Logo
শিরোনাম

লাগামছাড়া ডিম-মাংসের দাম

প্রকাশিত:শনিবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:বুধবার ২৯ মার্চ ২০২৩ | ২৫২জন দেখেছেন

Image

ইবাদত হোসেন :লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডিম আর মাংসের দাম। লাগামছাড়া দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। নিম্ন আয়ের মানুষ অনেকে ডিম ও গোশত খাওয়া বাদ দিয়েছেন। নিম্ন মধ্যবিত্তদের অবস্থাও ব্যতিক্রম নয়। যারা কিনতে পারছেন, তারাও পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। আগে যারা ডজন ডজন ডিম কিনতেন এখন তারা হালিতে নেমেছেন। গরু কিংবা খাসির গোশত খাওয়া তো অনেকে ভুলেই গেছেন। ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগি দিয়ে যারা আমিসের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতেন তারাও এখন পড়েছেন বিপাকে।

রমজান শুরুর আগেই এভাবে ডিম ও গোশতের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। শুধু ডিম আর গোশতই নয়, বর্তমানে রাজধানীর প্রতিটি কাঁচাবাজারে সব ধরনের সাক-সবজিও আগের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ও আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

লাগামহীন দাম বেড়ে এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। গত মাসেও ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে ছিল। অর্থাৎ এ সময়ে দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা। আর শেষ দফায় গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। তখন দাম ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।

এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন পর যারা ব্রয়লার মুরগি কিনতে বাজার এসেছেন তারা পিলে চমকে যাচ্ছেন। বিপাকে পড়ছেন ফার্মের মুরগির ডিমের দাম নিয়েও। কারণ প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। এখন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজনে। প্রতি হালি ৫০ টাকা, যা আগে ৪৫ টাকা ছিল। এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার সাথে সাথে লেয়ার বা পাকিস্তানি জাতের মুরগির দামও কেজিতে অন্তত ২০ টাকা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ২৮০ টাকায় পাকিস্তানি মুরগি পাওয়া গেলেও এখন ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুরগি ও ডিমের মতো বাড়তি দেখা গেছে গরুর মাংসের দাম। বেশিরভাগ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায় মিলতো। আর খাসির গোশত এখন ১০৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাবে না রাজধানীর কোনো বাজারে। বকরি ৯৫০ টাকা। আগে যেখানে বকরি ৮০০ ও খাসির গোশত ৯০০ টাকায় পাওয়া যেত।

ক্রমাগত পণ্যের এ মূল্যবৃদ্ধি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। দোকানে দোকানে দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাগবিতণ্ডা। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কষ্টে পড়ে গেছেন। বেশকিছু ক্রেতাকে দাম শুনে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে।

এদিকে বিক্রেতারাও মুরগি ও ডিমের দাম দফায় দফায় বাড়ার কোনো সঠিক কারণ বলতে পারছেন না। যাত্রাবাড়ি বাজারে মুরগি বিক্রেতা শামসুজ্জামান বলেন, সরবরাহ কম তাই দাম বেশি শুধু এটুকুই জানি। আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম এভাবে বাড়ুক আমরা সেটা চাই না। কারণ দাম বাড়ায় বিক্রি কম হচ্ছে।

মালিবাগ ও রামপুরা বাজার ঘুরে গরুর মাংসের দামও বাড়তি দেখা গেছে। মাংস বিক্রেতা মোসলোম  বলেন, কম দামে গরু কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আগের দামে মাংস বিক্রি করে পরতা হচ্ছে না। সবখানে দাম বেড়েছে। তবে সেখানে একজন ক্রেতা বলেন, রমজানের সরকার গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয়। তাই আগেই এরা দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে সবজির দামও কিন্তু খুব বেশি স্বস্তিদায়ক নয়। গ্রীষ্মের নতুন সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ কমে আসায় শীতের সবজির দামও বাড়ছে। 


আরও খবর

তিন মাসে কোটিপতি বেড়েছে ৩৪২৬

রবিবার ২৬ মার্চ ২০২৩

রমজানে জাল নোট নিয়ে সতর্কতা

শনিবার ২৫ মার্চ ২০২৩




জেলেই থাকতে হচ্ছে সাহেদের

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:বুধবার ২৯ মার্চ ২০২৩ | ১৬জন দেখেছেন

