সদরুল আইনঃ
গাজীপুরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে চৈত্রের শেষে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে।এতে হঠাৎ করেই তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের আধাপাকা ধান ক্ষেত।
ফলে বাধ্য হয়েই কৃষকরা আধা পাকা ও কাঁচা ধান কাটছেন। তারা এদিকে এত কষ্ট ও যত্নের ধান এভাবে কাটতে হচ্ছে- এটা কেউই মেনে নিতে পারছেন না।
তারা বলছেন, এগুলো ধান নয়, এগুলো তাদের রোদে পুড়া,বৃষ্টিতে ভেজা মুঠো মুঠো স্বপ্ন,সারা বছর বউ বাচ্চা নিয়ে দু'মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকার অবলম্বন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আর কয়েক দিন পরেই পুরোদমে শুরু হবে সোনালী ফসল ধান কাটার উৎসব।
কৃষকের চোঁখে মুখে ছিল সোনালী স্বপ্ন। এক বুক ভরা আশা।স্বস্তির পরম বিশ্বাস।উৎসবমুখর পরিবেশে ক্ষেত থেকে ধান কেটে গোলা ভরার প্রত্যয়।
গাজীপুরের অদিগন্ত মাঠে সোনালী ফসল ধান কেবল পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু হঠাত করে চৈত্র মাসের একেবারে শেষ সময় এসে অতিমাত্রায় জোয়ারের পানি বাড়ছে। এতে গাজীপুরের নিম্নাঞ্চলের ধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
তাই এই মুহূর্তে তারা বাধ্য হয়ে আধা পাকা ও কাঁচা ধান কাটতে হচ্ছে। ফলে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।কপালের বলীরেখায় পড়ছে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ, চোখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অন্ধকার।
জোয়ারের পানি কৃষকের সর্বনাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের ক্ষেতে জোয়ারের পানি ছুঁইছুঁই তাদের অনেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। জোয়ারের পানি অতিমাত্রায় বাড়ায় কৃষকের এই সর্বনাশের কারণ।
এ অবস্থায় অনেক এলাকাতে বাঁধ তৈরি করে ধানক্ষেত রক্ষার চেষ্টা করছেন স্থানীয় কৃষকরা নিজেরাই।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাইমাইল, জয়েরটেক, কালাকৈর, কাতলাখালী, কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় তুরাগ নদে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান ক্ষেত তলিয়ে যাচ্ছে।
এসব এলাকার কৃষকরা বাধ্য হয়েই আধাপাকা ও কাঁচা ধান কেটে নিচ্ছে। এই ক্ষতি সারা বছর তাদের কাঁদাবে। কারণ শুধু এই ধান বিক্রির টাকায়ই সারা বছর সংসার চলতো অনেক কৃষকের।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাইমাল এলাকার কৃষক আসাদুজ্জামান জানান, দুই বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। এভাবে জোয়ারের পানি অতিমাত্রায় বেড়ে ধানক্ষেত তলিয়ে যাবে আশা করিনি।
হাঁটু পানি থেকে বাধ্য হয়ে কাঁচা ও আধা পাকা ধান কাটতে হচ্ছে। এতে বড় ক্ষতি হয়ে গেল।‘সর্বনাশ, সর্বনাশ হয়ে গেল। জোয়ারের পানি সর্বনাশ করে দিলো। ’
একই কথার প্রতিধ্বনী শোনা গেল অনেক কৃষকের কন্ঠে। তারা বললেন আর সপ্তাহ পরেই ধান কাটতে পারতাম।কিন্তু হঠাৎ জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের সারা বছরের স্বপ্ন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এবছর গাজীপুরে ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে জোয়ারের পানি অতিমাত্রায় বাড়ায় অনেক এলাকায় ধানক্ষেত ডুবে যাচ্ছে।
কারো ক্ষেত যদি ৮০ ভাগ ডুবে যায় তাদের এখনই ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি।