে গ্লওরিফাই করার প্রবনতা নেই, যেমনটি সমাজে এই ধরণের পরিবারে থাকে, ঠিক তাই তুলে ধরা হয়েছে। 

গীতাঞ্জলির চরিত্র বিশ্লেষণে ফেরা যাক।  সমাজের চিত্র তো এমনই! এই ধরণের ধনীর দুলালের বৌমা হিসেবে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের চাল-চিত্র কি একটু ভেবে দেখি চলুন। এতসব ঘটনা ঘটে যাবার পরও আজ পর্যন্ত কোথাও কি কোনো কিছু দেখেছেন বসুন্ধরার মালিকের পুত্র বধূকে স্বামীর সাথে বিরাট প্রাসাদে ছবিতে পোজ দেয়া ছাড়া? এইরকম আরো দেশ-বিদেশ মিলিয়ে লক্ষটা উধাহরন দেয়া যাবে, যেখানে ধনী ঘরের পুত্রবধূরা মানিয়ে নেবার চেষ্টা করেন আমৃত্যু| 

 ব্রিটিশ রাজ পরিবারেই তো লেডি ডায়ানা নিজের ব্যক্তিত্বে অনন্য হয়ে উঠায় রানী তো বটেই পুরো রাজপ্রসাদই যেন ইন্সিকিউরিটি তে কেঁপে উঠলো। এই সমাজেও এখনো কোনো নারী স্বমহিমায়, নিজস্ব ইনটেলেকচুয়াল ও ব্যক্তিত্বের ক্যারিজম্যাটিক পাওয়ার এর কারণে উজ্জ্বল হয়ে উঠলে আশে-পাশের মানুষ, নারী-পুরুষ একজোট হয়ে এমনকি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাকে অবদমনের চেষ্টা করে। এটাই সমাজের বাস্তবতা। তাহলে এই যখন আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, সেখানে সিনেমায় আমরা কি একজন বিপ্লবী পুত্রবধূ আশা করবো? কিভাবে, কেন, কোন যৌক্তিক ভিত্তিতে? 

নারীকে উপস্থাপন প্রসঙ্গে পরিচালক সন্দীপের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বাস্তবতার নারীকে তুলে আনার চেষ্টা, সাথে মনস্তাত্ত্বিক খেলা আছে এই উপস্থাপনে- পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর মনোজাগতিক কাঠামো আসলে কেমন, তা তিনি তুলে আনেন সিনেমায় বারবার, এটা যদি আমি বলি, তাহলে ভুল বলা হবে বলে আমার মনে হয়না। তার আগের সিনেমায় কবির সিং এর নায়িকা কেন, বহু মানুষ নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের সমাজে আছে যারা প্রেমের মোহে অন্ধ, অবশ ও মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, পার্টনার এর প্রতি তাদের মায়া বা ভালোবাসা এতটাই প্রগলভ যে, তারা দিকবিদিক হারিয়ে নিজের স্বাভাবিক জীবনকে স্থবির করে ফেলে, এই সত্য কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে? 

প্রেমে দুর্বল ব্যক্তিত্বের নারী ম্যনিপুলেটিভ পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হউন, কিংবা ভাইসভারসা- এটাই হয়তো তিনি তুলে ধরেছেন কবির সিং এ! যিনি নিয়ন্ত্রিত হতে চাইবেন না, তিনি নানভাবে 'বারগেইন' করবেন সম্পর্কে, নিজের স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্বকে ফিরিয়ে আনবে, কিন্তু সেটা কয়জন পারেন? বেশিরভাগই হয় নিয়ন্ত্রিত হউন, কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার খেলায় নিজেদের সম্পর্ককে টক্সিক বানিয়ে ফেলেন|  যার যার স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে যে প্রেম, সেই অসম্ভব সুন্দর প্রেমের গল্প হয়তো কোথাও কখনো উঠে আসবে! অপেক্ষায় থাকলাম! কিন্তু তারমানে তো এই নয় যে, সমাজের বিরাজমান বেশিরভাগ বাস্তবতাকে পর্দায় উপস্থাপন করা যাবেনা! 

