নীলফামারী প্রতিনিধি
নীলফামারীতে বয়ে গেছে কালবৈশাখির ঝড়। রবিবার বেলা তিনটার দিকে বিক্ষিপ্তভাবে জেলার ডোমার ও ডিমলা উপজেলার ওপর দিয়ে ওই ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ে প্রায় সহ¯্রাধিক কাচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ী ভেঙে পড়েছে। উপরে ও ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। তার ছিড়ে পড়ে বিদ্যিৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ডোমার উপজেলার চিলাহাটিসহ অনেক এলাকা।
চিলাহাটি বাজারে ব্যবসায়ী আশরাফ কাজল জানান, হঠাৎকরে বেলা ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ ঝড় হানা দেয়। মাত্র দুই থেকে তিন মিনিট স্থায়ী ওই ঝড়ে চিলাহাটি বাজারের অসংখ্য দোকানপাটের টিনের ছাউনি উড়ে যায়। চিলাহাটি সরকারি কলেজের সামনে ১১ হাজার কেভি বিদ্যুতের তার ছিড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গোটা চিলাহাটি এলাকা। ওই ঝড়ে ভোগডাবুড়ী ও কেতকিবাড়ী ইউনিয়নে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় অন্তত তিন শতাধিক কাচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ী ভেঙ্গে পড়ে। এসময় অসংখ্য গাছপালা রাস্তায় উপড়ে ও ভেঙ্গে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাময়িক বিঘœ ঘটে। একইভাবে উপজেলার গোমনাতী ইউনিয়নেও ঝড় বয়ে গেছে। ওই ঝড়ে ভুট্টা ও বাদাম ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভোগডাবুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম কালু বলেন,‘ইউনিয়নে চিলাহাটি বাজার, বউবাজার, বোতলগঞ্জ এলাকাসহ চারটি ওয়ার্ডে ব্যাপক ও অপর পাঁচটি ওয়ার্ডে আংশিক ক্ষতি হয়েছে।’
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম বলেন,‘উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ভোগডাবুড়ি, কেতকীবাড়ি এবং গোমনাতি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিন ইউপির চেয়ারম্যানদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে তালিকা দিতে বলা হয়েছে। তালিকা হাতে পাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করা হবে।’
একই সময়ে ঝড় বয়ে যায় জেলার ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া, খগাখড়িবাড়ী, পূর্ব ছাতনাই, গয়াবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশাচাপনী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে। এসব ইউনিয়নে অন্তত এক হাজার কাচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয় বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।
জেলার ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, দুই থেকে তিন মিনিটের ঝড়ে এসব এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব এলাকায় ঘরে চাল উড়ে ও গাছ ভেঙ্গে সড়কে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়ে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন,‘আমি নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা গুলো পরিদর্শন করেছি। উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে কম বেশি ক্ষতি হয়েছে। বেশির ভাগ ইউনিয়নে কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা তাৎক্ষনিক বলা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য বলা হয়েছে। তারা কাজ করছেন।’
এদিকে ঝড় আর শীলা বৃস্টিতে মাঠে থাকা বোরো, ভুট্টা, মরিচ, পাট ও শাক সবজির ব্যাপক ভাবে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এখনও কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা এই মূর্হুতে বলা সম্ভব না হলেও সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন,‘তিন উপজেলায় টর্ণেডোর আঘাতে দুই হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমির ভুট্টা, বোরো ধান, মরিট, পাট ও শাক-সবজি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে।’
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন,‘ তিন উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ঘরবাড়ি,ফসল এবং গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ মাঠে রয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা প্রদানের প্রয়োাজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।