- উখিয়া ভূমি অফিসে প্রতিটি টেবিলে দিতে হয় ঘুষের টাকা।
- সহিমুরী খতিয়া নিতে সরকারি ফিঃ ২৪টাকা! ঘুষ দিতে হয় ১৫০০ টাকা।
- নাম জারি করতে সরকারি ফি ১১৭০টাকা, ঘুষ দিতে হয় ২০-২৫ হাজার টাকা।
- সরকারি নির্ধারিত ফি বাহিরে ঘুষ দিতে হয় ২০গুণ টাকা।
মুসলিম উদ্দিন :
কক্সবাজারের উখিয়া ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে চলছে অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি। উখিয়া ভূমি অফিসের টাকার অবৈধ লেনদেনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কর্মচারী-দালাল সিন্ডিকেট। এতে কানুনগো, সার্ভেয়ার, তহসিলদার, অফিস সহকারী, জারিকারক, পিয়ন সবাই কম-বেশি জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। এইছাড়াও নিরক্ষর মানুষের অসচেতনতার সুযোগে সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দালাল চক্র বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে অফিস ম্যানেজ করার নামে সহজ সরল সাধারণ মানুষের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন।
- ৪
ভূমি অফিসে সরেজমিনে ভোক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়- নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, দাখিলা, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, খাজনা দাখিল, খতিয়ান ইস্যু থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে সরকারি ফিঃ চেয়ে অতিরিক্ত ২০গুণ অর্থ দিতে হয়। আর এইভাবে অর্থ আদায় করে যাচ্ছেন কাননগো, ইউনিয়ন তহসিলদার, অফিস সহকারী, পিয়ন থেকে শুরু করে দালাল চক্র। আরো অভিযোগ রয়েছে- টাকা দিলে বদলে যায় মামলার তদন্ত রিপোর্টও।
খতিয়ান ইস্যু/নাম জারি করণে সরকারি ফি ১১৭০/- টাকা (অনলাইন ফি)। সময়কাল সর্বোচ্চ ১ মাস নির্ধারণ থাকলে ও দেখা যাচ্ছে ফি বাবদ ২০-২৫হাজার টাকা আর সময় ক্ষেপন করছে ১০-১১ মাস কিংবা আরো অধিক। এই সমস্ত কার্যক্রমে সরাসরি লিপ্ত হয়েছে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। উখিয়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সাধারণ মানুষকে সেবা তো দুরের কথা, কথা বলারও সুযোগ দেয়না। সরাসরি চিহ্নিত দালালদের দিয়ে কাজ করেন৷
সময় ক্ষেপনের বিষয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলছেন- আপনার ফাইল এসিলেন্ড স্যারের হাতে, স্যার সহজেই ফাইল পাশ করতেছেনা। তাতেই ভুক্তভোগী নিজেই কর্মকর্তাকে আরো টাকার লোভ দিয়ে নাম জারি সম্পূর্ণ করতে চেষ্টা করেন।
হারুনর রশীদ নামের এক ভুক্তভোগী বলেছেন, গত সপ্তাহে একটি খতিয়ানের সহিমুরীর জন্য আমার বাবার নামে দরখাস্ত জমা দিয়েছি নাজিরকে, সাথে দেড় হাজার টাকা দিয়েছি। তার পরেও সে খতিয়ান এখনো পাইনি৷
সুত্রে জানা যায়, দালাল/অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠলে অস্বীকার করতে সুবিধা হয় কর্মকর্তাদের। উখিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সচ্ছলতা নিয়ে প্রশ্ন রাখছেন ভুক্তভোগী উখিয়ার সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান- ‘ভূমি অফিসের কোন কাজ টাকা ছাড়া হয়না এটা এসিল্যান্ড নিজেও জানেন। তার পরেও করার কিছু নাই। টাকা নেওয়ার পরেও সময় মত কাজ করে দেয়না। আমার একটা কাজে ৩মাস ধরে ভূমি অফিসে ঘুরতেছি। তবে নাই কোন হয়রানির শেষ।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উখিয়ার এক সার্ভেয়ার জানান, ‘তহসিলদার খালেদা প্রতিটি মামলার প্রতিবেদনের জন্য নেন ২/৩হাজার টাকা। তিনি আরো জানান- ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোবারক হোসেন প্রতিটি কাজে ২/৩হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০-৪০হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন৷’
উখিয়া উপজেলা ভূমি অফিসে নিয়মিত কাজ করেন একজন (দালাল) পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান- ‘আমরা মানুষের কাজ থেকে যা পারি নিয়ে ওখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী, অফিস সহকারী সানজিদা আফরীন, সার্টিফিকেট সহকারী মোঃ ইয়াছির আরাফাত সিফাত, নাজির বাপ্পারাজ দাশ, অফিস সহকারী নূপুর পাল, সার্ভেয়ার মোবারেক হোসেনসহ অন্যান্য যারা আছে তাদের প্রতিটি টেবিলে টাকা না দিলে কাজ করে না৷ নির্ধারিত টাকা না দিলে আমাদেরও চিনেন না। তাদের প্রতিটি টেবিল ম্যানেজ করে যে টাকা থাকে তা আমরা পায়। তিনি আরো জানান, দুঃখের বিষয় হচ্ছে টাকা দিলেও সময় মত কাজ করে না।
এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা সালেহ আহমদের সাথে ফোনে দিলে কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।