শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :
নওগাঁয় শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের চাপের মুখে পদত্যাগ করার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলা নওগাঁর হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দুই দিন চিকিৎসার পরেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি, বরং আরও অবনতির কথা জানিয়েছেন স্বজনরা।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠাতে শিক্ষকদেরকে পদত্যাগের জন্য চাপের মধ্যে গত বুধবার এই ঘটনা ঘটে।
শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ নুরুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে গত ২৫ অগাস্ট থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে দাবি জানিয়ে আসছিলেন একদল শিক্ষার্থী। পরে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকে সমঝোতাও হয় তবে সেই সমঝোতার পরদিন আবার একদল শিক্ষার্থী তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে। সেখানে বহিরাগতরাও আসে, তারা অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের কটূক্তি ও চাপের মধ্যে এক পর্যায়ে তাকে পদত্যাগপত্রে সই করতে দেখা যায়। হঠাৎ করেই তিনি বুকে চেপে ধরে শুয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে ধরাধরি করে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।অধ্যক্ষ নুরুলকে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো হয় নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিকেল ৪টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে দুই দিন চিকিৎসার পর শুক্রবার সকালে অধ্যক্ষকে ঢাকায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। এই প্রতিবেদন লেখার সময় তাকে নিয়ে স্বজনরা ঢাকার পথে আছেন। এই শিক্ষককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক কাকলী হক। তিনি বলেন, বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জ্ঞান হারানো অবস্থায় একজন শিক্ষককে হাসপাতালে আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উনার জ্ঞান ফিরে আসে। “আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম উনি স্ট্রোক করেছিলেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অধ্যক্ষ নুরুলের ভাই আবু নাছের আহম্মেদ বলেন, পদত্যাগের দাবিতে গত রোববার থেকে তার প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বহিরাগত লোকজন আন্দোলন করছিল। এ নিয়ে মঙ্গলবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রবীন শিষ শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করেন এবং উভয়পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে দেন। বুধবার সকালে নুরুল ইসলাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে কিছু শিক্ষার্থী তাকে বিগত সময়ের কিছু হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দিতে বলেন। নুরুল হিসাবনিকাশ বুঝিয়ে দেওয়ার এক পর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে বহিরাগত কিছু লোকজন তার কার্যালয়ে ঢুকে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও শরীরে হাত দিয়ে টানাহেঁচড়া করতে থাকে। এভাবে এক ঘণ্টা চলার পর নুরুল ইসলাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, কথা যা বলছে, বোঝা যাচ্ছে না, ভেঙে ভেঙে বলছে। অবস্থা ভালো না বলেই ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছেন।
নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এস এম রবীন শিষও সমঝোতার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরেই অধ্যক্ষকে নিয়ে একটা অস্থিরতা চলছিল। মঙ্গলবার উভয়পক্ষের সঙ্গে আমি সভাও করেছি, সমঝোতার মধ্যে সভাটি শেষ হয়। কিন্তু রোববার আবার অস্থিরতা দেখা দেয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ওই অধ্যক্ষের বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানেন উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান অস্থিরতা বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি সভা করেছি। যেখানে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের অস্থিরতা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।