Logo
শিরোনাম

ভিডিও ক্লিপ নিয়ে বিরক্ত প্রভা

প্রকাশিত:সোমবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ |

Image

ছোট পর্দার এক সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা। দীর্ঘ বিরতির পর তিনি কাজে ফিরেছেন। কাজে ফিরে ভিডিও ক্লিপ নিয়ে খুব বিব্রত হয়েছেন তিনি। জানালেন অনুমতি ছাড়া সহশিল্পীর ভিডিও ধারণের কথা।

সম্প্রতি তোমারি বিরহে রহিব বিলীন নামে একটি নাটকের শুটিং শেষ করেছেন প্রভা। এরপর তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন একটি সংবাদ মাধ্যমকে।

সেখানে প্রভা বলেন, নাটকের শুটিংসেটে নিজস্ব ক্যামেরা ছাড়া অন্য ক্যামেরা দিয়ে সহশিল্পী কিংবা সহকারী পরিচালকের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ভিডিও ধারণ করা হয়। সেই ঘটনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে অভিনেত্রীকে।

সবার হাতে হাতে স্মার্টফোনের অসচেতন ব্যবহার সময়টাকে দূষিত করে তুলছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে ইউনিটে থাকা প্রায় সবারই ফেসবুক পেজ, টিকটক অ্যাকাউন্ট ও ইউটিউব আছে। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যও স্মার্টফোনের অপব্যবহার হচ্ছে শুটিং সেটে এমনটাই মনে করেন প্রভা।

প্রভার ভাষায়, আমি যাদের বিশ্বাস করতাম, যাদের সহশিল্পীর চেয়ে ভালো বন্ধু মনে করতাম, তাদের কিছু কর্মকাণ্ড আমাকে আহত করেছে। এমনও দেখেছি, কোনো কোনো সহশিল্পী আছেন, তাদের ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউব আছে, ভিউ পাওয়ার জন্য শুটিং সেটে এমন কিছু অ্যাকটিভিটি করেন, যেটার কোনো অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেননা।

তিনি আরও বলেন, আমারই একজন সহকর্মীকে প্রায়ই দেখেছি, অনুমতি ছাড়াই এমন কর্মকাণ্ড করেন। তার সহকারী ক্যামেরা চালাচ্ছেন, অথচ সেটা শুটিংয়ের কিছু না, যেটার জন্য বিব্রতবোধ করেছি! এসব যে সেই সহশিল্পী ইচ্ছাকৃত করতেন, তা ভিডিও ক্লিপগুলো প্রকাশের পর বোঝা যেত। ওই সহশিল্পীকে প্রায় সময় আরও অনেককের সঙ্গে এমন আচরণ করতে দেখি। এসব ভিডিও ক্লিপ ইউটিউব বা টিকটকে দেখতাম, আমাকে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত করেছে এসব।

সাদিয়া জাহান প্রভা ২০০৫ সাল থেকে মডেলিং এর মাধ্যমে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। তার জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনগুলোর মাঝে রয়েছে মেরিল, তিব্বত, পন্ডস, বাংলালিংক, জুঁই তেল ইত্যাদি। প্রভা অনেক জনপ্রিয় টেলিফিল্ম, নাটক, মডেলিং এবং বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন তারমধ্যে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

 


আরও খবর



ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে ইউরোপের তিন দেশ

প্রকাশিত:শনিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ০৮ মে ২০২৪ |

Image

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে এবং স্পেন। শুক্রবার নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এক বৈঠকে বসেছিলেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমোন হ্যারিস এবং নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোর। সেখানে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদ্রিদ ফিলিস্তিনকে যত শিগগির সম্ভব স্বীকৃতি দিতে আগ্রহী। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসলোও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত।

আর আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডাবলিন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে চায় এবং সেই সঙ্গে আশা করে, ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোও এই পথ অনুসরণ করবে।

শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে আয়ার‌ল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমোন হ্যারিস বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের জন্য একটি রাষ্ট্র এবং সার্বভৌমত্বের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন জাতি যে সম্মান-মর্যাদা ভোগ করছে, ফিলিস্তিনের জনগণের জন্যও তা প্রাপ্য।