Image

অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডিত রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত রেখেছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। সাহেদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ আদালত।

মামলায় সাহেদকে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় যাবজ্জীবন ও (চ) ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুটি সাজা একত্রে চলবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ওই অস্ত্র বাজেয়াপ্ত ও যে গাড়ি থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে তার মালিকানা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

পরে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চেয়েছিলেন সাহেদ। ২০২২ সালের ৭ জুন তাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদেনে ১২ জুন তা স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করেন।

২০২০ সালের ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এরপর তাকে নিয়ে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে সংস্থাটি। পরে উত্তরা পশ্চিম থানায় র‌্যাব অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করে।

একই বছরের ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ে। পরদিন ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।

 


আরও খবর



রাজধানীতে ধসে পড়ার ঝুঁকিতে ৯ লাখ ভবন

প্রকাশিত:বুধবার ১৫ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩ | ৬৬জন দেখেছেন

Image

মুন্সি মো আল ইমরান:রাজধানী ঢাকায় নতুন ভবন করতে হলে এখন থেকে সাধারণ নকশার পাশাপাশি কাঠামোগত নকশাও জমা দিতে হবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) আর ভূমিকম্প সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজউককে সহায়তার জন্য নতুন একটি সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে।

এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন সংস্থাটি হবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং এটি পরিচালিত হবে মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে।

একই সাথে রাজউক দুটি টাস্কফোর্স গঠন করবে ঢাকার ভবনগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য। মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ভবনগুলো পরিদর্শন করা হবে যার তত্ত্বাবধানে থাকবে ওই দুই টাস্কফোর্স।

রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও মন্ত্রণালয় বা রাজউক আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়ে কিছু জানায়নি।

মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভূমিকম্প বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী। তিনি ও বিডিটুডেসকে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নতুন সংস্থা গঠনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আজ হলো। সংস্থাই ভূমিকম্প সংশ্লিষ্ট সব বিষয় অর্থাৎ অ্যাসেসমেন্ট, মাটি পরীক্ষাসহ যাবতীয় কাজে রাজউককে সহায়তা করবে। আর রাজউক জানিয়েছে যে তারা এখন থেকে ভবন নির্মাণের জন্য সাধারণ নকশার পাশাপাশি কাঠামোগত নকশাও বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।

কাঠামোগত নকশা আসলে একটি ভবনের বিস্তারিত নকশা, যেখানে ফাউন্ডেশন, পিলার, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ ভেতরের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো কেমন হবে তার নকশাও থাকবে।

মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, এই নকশা থেকেই ধারণা পাওয়া যাবে যে নতুন ভবনটি ভূমিকম্প সহনীয় হবে কি-না।

ভূমিকম্প ঝুঁকি এবং ঢাকায় সম্প্রতি কয়েকটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ছাড়াও সাম্প্রতিক এক জরিপে বিপুল সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তথ্য উঠে আসার প্রেক্ষাপটে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

থার্ড পার্টি যাচাই করবে বিদ্যমান ভবন


ঢাকা শহরের ভবনগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা হবে যে এগুলো কতটা নিয়ম মেনে করা হয়েছে বা ভূমিকম্প বা আগুনের ঝুঁকি থেকে এগুলো কতটা নিরাপদ।

তবে এগুলো কিভাবে করা হবে তা নিয়ে খুব শিগগিরই একটি নীতিমালা তৈরি হবে বলে জানিয়েছে রাজউক।

যদিও সম্প্রতি নগর উন্নয়ন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবনগুলো পরিদর্শন পর্যবেক্ষণ করা হবে মূলত থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে।

রাজউক বলেছে, নীতিমালা হওয়ার পর থার্ড পার্টি দিয়ে তারা কাজটি করবে। এটি হলে শহরের সব ভবন সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। তখনই আমরা বলতে পারবো যে শহরটি আসলে কতটা ঝুঁকির মধ্য আছে,’ বলছিলেন আনসারী।

উল্লেখ্য, রাজউকের হিসাবে এখন সংস্থাটির আওতায় থাকা এলাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবন বা ধরনের স্থাপনা আছে।

