
সম্প্রতি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগে প্রভাষক পদে নিযুক্ত হয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কৃষি বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোঃ রায়হান সজীব।
কেমন ছিলো তার জার্নি?সেসবই জানবো আজ।মোঃ রায়হান সজীবকে নিয়ে ফিচার লিখেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ সিনান তালুকদার। আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ।
কৃষিতে আসার গল্পটা কেমন ছিলো জানতে চাইলে তিনি জানান, কৃষির সাথে হৃদ্যতা অনেকটা পারিবারিক, বাবা কৃষি কাজ করতেন। পড়াশোনার ফাঁকে মাঝে মাঝেই বাবার কাজে হাত লাগাতেন।কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি নিয়ে পড়বেন এমন কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'উপকূলীয় কৃষি' বিভাগে ভর্তি হন,যা পরবর্তীতে "কৃষি" বিভাগে রূপান্তর হয়।
ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, ছোটোবেলায় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিলো কেবল পরীক্ষার খাতার 'জীবনের লক্ষ্য' প্রবন্ধে৷ কিন্তু সত্যিকারে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের বুনন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমিস্টারে। মনের মধ্যে আর একটি স্বপ্ন লুকায়িত ছিলো, সেটি হলো পুলিশ অফিসার হওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জার্নি টা কেমন ছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন,
"আমাদের সময়ে মফস্বল থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের জায়গা করাটা এতো সহজ ছিলো না। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর শুরু থেকেই ভালো করার নিমিত্তে নিয়মিত ক্লাস, ল্যাব এবং পড়াশোনা করতাম। এরই ফলশ্রুতিতে প্রথম সেমিস্টারে প্রথম হই।প্রতিনিয়ত নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করতে থাকি। সর্বশেষ নোবিপ্রবি কৃষি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতক কোর্স শেষ করি।
শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা' বিভাগে ভর্তি হই। এখানেও আলহামদুলিল্লাহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স শেষ করি। যদিও কোভিড- ১৯ এর কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১ বছরের বেশি সময় লাগে স্নাতকোত্তর কোর্স শেষ করতে। চারটি গবেষণা প্রকল্পে বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে কাজ করি প্রায় ২.৫ বছর। নিজের স্নাতকোত্তরের কাজ সহ স্যারদের সাথে সম্পৃক্ত থেকে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশ করি এবং অনলাইন, অফলাইনে বিভিন্ন কোর্স এবং ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহন করি। হাবিপ্রবিতে যুক্ত হওয়ার পূর্বে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক মাস শিক্ষকতা করি।
তার এই সফলতায় পরিবার ও পরিবারের বাইরের মানুষের ভূমিকা জানতে চাইলে তিনি বলেন-
"প্রত্যেক সফল মানুষের সফলতায় বাবা-মা'র অবদান অনস্বীকার্য, ঠিক আমার ক্ষেত্রেও ভিন্ন নয়। আমার সফলতার পেছনে আর একজন ব্যক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য, তিনি হচ্ছেন আমার বড় বোন।সবসময় তারা পেছন থেকে সাহস যুগিয়েছ।পরিবারের বাইরেও আমার জীবনে বেশ কিছু মানুষের প্রভাব রয়েছে, আমার এই ছোট্ট জীবনে অসংখ্য মানুষের স্নেহ, ভালোবাসা, সহযোগিতা পেয়েছি। পুরো ছাত্র জীবনে আমি সবসময় শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের মেধা মননের সংস্পর্শে আজকের এই আমি। বন্ধুদের কথা বলতে গেলে শেষ হবে না, তারা সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে ভালো কিছু করার। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
ভবিষ্যতে শিক্ষকতা সেক্টর থেকে আর কি কি করার ইচ্ছে আছে জানতে চাইলে তিনি জানান,তার প্রথম প্রাধান্য হচ্ছে নিজেকে একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা। কৃষি সেক্টরে তিনি একজন ভালো গবেষক হতে চান ।দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে।
অনুজদের জন্য(যারা কৃষি নিয়ে পড়ছেন)কিছু পরামর্শ চাইলে তিনি বলেন,
"আমার প্রিয় অনুজদের উদ্দেশ্য একটি উক্তি দিয়েই শুরু করি: The secret of success is constancy of purpose- Benjamin Disraeli
তোমরা তোমাদের যে লক্ষ্য ঠিক করেছো সেটা পূরণ করার জন্য মিশনে নেমে যাও এবং সেই অনুযায়ী কাজ করো। প্রতিনিয়ত নিজেকে উন্নত করো। শিক্ষকতার স্বপ্ন হোক কিংবা অন্যান্য সরকারি চাকরি বা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে গমন বা উদ্যেক্তা হওয়া। উদ্দেশ্য যেটাই হোক ,কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিশ্রম করো,সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
তার অন্যতম শখ হচ্ছে গাছ লাগানো।তবে ইদানীং পাখি পুষতেও শুরু করেছেন।অবসর সময়ে ঘুড়াঘুড়ি, আড্ডা, নতুন কিছু এক্সপ্লোর করা, গান শোনা, বই পড়া, সোশাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারা, বিশেষ করে দাবা খেলতে পছন্দ করেন।রায়হান সজীবের পছন্দের রং কালো এবং সাদা।