আমরা আজকের বৈঠকে ফিলিস্তিনকে (স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে) স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছি এবং এ ইস্যুতে সম্মিলিতভাবে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আর স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এবং নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোর বলেছেন, তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত, তবে এই মুহূর্তে এক্ষেত্রে তারা কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করতে চান না। পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেবেন তারা।

প্রসঙ্গত,গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত হামলার জবাবে সেই দিন থেকেই উপত্যকায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত প্রায় ৭ মাসের অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৭৫ হাজার জন। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

এর আগে ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা। তাতে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরেও নিয়ে গিয়েছিল হামাস।

সেই জিম্মিদের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত ১৩২ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০৮ জন এখনও রয়েছেন হামাসের কব্জায়। তাদের মুক্তির জন্য গাজায় ছয় সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি আহ্বানে আলোচনা চলছে।

যদিও এই আটক জিম্মিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কতজন বেঁচে আছেন তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়েসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আগ্রহী। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর বিষয়টি আরও গতিশীল হয়েছে।


আরও খবর



রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট

প্রকাশিত:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ |

Image

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ দেশ। ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। বৃষ্টি এসে তাপ কমাবে মানুষ সেই আশায় থাকলেও গত এক মাস ধরে বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। মাঝেমধ্যে দু-এক জায়গায় বৃষ্টি হলেও তা গরম কমাতে খুব একটা সহায়ক ছিল না। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে অধিক আর্দ্রতায় শুকাচ্ছে না ঘাম, কাপড় ভিজে লেপ্টে যাচ্ছে শরীরে, আর দ্বিগুণ হচ্ছে অস্বস্তি। এই যখন পরিস্থিতি, এর মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহে। বাসা-বাড়িতে পানি না পেয়ে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।

গত কয়েক দিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাড্ডা, নতুন বাজার, রামপুরা, মেরুল, ডিআইটি, মালিবাগ, বাসাবো, মিরপুর, পুরান ঢাকা, মুগদা, মান্ডা, লালবাগ, রায়েরবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানি পাচ্ছেন না ঠিকঠাক মতো।

হঠাৎ রাজধানীর এতগুলো এলাকায় পানির এ সংকটের কারণ জানতে গেলে ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হয়, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে কয়েক দিনের অসহনীয় গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে। মূলত যেখানকার ডিপ টিউবওয়েলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সেসব এলাকায় কিছুটা পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে কয়েকদিনের অসহনীয় গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে। সেসব জায়গায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আবার কিছু এলাকায় ঢাকা ওয়াসার গভীর নলকূপ কম থাকায় সেখানেও পানির সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে লাইনে পানি না পেয়ে যারা টাকার বিনিময়ে ওয়াসার গাড়ির পানি অর্ডার করছেন তারাও ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার আওতায় ১০টি মডস জোনে পানির চাহিদা জানানো হলে বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে বাসা-বাড়িতে পানি পৌঁছে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি ছয় হাজার লিটারের একটি বড় গাড়ির জন্য নেওয়া হয় ৬০০ টাকা। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি থাকায় সিরিয়াল দিয়ে, ফোন করেও এসব পানির গাড়ি পাচ্ছেন না পানি সংকটে থাকা বাসিন্দারা। অভিযোগ এসেছে, ৬০০ টাকার গাড়ির জন্য হাজার-বারোশ টাকা দিয়েও সিরিয়াল পাচ্ছেন না তারা।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ভাড়া বাসায় থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাফায়েত ইসলাম। গত ৪-৫ দিন ধরে বাসায় পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তার। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ৪-৫ দিন ধরে ওয়াসার লাইনে পানি পাই না আমরা। এত গরমে মানুষের জীবন যায় যায় অবস্থা, এর মধ্যে বাসায় পানি না থাকা যে কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো সম্ভব না। এই ৪-৫ দিন গোসল নেই ঠিকমতো, বাথরুমে যাওয়া যায় না। আমাদের সমস্যা নিরসনে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না ওয়াসাকে।

