শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টার :
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় পরীক্ষা মূলকভাবে ডাব বেগুন চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আসলাম প্রামাণিক। প্রথম বার এই জাতের বেগুন চাষে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় ভাগ্য ফিরেছে চাষী আসলাম এর। চলতি মৌসুমে বেগুন চাষ থেকে প্রায় ২লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। পরীক্ষা মূলক চাষে ফলাফল খুব ভালো হওয়ায় আগামীতে বেগুনের এই জাত উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হবে বলে জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ।
এই বেগুনের আকার অনেকটা ডাবের মতো দেখতে হওয়ায় প্রতিনিয়তই আসলামের ডাব বেগুনের খেত দেখতে ভিড় করছেন লোকজন। আসলে দেশীয় উচ্চ ফলনশীল জাতের এ বেগুন দেখতে ডাবের মতো হওয়াই এই জাতের নাম দেয়া হয়েছে ডাব বেগুন।
যশোর এলাকার কৃষকের কাছ থেকে এই জাতের বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম। বেগুন চাষে সকল কৃষকদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সকল ধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রানীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা, এবারই প্রথম এ উপজেলায় এই জাতের বেগুন চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বেগুনের এই নতুন জাত কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করে উৎসাহী কৃষকদের মাধ্যমে উপজেলার ১৫ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই জাতের ডাব বেগুন চাষ করা হয়েছে। প্রথম চাষেই বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বেগুনের খেতে এখন গাছে গাছে ঝুলছে বড় বড় জাতের ডাব বেগুন। এ জাতের বেগুন গাছে পোকা-মাকড় বা রোগবালাই কম হয়। একটি বেগুন গাছ একটানা ৪মাস ফল দেয়। ফলের রং লালছে বেগুনি। খুবই নরম। একেকটি বেগুনের ওজন হয় প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম।
উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামে বেগুন চাষী আসলামের খেতে গিয়ে দেখা যায়, এক থেকে দেড় ফুট লম্বা গাছে বেগুন ঝুলে আছে। গাছের বেগুন ডাব আকৃতির এবং ফলন ভাল হয়েছে। কৃষকরা খুশি মনে মাঠ থেকে বেগুন তুলছেন। অনেকটা রাসায়নিক সার ছাড়াই বেগুন চাষ করা হয়েছে। প্রয়োজনে শুধু জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক দেয়া হয়েছে।
কৃষক আসলাম প্রামাণিক বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগীতায় এবারই প্রথম সোয়া ২ বিঘা জমিতে এই নতুন জাতের ডাব বেগুন চাষ করেছেন। যেখানে অন্যজাতের বেগুন চাষ করলে কীটনাশক ও সার দিতে হিমশিম খেতে হয় অথচ এই ডাব বেগুনের গাছে তেমন একটা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। যার কারণে খরচ অনেক কম হয়েছে। কিন্তু ফলনও হয়েছে যা আশা করা হয়েছিলো তার চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া ফলন ও দাম ভালো পাওয়াই তিনি অনেক খুশি। পুরো জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। আর খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হবে প্রায় ২লাখ টাকা। তার মাঠের ফলন দেখে উচ্ছাসিত হয়ে একই গ্রামের অন্য কৃষকরাও খুশি। উপজেলার অন্যান্য এলাকা থেকে তার ডাব বেগুনের ফসল দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন। আগামী বছর তারাও এই জাতের বেগুন চাষ করবে বলে আশা প্রকাশ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম বলেন, এই বেগুনের এই জাত হাইব্রিড নয়। দেশীয় উচ্চ ফলনশীল ও উচ্চ মূল্যের হওয়াই ভালো বাজার মূল্যে পেয়ে অধিক লাভবান হয়েছে কৃষকরা। যেহেতু এই জাতের বেগুন চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন তাই আগামীতে উপজেলার অন্য উৎসাহি কৃষকদের মঝে আমরা এই জাত ছড়িয়ে দিতে চাই। এতে করে পুরাতন ধারার বেগুন চাষ থেকে কৃষকরা বেরিয়ে এসে এমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষে লাভবান হতে পারেন সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক একই জমিতে একই ফসলের অধিক ফলন পাওয়ার জাতের ফসল চাষে সব সময় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আসছি।
তিনি আরো বলেন, আমি অনেক খোঁজ করে যশোর এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে এই ডাব বেগুনের বীজ সংগ্রহ করে আনি। এরপর কিছু আধুনিক কৃষকদের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষে যে অভাবনীয় ভালো ফলাফল পেয়েছি আমি আশাবাদি আগামীতে এই উপজেলাায় ডাব বেগুনের চাষে নীরব বিপ্লব ঘটবে এবং কৃষকরাও এই জাতের বেগুন চাষে অনেক লাভবান হবেন।