বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত ৩ মাসের কর্মসূচি ঘোষণা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ- এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, দেশে কর্তৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার স্বাধীনতার ৫৩ বছরের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে দিনের ভোট রাতে গ্রহণ করে। তিনি বলেন, সরকার জনগণের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার হত্যা করেছে। কথিত শান্তি সমাবেশে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে’ চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে উস্কে দিয়েছে। দেশের নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। নির্বাচনের নামে জাতির সাথে প্রহসন না করে দলীয়ভাবে বিজয়ী ঘোষণা দিলেই হয়, রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করার কী দরকার? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাপ্রেমী। তাই যে কোনভাবে তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশ আমাদের, নির্বাচনও আমাদের। সুতরাং আমার দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কিভাবে হবে? এখানে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। বিদেশীদের প্রেসক্রিপশনে রাষ্ট্র ও নির্বাচন পরিচালিত হবে না। দেশের মানুষ নানা সঙ্কট ভোগ করছে। নিত্যপণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, জাতীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রাজপথ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সঙ্কট আরো ঘুণিভূত হচ্ছে। সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের ন্যায় কলঙ্কিত নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। তিনি বলেন, সংবিধান রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে। তারাই বিগত দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল ও অবরোধ করেছে, ৫ শতাধিক মানুষ হত্যা করেছে।
সমাবেশে ১৬ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে থানায় থানায় তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলন, সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী সকল জেলা ও মহানগরে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন পীর সাহেব চরমোনাই। অবৈধ ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবীতে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।
আজ ১৫ জুলাই শনিবার বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে অথর্ব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিল, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (চজ) পদ্ধতির প্রবর্তন, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবীতে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, উপদেষ্টা আল্লামা খালিদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলাম,সহকারি মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম প্রমূখ।
পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, আওয়ামী সরকার দেশকে অকার্যকর করে বিচার ও আইন বিভাগকে ধ্বংস করেছে। নির্বাহী বিভাগ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকেও ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ বার বার সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। অথচ তারাই নিজেদের স্বার্থে বার বার সংবিধান পরিবর্তন করেছে। লুটেরা সরকারের একজনকেও ছাড় দেয়া হবে না। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের অবৈধ নির্বাচনে প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ভোট ডাকাতিতে সহযোগিতা করেছে তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারের যে কোন অন্যায় নির্দেশ পালন থেকে বিরত থাকুন। সেই সাথে সকল রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণকেও এই সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় নাই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না। ১৯৭৩, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ। চরমোনাই পীর বলেন, ‘রাজনৈতিক একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তৎকালীন বিরোধী দল বলেছিল নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। এ অজুহাতে বিরোধীদল অনেকদিন পার্লামেন্ট বর্জন করেছিল। আবার দ্বিতীয় বার ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে ওই সময়ের বিরোধী দল বলেছিল, ভোটে স্থূল কারচুপি হয়েছে এবং তারাও লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নাই।
মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, আওয়ামলীগ সরকার পুরো মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। সরকার বিগত নির্বাচনগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে চায়। অর্থ লুট-পাট, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থ পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। তারা উন্নয়নের নামে নিজেদের উন্নয়ন করেছে। তিনি এক দফার আন্দোলনে সকলকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে এর বিকল্প নেই।
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, দেশের জনগণের প্রতি সরকারের কোন দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে হয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। মানুষ হাহাকার করছে। দুর্নীতি, ঘুষ, চুরি-ডাকাতির উন্নয়ন হয়েছে। সর্বত্র ঘুষ ও দুর্নীতিতে সয়লাব। তিনি সিলেবাসের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নাস্তিক বানানোর পাঁয়তারার সমালোচনা করে বলেন, এই শিক্ষানীতি বাতিল করতে হবে।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদী সরকার দেশকে অকার্যকর দেশে রূপান্তর করেছে। ৫৩ বছর পরও দেশের জনগণ ভোটের অধিকার, বাক-স্বাধীনতার অধিকারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন আন্দোলনে সচিবালয়সহ সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ দুই মেয়রের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, মেয়রদ্বয় কোন উন্নয়ন না করলেও বিল্ডিং ভাঙ্গাতে সফল হয়েছেন। বসবাসযোগ্য নগরী গড়তে তারা ব্যর্থ। ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করছে। প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। অথচ উত্তরের মেয়র কলাগাছ থেরাপিতে ব্যস্ত।