সম্প্রতি প্রায় ৩০০০ ভবনের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে ৪২টি ভবনকে অতিমাত্রায় ঝুঁকিতে থাকার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা বলেন, এসব ভবন ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কিভাবে ভাঙ্গা হবে সেটি রাজউক ঠিক করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে দুমাস সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, সামনে রোজার পর বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

তবে তার আগে এসব ভবনের মালিকদের চিঠি দেয়া হবে। তারা ভবন খালি করে দেবে। এরপর ভাঙ্গার কার্যক্রম শুরু হবে

ঝুঁকিতে লাখ ভবন


রাজউকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ঢাকার কাছে টাঙ্গাইল এলাকায় মাটির নিচে যে ফল্টলাইন আছে সেখানে সাত মাত্রার কাছাকাছি ভূমিকম্প হলে সাড়ে আট লাখেরও বেশি ভবন ধসে পড়বে।

সমীক্ষাটি গত চার বছর ধরে করা হয়েছে, যার রিপোর্ট সম্প্রতি কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে।

সমীক্ষার সাথেও জড়িত ছিলেন অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী। তিনি বলেন, এই সাড়ে আট বা নয় লাখের মধ্যে ছোটোখাটো ভবনও আছে।

আমরা সমীক্ষাটি করেছি আসলে নীতিনির্ধারকদের পরিস্থিতি এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। আজকের সভায় সেটি তাদের বলা হয়েছে। তারাও অনুধাবন করেছেন,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

আনসারী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে অনেক একতলা বা দোতলা ভবন আছে।

তবে ৪২টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য আগে থেকেই বলে আসছেন যে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের কাতারে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।

তবে ঘনবসতির এই শহরটির ঝুঁকি কমাতে পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও তার বেশিরভাগই আলোর মুখ দেখেনি।

আর্থ অবজারভেটরি সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং মিয়ানমার- এই তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান, যা বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

তবে সাধারণত প্রতিবারই কোনো ভূমিকম্প হওয়ার পরই ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়, যা ধামাচাপা পড়ে থাকে আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানার আগ পর্যন্ত।

এর আগে ২০০৯ সালে সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) জাইকার যৌথ জরিপে জানা গিয়েছিল যে ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙ্গে পড়বে এবং লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তূপ।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বরাবরই বলে আসছে যে ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে।

এছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় এই অপরিকল্পিত ভবনগুলো সাথে সাথে ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সেইসাথে গ্যাস, বিদ্যুৎ পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

তবে অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্প বিষয়ক নতুন সংস্থাটি তৈরি হলে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিরোধী ব্যবস্থা কিংবা প্রশিক্ষণ সবকিছুই ওই সংস্থাটি দেখভাল করবে। ফলে সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এটা আসলেই খুব জরুরি ছিল,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

 


আরও খবর



নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের নির্বাচনে স্থগিতাদেশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ 20২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩ | ৬২জন দেখেছেন

Image

মির্জা হৃদয় সাগর, জেলা প্রতিনিধি (নেত্রকোনা):

নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের নির্বাচন স্থগিতাদেশের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে নেত্রকোনার সাংবাদিকরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া পৌরসভার সামনের সড়কে এই অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।


প্রেসক্লাবের বাইরে থাকা নানা অপকর্মে অভিযুক্ত নামধারী সংবাদকর্মীরা মামলা করায়। আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে।এই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে প্রথম দিন অনিদির্ষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করা হয়। প্রথম দিনের ন্যায় আজ দ্বিতীয় দিনেও সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সভা পালন করছেন প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা।


জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পালের সভাপতিত্বে প্রহসনের রায় দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে বিচারকের অপসারণ দাবী করেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এসময় বক্তারা বলেন, আদালত থেকে রায় ঘোষণা হবার আগে থেকেই নির্বাচন স্থগিতাদেশ হবার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায় এতে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় এটা ষড়যন্ত্রমূলক ও পূর্ব পরিকল্পিত। যে কারণে সাংবাদিকরা এই রায়কে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক প্রহসনের রায় বলে আখ্যায়িত করেন।