 গীতাঞ্জলি প্রথমদিকে রণবীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও, অবশ্যই তা অন্ধ ভালোবাসার কারণে, একপর্যায়ে নিজের ব্যক্তিত্বে ফিরে আসার চেষ্টা করে। সে রণবীরের মতো নিজেকে  'আলফা মেল' বলে পরিচয় দেয়া মানুষ, যাকে সবাই ভয় পায়, সেই রণবীরকে একাধিকবার চড় মারে। রনবীরের উপরের শক্ত আবরণের নিচে যে সফট একটা দিক আছে, সেটাও এই গীতাঞ্জলী বুঝতে পারে তার ভালোবাসার জোরেই| রণবীর ফিরিয়ে তাকে চড় দেয়নি। স্ত্রীকে সে নির্যাতন করেছে একবার, তা তার সেই স্যাডিস্ট 'এনিমেল' বা 'ক্রিমিনাল' রূপ প্রকাশের মধ্যদিয়ে, শারীরিক অক্ষমতার সময়কালে| 

 মানসিক ভাবে ভারসাম্য রাখতে না পারা মানুষ এমনটাই করে, যে কিনা সেসময় শারীরিকভাবেও অসুস্থ। সেইসময় সে অনেক ধরণের অদ্ভুত আচরণ করেছেন, যেমন নগ্ন হয়ে বাগানে হাঁটাহাঁটি করা, ঠিক একই আচরণ আমরা 'Queen Charlotte' এ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত কিং জর্জকে করতে দেখি মহাকাশে ভেনাসকে দেখতে পেয়ে বাগানে চলে যান এবং সকল কর্মচারীর সামনে নগ্ন হয়ে চিৎকার করতে থাকেন|  

যাইহউক, সেই নির্যাতন দিনের পর দিন পার্টনার মেনে নেবে কিনা, তা নির্ভর করে পার্টনারের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, সেলফ রেসপ্যাক্ট, গাটস, এই ধরণের মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা, এম্প্যাথটিক পারসোনালিটি সকল কিছুর উপর| গীতাঞ্জলী চরিত্রটিকে যত ঢালাওভাবে সহজ বলা হচ্ছে, আমার কাছে মনে হয়নি এতোটা সহজ| মেয়েটার ভেতরে সেলফ বলে কিছু আছে, এম্প্যাথেটিক একটা হৃদয় আছে, আবার রনবীর এর মতো এনিমেল কে প্রয়োজনে চড় মেরে শাসন করার ক্ষমতাও আছে| মেয়েটিকে বিয়ের আগে যেমন পা ধরে আলফা মেল্ কি বুঝিয়ে পটাতে হয়েছিলো, বিয়ের পরেও ভুল করে স্ত্রীর পায়ে হাত রেখেই বসে ছিল ক্রিমিনাল রূপী রনবীর। ভাই-বেরাদরের সামনে যখন গীতাঞ্জলি ল্যাপটপ তুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার মতো গাটস রাখে, সেটা তার দৃঢ় ব্যক্তিত্বেরই প্রকাশ| তামাম জগতের সামনে রনবীর এনিমেল, ক্রিমিনাল কিংবা বীরপুরুষ হতে চাইলেও গীতাঞ্জলীর কাছে সে প্রেমিক পাগল পুরুষই থাকতে চেয়েছে| এই ধরনের মানুষের ভালোবাসতে না  পারার যে কস্ট তা কিং জরজের নিজের বাজে ব্যবহার থেকে কুইন শারলট কে সেইফ রাখার জন্য দূরে দূরে থাকার যে প্রানান্তরকর চেস্টা ও সুস্থ হয়ে উঠার যে আকুতি, তা সেই অব্যক্তরূপে শ্বাশত প্রেমকেই চিত্রিত  করে।