যাবির হাওলাদার নামে একই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, আমরা ওয়াসার মডস জোনে বারবার যোগাযোগ করছি। বারবার অর্ডার দিয়েও আমরা পানি পাচ্ছি না। পানির গাড়ি পেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ৬০০ টাকার পানির গাড়ি দ্বিগুণ টাকা দিয়েও অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে না।

একই অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়েও। এ ব্যাপারে মডস জোনের আওতায় বাড্ডার বৌবাজার এলাকার ওয়াসার পাম্পের অপারেটর মনিরুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে পানি সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা মেশিন চালিয়ে ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না। পানির স্তর নিচে নেমে গেছে কিছু কিছু এলাকায়। গরমে পানির চাহিদাও অনেকগুণ বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে পানি সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বিকভাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। তবে গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির উৎপাদন কিছু কিছু জায়গায় কম হচ্ছে; মূলত সেই সব এলাকাতেই কিছুটা পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসা বলছে, প্রতিদিন প্রায় ২৯০ কোটি লিটার পানির উৎপাদনের সক্ষমতা আছে তাদের। গরমকাল এলে রাজধানীতে পানির চাহিদা থাকে ২৬০ কোটি লিটার। সে হিসাবে পানি সরবরাহে ঘাটতি থাকার কথা না। তবে, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতি নির্ভরশীলতাই পানির বর্তমান সংকটের কারণ।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার রয়েছে পাঁচটি। তবে সংস্থাটি পানি পাচ্ছে চারটি শোধনাগার থেকে। উপরিতলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য এখনো পূরণ করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরিতলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ ওয়াসার সরবরাহ করা পানি আসছে ভূগর্ভ থেকে।

প্রসঙ্গত, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসার সব মডস জোনের কার্যক্রম তদারকির জন্য ১০টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে ঢাকা ওয়াসা। রাজধানীতে পানির সমস্যা সমাধানে এসব টিম আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত পানি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মনিটরিং করবে। গঠন করা এই ১০টি মনিটরিং টিম জোনভিত্তিক পাম্পগুলো নিয়মিত ও আকস্মিক পরিদর্শন করবে। পাম্প চালকরা যথানিয়মে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হবে টিমগুলো। পরিদর্শনকালে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করবে ঢাকা ওয়াসার এ কমিটি।

 


আরও খবর



নওগাঁয় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদকদ্রব্য, ধ্বংস হচ্ছে তরুন ও যুব সমাজ

প্রকাশিত:সোমবার ০৬ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :

নওগাঁর রাণীনগরে হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য। প্রাপ্যতা সহজলভ্য হওয়ায় কৌতুহলবশত না বুঝে মাদ্রকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে মরন ফাঁদ নামক মাদকের নীল ছোবলে যুক্ত হচ্ছে তরুন সহ যুব সমাজ। তরুন ও যুব-সমাজ নিয়ে চরম উদ্বিগ্নের মধ্যে রয়েছে অভিভাবকরা। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে দ্রুত মাদক কারবারীরা এক স্থান থেকে অন্যস্থানে মাদক দ্রব্য সরবরাহ করায় উদ্বেগের শঙ্কা আরো বাড়িয়েছে। 

অপরদিকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দলীয় ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্র-ছায়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা পুরো উপজেলাকে ঠেলে দিচ্ছে মাদকের অন্ধকার জগতে। বর্তমানে হাত বাড়ালেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, চোলাই মদ, দেশি মদ, রেক্টিফায়েড স্পিরিট, তাড়ি, বুপ্রেনরফিন, এম্পল পাওয়া যাচ্ছে। তবে গাঁজা ও ইয়াবার বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝে মধ্যে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন চিহ্নিত কিছু মাদক কারবারীদের আটক করে জেলে দিলেও আইনের ফাঁক দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেরিয়ে এসে আবার দেদারছে শুরু করে মাদকের কারবার। চিহ্নিত মাদক কারবারীদের ও মাদকের সম্রাটদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী করেছেন উপজেলার সচেতনমহল।  

