
ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মরক্কোতে শনাক্তকৃত মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছুঁইছুঁই। সোমবার সেখানে ২ হাজার ৪৯৭ জনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। উদ্ধারকাজ পরিচালনার অত্যাধুনিক সরঞ্জাম নেই মরক্কোর কাছে। রীতিমতো শূন্য হাতেই দুর্গত এলাকায় কাজ করছে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। এমন পরিস্থিতিতে উত্তর আফ্রিকার দেশটি ব্রিটেন-স্পেন-কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহায়তা গ্রহণ করেছে। এদিকে এটলাস পর্বতমালার তাফেঘাঘতে গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দা হয় মারা গেছে, অথবা নিখোঁজ বলে উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ানের।
প্রত্যন্ত বহু এলাকায় এখনও পৌঁছাতেই পারেনি
উদ্ধারকারী দল। এ প্রসঙ্গে ওই অঞ্চলের একজন বাসিন্দা বলেন, ভূমিকম্পের সময় ক্যাফেতে
ঘুমন্ত অবস্থায় আমার বাবা মারা গেছেন। আটকা পড়াদের বাঁচাতে শুক্রবার থেকে
উদ্ধারকর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। স্থানীয়রা পরস্পরকে সাহায্য করছে। অথচ এখন
পর্যন্ত প্রশাসনিক কোনো কর্মকর্তা আসেননি। উত্তর আফ্রিকার দেশটির সহযোগিতায় এগিয়ে
এসেছে প্রতিবেশী স্পেন। ব্রিটেন, কাতার ও সংযুক্ত আরব
আমিরাত পাঠিয়েছে ত্রাণ, বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দল, ডগ স্কোয়াড ও অত্যাধুনিক সরঞ্জাম।
সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ফ্রান্স আর তুরস্কও। তবে সেই সহায়তা নেওয়া হবে কি না, এখনও নিশ্চিত নয়। তুরস্ককে সহায়তা করতে প্রস্তুত, তারা রাজি হলেই সহায়তা দেওয়া হবে, বলেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়্যেব এরদোগান। এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও জানিয়েছেন, তার দেশও সহায়তার হাত বাড়াতে প্রস্তুত। তবে মরক্কোর তরফ থেকে অনুমতি মেলেনি এখনও।
‘সবাই মৃত অথবা নিখোঁজ’: মরক্কোর এটলাস পর্বতমালার তাফেঘাঘতে গ্রামের এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, ‘এই গ্রামের সব মানুষ হয় হাসপাতালে, আর না হয় মৃত।’ বিবিসি সরেজমিন প্রতিবেদনে বলছে, সেখানকার ইট ও পাথরের তৈরি গ্রামের পুরোনো ধাঁচের বাড়িগুলো কোনোভাবেই এই মাত্রার ভূমিকম্প সামাল দেওয়ার মতো ছিল না। গ্রামের ২০০ জন বাসিন্দার মধ্যে ৯০ জনের মৃত্যুর খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও অনেকেই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা হাসান বিবিসিকে বলেন, ‘তারা (নিখোঁজরা) সরে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। তাদের হাতে নিজেদের বাঁচানোর সময়ও ছিল না।
হাসান বলছিলেন তার চাচা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তাকে সেখান থেকে বের করার কোনো সম্ভাবনাও নেই। গ্রামে কারও কাছে এই মাত্রার ধ্বংসস্তূপ খোঁড়ার যন্ত্রপাতি নেই। আর তিন দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞরাও এসে পৌঁছায়নি। ‘আল্লাহ আমাদের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছেন এবং আমরা সবকিছুর জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এখন আমাদের সরকারের সহায়তা দরকার। তারা মানুষকে সাহায্য করার বিষয়ে অনেক দেরি করে ফেলেছে’, বলছিলেন তিনি। হাসান বলছিলেন যে মরক্কোর কর্তৃপক্ষের উচিত সব ধরনের আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করা। কিন্তু তিনি সন্দেহ পোষণ করেন যে, নিজেদের অহংকারের কারণে হয়তো তারা সেই সহায়তা নেবে না।
বিবিসি বলছে, সবদিক থেকেই শোনা যাচ্ছিল
অবিরাম কান্নার আওয়াজ। এটলাস পর্বতমালার মতো মরক্কোর আরও অনেক অঞ্চলেই জরুরি সেবা
পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষকে। বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসী হাত
দিয়ে বা তাদের কাছে থাকা বেলচা, শাবল দিয়ে ধ্বংসস্তূপ
সরিয়ে আটকে পড়া মানুষ উদ্ধার করছেন। আবার কিছুক্ষণ পর ঐ বেলচা আর শাবল দিয়েই
মরদেহের জন্য কবরও খুঁড়তে হচ্ছে তাদের।
বিবিসিকে এ রকম একটি গ্রামের একজন বাসিন্দা বলছিলেন, ‘মানুষের কাছে আর কিছুই বাকি নেই। গ্রামে কোনো খাবার নেই, শিশুরা পানির পিপাসায় কষ্ট পাচ্ছে।