গীতাঞ্জলী চরিত্রটার একটা দিক আরও সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, তা হল রনবীর  যখন বন্দুক গীতাঞ্জলীর কপালে তাক করে ধরে, অন্যান্য সিনেমার মতো সে 'স্বামীদেব' এর কাছে প্রাণ ভিক্ষা তো চায়ই নি, এক বিন্দু নড়েও নি, এমনকি গুলি করার পরও| একজন পুরুষও এতোটা স্থির থাকতে পারতোনা, ভালোবাসার নারী যা পারে! এই চিত্রটি কয়েকটি দিককে উপস্থাপন করেছে ঃ গীতাঞ্জলী জানে রনবীর তাকে গুলি করতে পারবেনা, এটা সে তার ভালোবাসার শক্তি হতেই জানতে পারে| অন্যদিকে ক্রিমিনাল এনিমেল রূপী রনবীর যে গীতাঞ্জলীর এই অসম্ভব ভালোবাসার কাছে শক্তিহীন, দুর্বল- তা প্রমাণিত হয় গুলির নিশানা সরিয়ে দিয়ে| বাবার ব্যাপারে যেকোনো ধরণের উচ্চারণ যার সহ্য হয়না, অসুস্থরকমের অবসেশন যার কাজ করে এই ক্ষেত্রে, সেই রনবীর গীতাঞ্জলীর ক্ষেত্রে অসহায়, যদিও সে বাবার প্রতি এই অবসেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে| 

ক্রিমিনাল রনবীরকে একমাত্র তার বাবা ও গীতাঞ্জলীই সত্য উচ্চারণ করে তার আসল সমস্যাকে তার সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলো|  সবাইকে সে 'কন্ট্রোল' করার ক্ষমতা রাখলেও এই মেয়েটিকে সে 'কন্ট্রোল' করতে পারেনা, 'বারগেইন' করতে হয় তার সাথে সারাক্ষণ, সেটাই এখানে দেখানো হয়| তাই চিলে কান নিয়ে গেছে, এইরকম ঢালাও ভাবে যারা গীতাঞ্জলীর চরিত্রটিকে  নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন যারা, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, চরিত্রটির প্রতি অবিচার করা হবে এমনভাবে অতোটা সাধারণীকরণ করলে, সেই সুযোগ নেই  রনবীরের কিংবা কলা মুভির তৃপ্তির চরিত্রটিকে ঘিরেও | 




আরও খবর



পাল্টা হামলার আশঙ্কা, উচ্চ সতর্কতায় ইরান

প্রকাশিত:রবিবার ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বহুদিনের বৈরিতা থাকলেও এবারই প্রথমবারের সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালালো দেশটি।

এমন অবস্থায় ইসরায়েল এবার ইরানে পাল্টা হামলা চালাতে পারে। আর সম্ভাব্য সেই হামলার আশঙ্কায় উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ইরান। রোববার (১৪ এপ্রিল) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটির দোরসা জব্বারী তেহরান থেকে জানিয়েছেন, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে ইরানের প্রতিক্রিয়া সুনির্দিষ্ট এবং সীমিত হবে বলে ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন এবং আজ আমরা বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিযান দেখেছি।

তিনি বলেছেন, আমি মনে করি- ইরানের কাছ থেকে দেশটির সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়াটিই আমরা দেখেছি। এটি অবশ্যই পূর্ণ-মাত্রার কোনও আক্রমণ নয়। এবং অবশ্যই ইরান ঠিক কী করতে সক্ষম তার একটি প্রদর্শনও এটি। এগুলো এমন দৃশ্য যা আমরা আগে কখনও দেখিনি - ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ মিসাইল এবং ড্রোন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির মতে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। তবে ইরানের এই দাবি অবশ্যই ইসরায়েল অস্বীকার করেছে।

আল জাজিরার দোরসা জব্বারী বলছেন, এখন এই হামলা-পাল্টা হামলার পরবর্তী পর্ব শুরু হবে। (ইরানের হামলার জবাবে) ইসরায়েলের জবাবও তাই হবে। এবং সেই কারণে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে এবং ইসরায়েলকে (পাল্টা হামলার বিষয়ে) হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে দেশটির একজন কমান্ডার বলেছেন, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যে কোনো ধরনের হামলার জবাব কঠোরভাবে দেওয়া হবে।

তবে আপাতত ইসরায়েল ঠিক কী করবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে ইরানিরা... বর্তমানে পরিস্থিতি আরও খারাপ না করে তারা এই দ্বন্দ্বকে বজায় রাখতে সক্ষম হবে কিনা সেটিও বোঝার চেষ্টা করছে তারা।

এদিকে ইরানের সর্বশেষ এই হামলা ইসরায়েলের জন্য নতুন পরীক্ষা হয়ে সামনে এসেছে বলেও জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে জাতিসংঘে দেওয়া এক চিঠিতে ইরান বলেছে, তারা আর উত্তেজনা চাইছে না।

জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ভেনেসা ফ্রেজিয়ারকে দেওয়া এক চিঠিতে তেহরান জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের ওপর তার হামলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের আত্মরক্ষার একটি আইনি এবং ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপ।

এছাড়া গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইরায়েলের প্রাণঘাতী বিমান হামলার নিন্দা করতে নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার নিন্দাও করেছে জাতিসংঘে অবস্থিত ইরানি মিশন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে ইরান জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের নিহিত উদ্দেশ্য ও নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমাদের এই ধারাবাহিক অবস্থান এটিই পুনর্ব্যক্ত করে যে, দেশটি এই অঞ্চলে উত্তেজনা বা সংঘাত চায় না।


আরও খবর



গ্যাস-বিদ্যুৎ-সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ আইএমএফ'র

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

ভর্তুকি কমাতে আবারও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মিশন।

আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোনোমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ সুপারিশ করেছে। এর আগের সফরেও একই সুপারিশ করে আসছিল সংস্থাটি।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করে মিশনের একটি অংশ। এতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্রভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ মিশন। তবে সার্বিক বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্যও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে প্রতিনিধিদল।

এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আপাতত কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে যাবে সরকার। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি কমাতে পর্যায়ক্রমে এসবের দাম বাড়ানো হবে।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে পৃথক এক বৈঠকে সরকার যে ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে মিশন। তবে একীভূতকরণের পর ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা যেনো খারাপ না হয়ে যায়, এতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এজন্য তাড়াহুড়া না করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে একীভূকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন প্রতিনিধিদলের কর্মকর্তারা।

এছাড়া ঋণ খেলাপিদের বিষয়ে বিশেষ ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রস্তুত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকখাতে সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে মিশন।


আরও খবর



দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা সর্বোচ্চ

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের 'স্টেট অফ গ্লোবাল ক্লাইমেট' রিপোর্টে ২০২৩ সালকে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর বলা হয়েছে। তবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেভাবে গরম অনুভূত হচ্ছে তাতে ২০২৪ সালের উষ্ণতা বিগত বছরকে ছাড়িয়ে যাবে কিনা সেই শঙ্কা করা হচ্ছে।

ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, সমুদ্রের তাপ এবং অ্যাসিডিফিকেশন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্তাপ এবং অম্লকরণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফের আচ্ছাদন গলে যাওয়া এবং হিমবাহ পশ্চাদপসরণের মতো একাধিক ঘটনাও যা বিশ্ব উষ্ণায়নের বিষয়ে চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন তাপমাত্রার (বাড়ার) চেয়ে অনেক বেশি। ২০২৩ সালে আমরা যা প্রত্যক্ষ করেছি, বিশেষত সমুদ্রের অভূতপূর্ব উষ্ণতা, হিমবাহের পশ্চাদপসরণ এবং অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফ হ্রাস- এই সব কিন্তু বিশেষ উদ্বেগের কারণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম প্রভাব বিশ্বের যে যে অংশে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা তার মধ্যে রয়েছে এশিয়াও। চলতি বছরে ইতোমধ্যে এশিয়ার অনেক দেশেই চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ছবিটা প্রায় একইরকম দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও।

হাঁসফাঁস করা এই পরিস্থিতিতে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান-সহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশ। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভারতের একাধিক রাজ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশেও একই পরিস্থিতি।

অন্যদিকে, ইরানে গত বছর সর্বাধিক তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই নিরিখে এ বছরের চলতি মাসের ছবি বিশেষ আশার আলো দেখাতে পারছে না।

দেখে নেয়া যাক দক্ষিণ এশিয়ার সেই সমস্ত শহর যার তাপমাত্রা এখন সর্বাধিক।

ভারত
গ্রীষ্মের শুরুতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ওড়িশার বারিপদাতে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গিয়েছে। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ওড়িশার ভুবনেশ্বরে গত এক সপ্তাহে সর্বাধিক তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা গিয়েছে।

পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের তাপ মাপন কেন্দ্রে ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গিয়েছে গত এক সপ্তাহে। পশ্চিমবঙ্গের পানাগড়ে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪৫ ডিগ্রি। বাঁকুড়াও রয়েছে ওই তালিকায়। পুরুলিয়া ও মেদিনীপুরে সর্বোচ্চ রেকর্ড করা তাপমাত্রা ৪২-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে।

আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে- রাজধানী দিল্লিতে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস না থাকলেও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি হবে আগামী তিনদিনে। গত এক সপ্তাহে ওই তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ ডিগ্রির মধ্যে।

হরিয়ানাতেও তাপমাত্রার দিল্লির কাছাকাছি রয়েছে। বিহার, পূর্ব মধ্য প্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং পন্ডিচেরির একাধিক অঞ্চল-সহ পূর্ব উত্তর প্রদেশের বিচ্ছিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৪-৬ ডিগ্রি বেশি রয়েছে বলে আবহাওয়া দফতরের সূত্রে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাংলাদেশরর কিছু জেলায় তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করে। এরপর গত দুই সপ্তাহে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বাংলাদেশেই।

চুয়াডাঙ্গায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যশোরে তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে এই অঙ্ক ঘোরাফেরা করেছে ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

সৈয়দপুরে গত এক সপ্তাহে সর্বাধিক ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গেছে।

এছাড়া ঢাকায় এ বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ফরিদপুরে গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে।

পাকিস্তান
এই বছর পাকিস্তানের আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সিন্ধ প্রদেশের একাধিক অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। সিন্ধের নওয়াব শাহতে গত এক সপ্তাহে সর্বাধিক তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৪২ ডিগ্রি, মহেঞ্জোদারোতে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

লাহোরে গত এক সপ্তাহে সর্বাধিক তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

উষ্ণতম শহরের তালিকায় বেলুচিস্তানের তুরবত অঞ্চলের নাম অনেক আগেই নথিভুক্ত হয়েছে। সেখানে গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলুচিস্তানের ন্নকুন্দিতে ৩৭ ডিগ্রি এবং সিব্বিতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

অন্যদিকে করাচিতে চলতি মাসে সর্বাধিক তাপমাত্রা রয়েছে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। গত এক সপ্তাহে করাচীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রসঙ্গত, গত বছর তীব্র দাবদাহের শিকার হয়েছিল পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বেলুচিস্তানের দালবন্দিনে এবং নক্কুন্দিতে জুলাই মাসে রেকর্ড তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গিয়েছিল যা অতিক্রম করেছিল ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মালদ্বীপ-চলতি মাসে মালের গড় তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহে সর্বাধিক তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি।

মালদ্বীপের আদ্দু অ্যাটলের দক্ষিণতম দ্বীপ গান-এ গত এক সপ্তাহে নথিভুক্ত করা তথ্য বলছে সেখানে সর্বাধিক তাপমাত্রা রয়েছে ৩২ ডিগ্রি থেকে ৩৩ ডিগ্রির মধ্যে। হিথাধুর পরে গান হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। মালদ্বীপের ফুভাহমুলাহতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত এক সপ্তাহে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মালদ্বীপের আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩-এর মে মাস ছিল সেখানকার উষ্ণতম মাস। তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয় উল্লেখ করে, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছিল ওই বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শ্রীলঙ্কা
চলতি মাসে শ্রীলঙ্কার গড় তাপমাত্রা ২৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কলম্বোতে এ সপ্তাহে তাপমাত্রা সর্বাধিক তাপমাত্রা রয়েছে ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক শহর অনুরাধাপুরার বিমানবন্দর অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা গিয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহে সাবারাগামুওয়া প্রদেশের রাজধানী শহর রত্নপুরায় সবচেয়ে বেশি উষ্ণতা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শ্রীলঙ্কার মধ্যাঞ্চল প্রদেশে অবস্থিত অন্যতম বৃহত্তম শহর ক্যান্ডিতে গত এক সপ্তাহে যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে তা হল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ত্রিঙ্কোমালি শহরেও সর্বাধিক তাপমাত্রা চ্ছিল ৩৫ ডিগ্রি। এটা ত্রিঙ্কোমালি জেলার প্রশাসনিক সদর দফতর এবং শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের প্রধান বন্দর শহর।