আবার মাদকের সঙ্গে সঙ্গে জুয়া, পতিতাবৃত্তিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডও বেড়েছে সমান তালে। এতে করে এলাকার স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরছে। বহিরাগত ও স্থানীয় মাদকসেবী এবং বখাটেদের আনাগোনায় অতিষ্ঠ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। অনেকেই মাদকের কারবার করে হঠাৎ করেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হওয়ার কারণে স্থানীয়রা তাদের ভয়ে কোন প্রতিবাদও করতে পারে না।    

তথ্যঅনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পূর্বদিকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও উত্তর দিকে আদমদীঘি এবং সদর থানা। আবার দক্ষিণ দিকে নওগাঁর আত্রাই, নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকা ও পশ্চিম দিকে মান্দা উপজেলা। এমন সুযোগে উপজেলার পারইল ইউনিয়নের পারইল বাজার, বগারবাড়ি মোড়, ভান্ডারগ্রাম বাজার, বিলকৃষ্ণপুর বাজার, ডুবাগাড়ী বাজার, কালিগ্রাম ইউনিয়নের ভেটি এলাকা, আবাদুপুকুর বাজার, করজগ্রাম, রাতোয়াল বাজার, পাশের বগুড়ার আদমদীঘির চাঁপাপুর এলাকা, একডালা ইউনিয়নের অধিকাংশ জনগুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো, বড়গাছা ইউনিয়নের বড়গাছা বাজার, মালশন-গিরিগ্রাম বাজার, শলিয়া, ভাটকৈ বাজার, বিভিন্ন আশ্রয়ণপল্লীর এলাকা, সদর উপজেলার লোহাচ’ড়া বাজার, গহেলাপুর বাজার, সিম্বা বাজার এলাকা, রাণীনগর বাজার এলাকার সুইপার পট্টি (মেথর পট্টি), রেলস্টেশন ও রেলগেইট এলাকা, হাতিরপুল এলাকা, বটতলী মোড়, চোরপট্টীপাড়া, সদর ও আদমদীঘি উপজেলার সীমান্তবর্তি এলাকা চকউজির স্কুলের পুরো এলাকা, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ স্থানগুলো বাহাদুরপুর গ্রামের বাজার, হাসপাতাল মোড়, ত্রিমোহনী হাট, মন্ডলের ব্রীজ, কুবরাতলী মোড়, এনায়েতপুর মোড়, কুজাইল বাজার, গোনা ইউনিয়নের বেতগাড়ী বাজার, গোনা বাজার এলাকা, আত্রাই উপজেলার সীমান্তবর্তি এলাকা প্রেমতলী মোড়, পাগলীর মোড়, রেললাইন সংলগ্ন নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন মোড়, মিরাট ইউনিয়নের মিরাট বাজার, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তি এলাকা বান্দাইখাড়া এলাকাসহ পুরো উপজেলাতেই নতুন করে জমে উঠেছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের বেচা-কেনা।

উপজেলার ভেটি গ্রামের কালাম সরদার (ছদ্মনাম) বলেন, বেশকিছুদিন যাবত ভেটি গ্রাম এলাকাটি অনেকটাই মাদকমুক্ত ছিলো কিন্তু সম্প্রতি পুলিশের সোর্স সেজে চিহ্নিত মাদক কারবারীরা পুনরায় মাদকের রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে। কোন কিছু বলতে গেলেই পুলিশের ভয় ও হয়রানী মূলক মামলার ভয় দেখায়। মাঝে মধ্যেই সম্ভবত সিভিল পোষাকে পুলিশের লোকেরা এসে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে যায়। হাতের কাছে পাওয়ায় মাদকের নীল নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে তরুন ও যুব সমাজ। সন্তানেরা বড় হয়ে গেলে আর কত চোখে চোখে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে। অথচ পুলিশ বাহিনী ইচ্ছে করলেই নিমিষের মধ্যে এলাকা থেকে মাদকের দৌরাত্ম কমাতে পারে।     

