বাংলাদেশের জাতীয়
নির্বাচনে যে দলগুলো অংশগ্রহণ করে তাদের সবাই নির্বাচনের আগেই জয়ী হয়ে যেতে চায়।
শতভাগ জয়ের নিশ্চয়তা ছাড়া কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না। রাজনৈতিক দলগুলো এই
সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে না এলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া কঠিন বলে মনে করেন
বিশিষ্টজনরা।
বনানীর
ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত ‘প্রাক নির্বাচনী পরিবেশ’
শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তারা। এডিটরস গিল্ডের সভাপতি
মোজাম্মেল বাবু গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালনা করেন।
বৈঠকে
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, ‘নির্বাচনে
যারা অংশগ্রহণ করবেন তারা আগেই ১০০ ভাগ জয়ের নিশ্চয়তা চান। কিন্তু নির্বাচনে অংশ
নিলে হার-জিত মেনে নিতে হয়।’
বাংলাদেশের
নির্বাচন প্রসঙ্গে বিদেশি কূটনৈতিকদের তৎপরতা নিয়ে গোলাম রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের
নির্বাচনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক কিন্তু কারো যদি
ইন্টারেস্ট থাকে তা আমাদের জানতে হবে।’
জাতীয়
নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ
বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো
প্রস্তুতি নিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু নির্ভর করবে সব পক্ষের অন্তর্ভুক্তিমূলক
একটি নির্বাচনের ওপর।’
নির্বাচন
পর্যবেক্ষক ও ফেমার সভাপতি মুনিরা খান বলেন, ‘সব সময় নির্বাচনের আগে এসে
বাংলাদেশের রাজনীতিকরা দেশের ও গণতন্ত্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেন। একটি
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেন হয় তার জন্য আমরা অনেক দিন থেকেই কাজ করছি। কেউ না কেউ তো
দেশের ক্ষমতায় আসবেই কিন্তু আমরা যদি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারি তা আমাদের
গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।’
সাবেক
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের
ইতিহাসে ১১টি নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে আমরা কখনো দুটি নির্বাচনের পরিবেশ একই রকম
থাকতে দেখিনি। আস্থার সংকট আমাদের নির্বাচনী পরিবেশকে সবসময়ই নষ্ট করেছে। এক দল
অন্য দলের প্রতি, সরকারের প্রতি জনগণের, নির্বাচনী সংস্থাগুলোর প্রতি
রাজনীতিকদের আস্থা নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো
গণতন্ত্রমনা হতে হবে।’
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রাক
নির্বাচনী পরিবেশ সব সময় একই রকম ছিল তবে বিভিন্ন সময়ে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে এসেও আমাদের রাজনীতিতে স্পষ্ট স্বাধীনতাবিরোধীরা রয়ে
গেছে। এ কারণে নির্বাচনের পরিবেশ বলতে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি সুবিধা পাবে আমরা
এমন কিছু চাই না।’
গোলটেবিল
বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, বাংলাদেশ নারী
প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর এবং পুলিশের ডিআইজি নজরুল ইসলাম।