আবহাওয়া দফতরের তরফে ২০২৩-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

গত বছর ওই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিভিন্ন অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি থেকে ৩২ ডিগ্রির এর মধ্যে ছিল পুরো বছর।

মালদ্বীপ
চলতি মাসে মালের গড় তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহে সর্বাধিক তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি।

মালদ্বীপের আদ্দু অ্যাটলের দক্ষিণতম দ্বীপ গান-এ গত এক সপ্তাহে নথিভুক্ত করা তথ্য বলছে- সেখানে সর্বাধিক তাপমাত্রা রয়েছে ৩২ ডিগ্রি থেকে ৩৩ ডিগ্রির মধ্যে। হিথাধুর পরে গান হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। মালদ্বীপের ফুভাহমুলাহতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত এক সপ্তাহে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মালদ্বীপের আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩-এর মে মাস ছিল সেখানকার উষ্ণতম মাস। তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয় উল্লেখ করে, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছিল- ওই বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নেপাল
চলতি মাসে নেপালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। রাজধানী কাঠমান্ডুর গড় তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে জানা গিয়েছে। চলতি সপ্তাহে কাঠমান্ডুর বাগমতি অঞ্চলের তাপমাত্রা রয়েছে ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

অন্যদিকে নেপালের লুম্বিনী অঞ্চলে অবস্থিত গৌতম বুদ্ধ আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে গত এক সপ্তাহে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে, বিরাটনগর বিমানবন্দর এলাকায় গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

নেপালের জ্বালানি, জলসম্পদ ও সেচ মন্ত্রণালয়ের ২০২৩ সালের জলবায়ু রিপোর্ট অনুযায়ী, নেপালের সারা বছরের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ০.৬ শতাংশ বেড়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে বছর তরাইয়ের নাওয়ালপারাসির দামকাউলি রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রা (৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে যা গত ৪৪ বছরে দেখা যায়নি।

 সূত্র : বিবিসি


আরও খবর



সদরঘাটে লঞ্চে ওঠা নামার দড়ি ছিঁড়ে পাঁচজন নিহত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ |

Image

রাজধানীর সদরঘাটে এক লঞ্চের সাথে অন্য লঞ্চের ধাক্কায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ২ জনকে সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের অ্যাম্বুলেন্সযোগে মিটফোর্ড হাসপাতালে পৌঁছে দেয়া হয়। মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দুপুর ২টা ৫৪ মিনিটে সদরঘাট ১১ নম্বর পল্টুনের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে একজন নারী, ৩ জন পুরুষ এবং এক শিশু রয়েছে। নিহতরা হলেন, নবিউর (১৯), বেল্লাল (২৫), মাইশা (১৩), মুক্তা (২৬) এবং রিপন হাওলাদার (৩৮)।

 

জানা গেছে, ঘাটে ভেড়ার সময় দুই লঞ্চের ধাক্কায় ঘটে এই দুর্ঘটনা।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এমভি তাশরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামে দুটি লঞ্চ রশি দিয়ে পন্টুনে বাঁধা ছিল। এ দুটি লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ফারহান নামের আরেকটি লঞ্চ ঢুকানোর সময় এমভি তাশরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে গেলে পাঁচ জন যাত্রী লঞ্চে উঠার সময় গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিন করা হবে বলেও জানা গেছে। ইতোমধ্যে এমভি ফারহানের দুই মাস্টারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আটক করেছে বিআইডব্লিউটিএ।  


আরও খবর



ঢাকাসহ ৬ বিভাগে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা

প্রকাশিত:শনিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ |

Image

সারা দেশে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এর মধ্যে ঢাকাসহ দেশের ৬ বিভাগে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু (৩৬-৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮-৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা আরও বিস্তার হতে পারে। শনিবার থেকে পরবর্তী ৩ দিন এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এ ছাড়া আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, সারা দেশে শনিবার তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এ পরিস্থিতি আগামীকাল রোববার (১৪ এপ্রিল) দিন ও রাতেও অব্যাহত থাকতে পারে।

তবে পরদিন সোমবার (১৫ এপ্রিল) সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আর বর্ধিত ৫ দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ সময় দেশের উত্তর পূর্বাংশে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

রাঙ্গামাটিতে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আজ শনিবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


আরও খবর