কুবরাতলী এলাকার এক মাদককারবারী মো. রইচ উদ্দিন (ছদ্মনাম) বলেন থানা পুলিশ বিভিন্ন এলাকার মাদক কারবারীদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছে। যারা সেই চুক্তিতে সম্মত দিচ্ছে তারা দেদারছে ব্যবসা করছে আর যারা চুক্তির বাহিরে তাদেরকে বিভিন্ন সময় আটক করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্যের চলাচলের পথ রোধ না করা পর্যন্ত মাদকের বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। যারা প্রভাবশালী যারা থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে আসছে তারা প্রকাশ্যে মাদকের রমরমা ব্যবসা করলেও পুলিশ তাদেরকে দেখতে পায় না।  অথচ পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন চাইলেই উপজেলাকে মাদক মুক্ত করতে শক্তিশালী ভ’মিকা রাখতে পারে। 


পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মোঃ জাহিদুর রহমান (জাহিদ ফকির) মোবাইল ফোনে বলেন, বর্তমানে উপজেলার মধ্যে পারইল ইউনিয়ন মাদকের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। সীমান্তবর্তি ইউনিয়ন হওয়ার কারণে এই ইউনিয়ন দিয়েই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সবচেয়ে বেশি মাদক চালান হয়। আগে গোপনে হলেও বর্তমানে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে পারইল বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়। ইদানিং এই ইউনিয়নের অধিকাংশ স্থানই মাদক বিস্তারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিং-এ মাদক নিয়ে কথা বলে কোন লাভ হয় না। মাদক নিয়ে করা ওই অভিযোগ কিংবা কথাগুলো শুধুমাত্র রেজুলেশনের খাতার পাতায় লিপিবদ্ধ থাকে বাস্তবায়ন করে না কেহই। তাই মাদক নিয়ে আর কোথাও কোন কথা বলতে কিংবা তথ্য দিতে ইচ্ছে হয় না। 

তিনি আরো বলেন, যখন দেখি ইউনিয়নের তরুন-যুবকরা বুঝে না বুঝে চোখের সামনে মাদকের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে তখন খুব কষ্ট হয় খুব খারাপ লাগে। অনেকবার মাদকের বিস্তাররোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা বাস্তবায়ন করার মতো কোন সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করায় পরিষদে আমার কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছি। যদি রক্ষকরা ভোক্ষক হয় তাহলে সেই সমাজ থেকে মাদকের দৌরাত্ম বন্ধ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।  

থানার অফিসার ইনচার্জ আবু ওবায়েদ মোবাইল ফোনে সংবাদকর্মীদের বলেন, থানা পুলিশ সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে। আমরা প্রতিনিয়তই মাদকের বিস্তার রোধে এর সঙ্গে জড়িতদের আটক করছি এবং আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করছি। এছাড়া জনবল সংকট থাকার কারণে ইচ্ছে করলেও মাদকের বিষয়ে বেশি কার্যক্রমও পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই উপজেলায় মাদকের বিস্তারকে জিরো টলারেন্সে আনতে আমরা পুলিশ বদ্ধ পরিকর। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম মোবাইল ফোনে বলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো মাদকের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনগত তেমন কোন ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করতে পারি না। তবে মাঝে মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া মাদকের কারবার কোথায় হচ্ছে সেই তথ্যগুলো আমাকে জানালে আমি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।   


আরও খবর



রামগড় সীমান্তে দেড় লক্ষ টাকার ভারতীয় মাদকদ্রব্য জব্দ

প্রকাশিত:শনিবার ০৪ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ০৮ মে ২০২৪ |

Image

মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন রানা

রামগড়(খাগড়াছড়ি :

পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি রামগড় সীমান্তে ভারতীয় মদ এবং ফেন্সিডেল সহ অন্তত দেড় লক্ষ টাকার অবৈধ মাদকদ্রব্য আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি। 