কাজেই এই প্রহসনের রায়কে অবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করে দ্রুত সময়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবী জানানো হয়। তারা আরও বলেন প্রেসক্লাবের সদস্যও নয় এমন ব্যক্তি আবার সামাজিক গ্রহণ যোগ্যতাহীন ব্যক্তির মামলা করার এখতিয়ার বহির্ভূত মামলায় কি করে এমন রায় দেন এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিকসহ সূধী সমাজে। এতে জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ বক্তব্য রাখার পাশাপাশি আগামী দিনে পুরো শহর অচল করে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন।


উল্লেখ্য, মামলা দায়ের কারি ব্যক্তি নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবে সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করলেও গঠনতন্ত্র মোতাবেক যোগ্যতা না থাকায় তার সদস্যপদ প্রদান করা হয়নি। প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের বাহিরে কখন কোনো সদস্য পদ দেওয়া হয়নি, সেই নিয়ম অনুসারে ওই ব্যক্তি সদস্য পায়নি।


যে কারণে প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে এবং নির্বাচন বানচালের জন্য ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করলে ২২ মার্চ নির্বাচনে ভোট গ্রহণে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক মো. আরিফুল ইসলাম নির্বাচনের আগেরদিন ২১ মার্চ বিকাল সাড়ে চারটায় এই প্রহসনের রায় প্রদান করেন।


আরও খবর



গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০ দফা প্রস্তাবনা পেশ

প্রকাশিত:শনিবার ০৪ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩ | ৯৮জন দেখেছেন

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা :

কার্যকর স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতি রোধ, জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচনের প্রতিবাদ, কুমিল্লা বিভাগ ও কুমিল্লা বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা সহ ১০  দফা দাবিতে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ব্যবস্থাপনায় শনিবার সকাল ১০ টায় কুমিল্লার টাউন হল ময়দানে বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মতিন। প্রধান বক্তা ছিলেন, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ স.উ.ম আবদুস সামাদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ক্ষমতায়  জন্য ও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ অসুস্থ প্রতিযোগিতার বলী হয় সাধারণ জনগণ। গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার ভুলন্ঠিত হচ্ছে বার বার। এ অবস্থা আর চলতে পারে না। আমরা চাই দেশে সুস্থধারার রাজনীতির বিকাশ হোক, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত হোক। এ জন্য চাই স্বচ্ছ , অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য  নির্বাচন। আইন পাশ করে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর স্বাধীন করতে হবে। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক বা দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেনা এবং নিরপেক্ষ, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পাদনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যে স্থায়ী সমাধান নয় তা  ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন দেশের অধিকাংশ মানুষ সূফিবাদী। অথচ সুফিবাদীরা দেশে সবচেয়ে অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত। সুফিবাদী আলেম ও কর্মীদের কোন হত্যার বিচার হয় নি। বায়তুল মুকাররম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ কোথাও সুন্নি জনতার প্রতিনিধিত্ব নেই। দেশের উপজেলা পর্যায়ে নির্মাণাধীন ৫৬০ টি মডেল মসজিদের অধিকাংশই আজ স্বাধীনতা বিরোধী উগ্রবাদীদের দখলে। আমরা  সুফিবাদী জনতাকে তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে প্রেরিত অর্থে প্রদানসহ অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গীবাদীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচনের প্রতিবাদ জানিয়ে এম এ মতিন বলেন, ধর্মহীন শিক্ষানীতি জাতিকে পঙ্গু করার নামান্তর। অবিলম্বে প্রত্যেক শ্রেণিতে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সাথে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন, সীমান্তহত্যা বন্ধ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের আকর্ষণ করেন। তিনি ঐতিহাসিক কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে কুমিল্লা বিভাগ নামকরণের দাবি জানান। 

প্রধান বক্তা অধ্যক্ষ স.উ.ম আবদুস সামাদ বলেন, বিদ্যুত-গ্যাসের একেরপর এক মূল্যবৃদ্ধি করে জনজীবনকে অসহনীয় করেছে, অন্যদিকে পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির কালোবাজারি অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও দ্রব্যসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে আসছে। অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য লাগাম ধরুন। সাধারণ মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে সিয়াম-সাধনার সুযোগ করে দিন। তিনি পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের কর্তৃক মুসলমানদের গুলি বর্ষণের নিন্দা জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।


ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী এম এ ওয়াহিদ সাবুরীর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা আবু সুফিয়ান খান আবেদী আলকাদেরী , অ্যাডভোকেট আবু নাছের তালুকদার, এম.সোলায়মান ফরিদ, সৈয়দ মোজাফ্ফর আহমদ মোজাদ্দেদী, যুগ্ম মহাসচিব মাসুম বিল্লাহ মিয়াজী, সাংগঠনিক সচিব এড. ইসলাম উদ্দিন দুলাল, দপ্তর সচিব আবদুল হাকিম, সহকারী দপ্তর সচিব মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম,  জেলা ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতি মাওলানা মোঃ আব্দুল মান্নান, প্রচার সচিব মাষ্টার আবুল হোসাইন, প্রকাশনা সচিব সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম, তথ্য ও প্রযুক্তি  সচিব মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ইসলামিক স্কলার মাওলানা গোলাম কিবরিয়া আজহারী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন কাদেরী, মাওলানা আবদুল মোস্তফা রাহিম আযহারী, সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আযহারী, এড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মোঃ রফিকুল ইসলাম, সৈয়দ মোখতার আহমদ ছিদ্দিকী ,  হাফেজ মাওলানাআমিনুল ইসলাম, মোঃ: তাবারুক হোসাইন,সাংবাদিক গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, হাজী মোহাম্মদ রুবেল,  মহিউদ্দিন মোল্লা, পীর মাওলানা মোঃ আবদুল জব্বার, মাওলানা মোঃ আবদুল জলিল রেজভী,  কাজী আবুল বাশার, তাজুল ইসলাম ভূইয়া, গোলাম মোস্তফা শাহ, হোসাইন মোঃ আলমগীর, জসিম উদ্দিন নূরী, পীরজাদা কাজী ওমর ফারুক, নাছির উদ্দিন মাহমুদ, যুবনেতা অধ্যক্ষ ডা. এস এম সরওয়ার,  শাহিদুল ইসলাম মামুন,ছাত্রসেনার সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল জাবের ।


আরও খবর



ধানুয়া কামালপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৬ জন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা

প্রকাশিত:সোমবার ২৭ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩ | ৩৯জন দেখেছেন

Image

মাসুদ উল হাসান,জামালপুর প্রতিনিধি : 

১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা। পেয়েছি স্বাধীন রাস্ট্র। দেশকে বাচাঁতে জীবন বাজি রেখে যারা অস্্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন তাদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা। সেই দিন বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর কো অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সম্মুখযুদ্ধে তাঁরা বীরের মতো লড়াই করেছেন। বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বশির আহমেদ, নূর ইসলাম ও মতিউর রহমান।

জানা যায়, জামালপুর জেলার সর্ব উত্তরে ভারতীয় সীমান্তবর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর। কামালপুরের পাশেই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মহেন্দ্রগঞ্জ। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের এই মহেন্দ্রগঞ্জ। কৌশলগত কারনে ধানুয়া কামালপুর ছিলো পাক হানাদার বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ন স্থান। যে কারনে কামালপুরে ঘাঁটি গেড়েছিল পাকিস্থানী বাহিনী। কামালপুর দখলে নিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সম্মুখ যুদ্ধে পা হারান কর্ণেল আবু তাহের। 

শহীদ হন ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজসহ শতাধিক বীর যোদ্ধা। এক সময় অবস্থা বেগতিক দেখে ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় পাকিস্থানী বাহিনী। মুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর। কামালপুরে এমন বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে বীর বিক্রম, বীর উত্তম ও বীর প্রতীক খেতাব পান মোট ২৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৭১ সালের সেই সময়টায় বিভিন্ন সেক্টর ও সাবসেক্টরে ভাগ করা হয় পুরো দেশকে। মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন কোম্পানিতে মুক্তিযোদ্ধা নিয়োগ চলছে এমন খবর চলে আসে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ধানুয়া কামালপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা নাম লেখাতে শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। একে একে ৬৬ জন শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য প্রশিক্ষন নিতে ছুটে গেলেন ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জে। প্রশিক্ষন নিয়েই ঝাপিয়ে পড়লেন শত্রুবাহিনীর উপর। দীর্ঘ ৯ মাস বীরের মত লড়াই করে ছিনিয়ে আনলেন লাল সবুজের পতাকা।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম বলেন,ধানুয়া কামালপুর কো-অপারেটিভ উচ্চবিদ্যালয়ে আমি তখন নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। দেশের পরিস্থিতি আমরা বুঝে গিয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক আমাদের কাছেও পৌঁছে গেছে। প্রামাঞ্চল হলেও নানা মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের খবর পাচ্ছিলাম। আর ওপাশেই ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ, সেখানে গিয়ে দেখতাম যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের বয়সী অনেকেই যুদ্ধে যাচ্ছে, নিজেকে ঘরে রাখা কঠিন হয়ে গেল। চলে গেলাম মুক্তিযুদ্ধে। আমাদের স্কুলের ৬৬ জন ছাত্র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। 

জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার হরদেব সিং ক্লের বললেন কামালপুর পাকিস্থানি ক্যাম্পে কে যাবে আত্মসমর্পণের চিঠি নিয়ে। কামালপুর সীমান্তঘেষাঁ ভারতীয় গ্রাম ব্রাহ্মণপাড়ায় তখন মুক্তি বাহিনীর হাজারো সদস্য উপস্থিত। তবে কেউ সাহস করে বলতে পারছিলো না কে যাবে। বিগ্রেডিয়ার ক্লের যখন প্রশ্নটা দ্বিতীয়বার করলেন, ঠিক তখনই মুক্তিবাহিনীর এক কিশোর যোদ্ধা বলে উঠলেন,আমি যাব চিঠি নিয়ে। সেই কিশোর যোদ্ধা সাহসী বশির আহমেদ। 

বশির আহমেদ বলেন,আমাদের স্কুলের ১০০ গজ দূরেই ক্যাম্পটি। আত্মসমর্পণের চিঠিটি পকেটে নিয়ে পাকিস্থানি ক্যাম্পের সামনের রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আমার হাতে থাকা সাদা পতাকা নাড়ালাম। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া পেলাম না। ভয়াবহ অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কারণ, শত্রুপক্ষের ছোড়া একটি গুলিই কিশোর বশির আহমেদের জীবন কেড়ে নিতে পারত। তবে কোণঠাসা পাকিস্থানী বাহিনী একসময় ক্যাম্পের ভেতরে তাঁকে ডেকে নেয়। তিনি আত্মসমর্পণের চিঠি পৌঁছে দিলেন বিওপির কমান্ডার ক্যাপ্টেন আহসান মালিকের হাতে। দীর্ঘক্ষণ চিঠির বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না পাক বাহিনী। এরই মধ্যে মিত্রবাহিনীর চারটি যুদ্ধবিমান হামলা শুরু করল পাকিস্থানী ক্যাম্পে। বশির আহমেদকে বাংকারে ঢোকানো হলো। কয়েকজন সৈনিক হতাহত হলো। পাকিস্থানী বাহিনীর মনোবল আরও ভেঙে গেল। এরই মধ্যে মুক্তিবাহিনীর আরও একজন এলেন আত্মসমর্পণের চিঠি হাতে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান। চারপাশ থেকে হামলায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী। শত্রুমুক্ত হয় কামালপুর রণাঙ্গন। 

বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন,আমি গর্বিত যে আমার এই বিদ্যালয়ের ৬৬ জন প্রাক্তন ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৬৪ সালে এই স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় আশপাশের এলাকায় কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না। সবাই কামালপুরেই পড়তে আসতো। প্রায় ৮০০ শ শিক্ষার্থী ছিলো বলে জেনেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গুরুত্তপূর্ণ এক রণাঙ্গন ছিল বলে স্কুলের এত ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বিষয়টি আমাকে প্রতিদিনই সকল কাজে উৎসাহিত করে। আমি গর্বিত এমন ইতিহাস সৃষ্টিকারী একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলে। তিনি আরো বলেন,১১ নম্বর সেক্টরের এই বিদ্যালয়টির আশানুরুপ উন্নয়ন হয়নি। ক্লাস রুমের সঙ্কট রয়েছে। ইতিহাস রক্ষায় বিদ্যালয়টি আধুনিকায়নের দাবি জানান তিনি। 

ধানুয়া কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি বলেন, ১৯৬৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৭১ সালে এই বিদ্যালয় থেকে ৬৬ জন ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এটা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এই ইউপি’র চেয়ারম্যান হিসেবে গর্বিত আমি।


আরও খবর