রোকসানা মনোয়ার :চাঁদ দেখাসাপেক্ষে এ বছর মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হতে পারে পবিত্র রমজান। রোজায় কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে প্রতি বছরই। এ বছরও এর ব্যত্যয় ঘটেনি; আগেভাগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা।
গত বছর রোজা শুরু হয় ৩ এপ্রিল থেকে। ওই সময় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলার দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। সেই ছোলা এখন প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
বাজার পরিস্থিতি বলছে, এবারের রোজায় দেশের মানুষকে ছোলা কিনতে হবে আগের চেয়ে অনেকটা বেশি দামে। কারণ দুটি, ছোলার আমদানিব্যয় বেশি এবং সরবরাহ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা। শুধু ছোলা নয়, একই চিত্র ভোজ্যতেল, চিনি, আটার মতো বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে।
টিসিবির সূত্রে জানা গেছে, রোজা সামনে রেখে এ মুহূর্তে আড়াই কোটি লিটার ভোজ্যতেল, ১৭ হাজার টন ডাল, ৬০০ টন ছোলা, ১৩ হাজার টন চিনি ও অন্যান্য পণ্যের মজুত নিয়ে সুলভ মূল্যের বাজার ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিয়েছে টিসিবি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভোজ্যতেলসহ আরো কয়েকটি পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া চলমান। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতি অর্থবছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মতো। সারা বছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এর মধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়।
সারা বছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে শুধু রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ফলে ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার ৫ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়। এদিকে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে আগামী মার্চের শুরু থেকেই বাজারে পণ্য নামানোর পরিকল্পনা টিসিবির। প্রতি বছর রোজা শুরুর কয়েকদিন আগে ট্রাক সেল শুরু হয়। কিন্তু এবার শুরু হচ্ছে মার্চের শুরু থেকে। টিসিবির মজুত সক্ষমতা বেড়েছে, বাজারে এর প্রভাব রাখার জন্যই এ উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে বছরে ১৮ লাখ টনের মতো সয়াবিন ও পাম তেলের চাহিদা আছে। রোজার বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা সাড়ে তিন লাখ টনের মতো। তেল সাধারণত অপরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করে পরিশোধন করা হয়। আবার বীজ আমদানি করে তেল উৎপাদন করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তেল, চিনি, ছোলাসহ নিত্যপণ্যের দাম এখন গত রোজার চেয়ে বেশি। এবার এখন পর্যন্ত আমদানি কম।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছরের রোজায় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৫৮ থেকে ১৭০ টাকা, যা এখন ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম গত এক সপ্তাহে বাড়েনি। তবে পাম সুপার তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা বেড়ে সর্বনিম্ন ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের রোজায় অবশ্য পাম তেলের আরো বেশি ছিল।
বাজারে চিনির দাম বাড়ছে। সরকার চিনির দাম প্রতি কেজি ১০৭ টাকা ঠিক করে দিলেও বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। গত বছর রোজায় চিনির প্রতি কেজির দর ছিল ৮০ টাকার নিচে। বাজারে আটা-ময়দার দাম যেমন চড়া তেমনি গম আমদানি কম। গত তিন মাসে গম আমদানি ২৫ শতাংশ কমে ১৬ লাখ টনে নেমেছে। বাজারে এখন এক কেজি প্যাকেটজাত আটা ৬৫-৬৮ ও ময়দা ৭৫-৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় তা ছিল যথাক্রমে ৪২-৪৫ ও ৫৫-৫৮ টাকা।
খেজুরের আমদানি বেশি কমেছে। রোজায় খেজুরের চাহিদা থাকে ৫০ হাজার টনের মতো। বিগত তিন মাসে খেজুর আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টন, যা এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ শতাংশ কম। অবশ্য জানুয়ারিতে খেজুর আমদানির ঋণপত্র ১৩ হাজার টন বেড়ে ২৯ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।