রামগড় ব্যাটালিয়নের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় পহেলা মে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় পর থেকে অভিযান চালিয়ে এসব মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। এসময় চোরাকারবারিরা বিজিবির অভিযানের উপস্থিতিটের পেয়ে মালমাল রেখে পালিয়ে যায়।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাত ৯টা থেকে জোন আওতাধীন পানুয়া বিওপির হাবিলদার মো.মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টহল দল ভূঁজপুর থানার রহমতপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মালিকবিহীন ১৯ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডেল আটক করে। এছাড়াও একই সময়ে বাগান বাজার বিওপির নায়েব সুবেদার মো.আল মামুন সিকদারের নেতৃত্বে ফেনী নদীর কুল রুহুল আমিনের চরে অভিযান চালিয়ে ৯৬ বোতল ভারতীয় মদ আটক করা হয়। আটককৃত মালামাল ভূ্ঁজপুর থানায় জিড়ি পূর্বক পরবর্তীতে জনসম্মুখে ধ্বংস করার জন্য ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে রাখা হয়েছে। আটককৃত মাদকদ্রব্যের সিজার মূল্য ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৬০০ শত টাকা।

রামগড় ব্যাটালিয়ন ৪৩ বিজিবির জোন অধিনায়ক লে.কর্নেল সৈয়দ ইমাম হোসেন পিএসসি জানান,  সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি জোন আওতাধীন এলাকায় চোরাচালান, অপরাধ দমনে বিজিবির অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।


আরও খবর



প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে দেশ, বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ |

Image

রাজধানীসহ সারাদেশই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে। প্রখর রোদের পাশাপাশি ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি মিলেছে না কোথাও। ছোট-বড় সবাই গরমে কাবু হচ্ছে। অনেক সময় আমাদের নিজেদের অজান্তেই দূষিত পানি ঢুকে যাচ্ছে পেটে, আর দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া।

হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ সময়ের তুলনায় এখন হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের অধিকাংশই শিশু। এমনকি ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে জনসমাগম বাড়লে হাসপাতালেও রোগী সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের অন্যতম ভরসা কেন্দ্র আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ সময়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ পর্যন্ত। তবে বর্তমানে হাসপাতালটিতে দৈনিক ৫শ থেকে ৬শ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।

হাসপাতালটির পরিসংখ্যান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গরমের কারণে স্বাভাবিকভাবেই সবার তৃষ্ণা বেশি থাকে, যার ফলে যেখানেই সে পানি পায় সেটিই খেতে চায়। যে কারণে গরম এলেই ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়।

জানা গেছে, রোববার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত একটা থেকে আজ (সোমবার) দুপুর পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে আড়াইশো জনের মতো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগে গত রোববার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩৪ জন, শনিবার ৫২৫, শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রোগী ভর্তি হয়েছিল ৫৯৫ জন।

গত ১৫ দিন আগে পাতলা পায়খানার সঙ্গে জ্বর দেখা দেয় রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার সায়মা ভুঁইয়া নামে তিন বছরের এক শিশুকন্যার। এর একদিন পর স্থানীয় ফার্মেসি থেকে জ্বরের ওষুধ এনে খাওয়ানো হয়ে তাকে। এরপর সামান্য জ্বর কমলেও কমছিল না পাতলা পায়খানা। এরপর পাতলা পায়খানা কমার পর আবারও জ্বর আসে তার। সঙ্গে আবারও শুরু হয় পাতলা পায়খানা। এভাবে থেমে থেমে চলতে থাকে। এরমধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিলেও অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে শিশু সায়মার। নিরুপায় হয়ে অবশেষে চিকিৎসা নিতে আসে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে।

কর্তব্যরত চিকিৎসক শুরুতেই স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। চিকিৎসক জানান, এরইমধ্যে অনেকটা সংকটাপন্ন অবস্থার মুখোমুখি হয়ে পড়েছে সায়মা। শরীরে রক্তের পাশাপাশি সোডিয়াম, পটাশিয়ামও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। তবে সপ্তাহ খানেক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠার ব্যাপারেও আশাবাদী কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

এদিকে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে শিশু সায়মার মা বলেন, শুরুতে মেয়ের ডায়রিয়া দেখা দেয়। সঙ্গে শুরু হয় জ্বর এবং প্রচণ্ড বমি। ১৫ দিন আগে যখন ডায়রিয়া দেখা দেয়, তখন থেকেই তার জ্বর। তবে মাঝখানে জ্বর ছাড়ে, আবার আসে। এরকম কয়েকদিন হয়েছে। প্রথমে ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হয়েছে। এরপর স্থানীয় বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। সবশেষে যখন দেখছি তার অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না, বরং দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তখনই আত্মীয় স্বজনদের পরামর্শে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, গতকালের তুলনায় আজকে অবস্থা কিছুটা ভালো। ডাক্তার বলেছেন অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন এখানে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। আমার সন্তান যদি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়, তাহলে আরও ১৫-২০ দিন থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে দেড় বছর বয়সী শিশু রিফাত হোসেনকে নিয়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন বাবা রাশেদুল ইসলাম। তিনি আশঙ্কা করছেন, তীব্র গরমের কারণেই তার সন্তান ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে।

রাশেদুল ইসলাম বলেন, গতকালও আমার বাচ্চা ভালো। রাতে তাকে সুস্থ নিয়েই ঘুমায়েছি। পরে আনুমানিক রাত ১টার দিকে হঠাৎ করে বাচ্চাটা কেঁপে উঠে কান্নাকাটি শুরু করে। তখন তাড়াহুড়া পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি সে কান্নাকাটি করছে আর বারবার মোচড় দিচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় পাতলা পায়খানা। সারারাতই আমাদের এভাবে যায়। এরপর সকালে তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াই। এরপরও কোনোভাবে পাতলা পায়খানা কমছিল না, তাই দুপুরের দিকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যে পানি খাই যতটুকু জানি পিউর, কোন ঝামেলা নাই। আমার আরও ছোট বাচ্চা আছে, তারাও সেই পানি খায়, কখনও তাদের এরকম সমস্যা হতে দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে গরমের কারণেই এই সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। এক জায়গায় যাতায়াত করতে গিয়ে গাড়িতে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মতো গরমে ছিল। এতে করেই সে অসুস্থ হয়ে যায়।

শিশু সায়মা-রিফাতের মতো এরকম শতাধিক শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে যে পরিমাণ রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন, ঈদের ছুটি শেষে ঘরমুখো সব মানুষ রাজধানীতে ফিরলে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশি বার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি ভুক্তভোগী হয়।

তাদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরে টেপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে দূষিত হয়। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

আইসিডিডিআর,বির অ্যাসিস্ট্যান্ট সাইন্টিস্ট (নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস ডিভিশন) ডা. সারিকা নুজহাত বলেন, এখনো আমাদের হাসপাতালে রোগীর পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে আছে। কিছুদিন যাবত কেবল গরম পড়েছে, আবার ঈদের ছুটিটাও এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। হয়তো আগামী ১/২ সপ্তাহের মধ্যেই রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, যেহেতু গরমটা বেশি, স্বাভাবিকভাবে মানুষ বেশি তৃষ্ণার্ত ও পিপাসার্ত থাকে। আমাদের পরামর্শ হলো যেসব ছোট বাচ্চা বুকের দুধ খায়, তাদের অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এটি বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাছাড়া বাইরের খাবারদাবারে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার খুবই কম হয়, যার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বড়দের মধ্যে যারা বাইরে কাজ করেন তাদের বেশিরভাগই গরমে পিপাসা মেটাতে বাইরের বিভিন্ন শরবত ও খোলা পানি পান করেন। তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, বাইরের এসব খোলা পানীয় শরবত কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। বাইরে কাজ করতে হলে অবশ্যই বাসা থেকে বিশুদ্ধ পানি বোতলে করে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

সারিকা নুজহাত আরও বলেন, এখন যেহেতু গরমের সিজন, বাসায় খাবার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। এক্ষেত্রে খাবার সংরক্ষণের দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। এই গরম নষ্ট, পচা-বাঁশি খাবার কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। এমনকি বাইরের খোলা খাবার পরিহার করতে হবে।


আরও খবর