বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আমাদের দেশের
মানুষও পিছিয়ে নেই। সব বয়সী মানুষরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এর জন্য দায়ী
জীবনযাত্রা। জাঙ্ক ফুড খাওয়া, ডিপ-ফ্রাইড চিপিস, চিনিযুক্ত
খাবার, ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার বেশি খাওয়া হলে ডায়াবেটিসের
ঝুঁকি বেড়ে যায়। সুষম ডায়েটে থাকলে আপনি এই রোগটি এড়াতে পারবেন। এ ছাড়াও,
স্ট্রেসও অনেকটা দায়ী। যা আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে
পারে।
ডঃ বিনীতা তানেজা, ফোর্টিস হাসপাতালের মেডিসিন পরিচালক বলেন,
“ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
রোগীর সংখ্যা কেবল বাড়ছেই না। এটি অনেক কম বয়সীদের মাঝে দেখাও দিচ্ছে। কখনও কখনও
উল্লেখযোগ্য লক্ষণ ছাড়াই এটি আমাদের আক্রান্ত করে থাকে। এর জন্য অনেকগুলো কারণ
দায়ী। জেনেটিক্স ডায়াবেটিসের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে,
বাবা-মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সন্তানদের ডায়াবেটিস হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ। তবে খাদ্যভাস এবং জীবনযাত্রার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
৯০ শতাংশ কমিয়ে ফেলা যায়”।
ডাঃ তুষার তায়াল, সি কে বিড়লা হাসপাতালের মেডিসিন
কনসালট্যান্ট জানিয়েছেন, “ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্কদের সাধারণত
ডায়াবেটিসের শুরুতে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। যখন পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকে না
বা ইনসুলিন প্রতিরোধ থাকে,
গ্লুকোজ বা চিনি আপনার কোষে প্রবেশ করতে পারে না। তারা বিভিন্ন
ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের জন্য শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। পরিবর্তে, আপনার রক্ত প্রবাহে শর্করার মাত্রা তৈরি হয়। শরীরের অনেক জায়গা
ক্ষতিগ্রস্থ হতে শুরু করে। অতিরিক্ত চিনি শরীরে চর্বি হিসাবে জমা হয়। যা
স্থূলত্বের দিকে ধাবিত করে”। তিনি আরও জানান, “ডায়াবেটিসের একটি শক্তিশালী জেনেটিক
প্রিডিসপোজিশন রয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে পরিবারের সদস্যরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে
ভবিষ্যতে তার অন্যান্য সদস্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের
জীবনযাত্রার অভ্যাসের কারণেই গত কয়েক বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্রুত
বৃদ্ধি পেয়েছে”।
খাদ্যভাস
ময়দা, জাঙ্ক ফুড, পরিশোধিত
কার্বস, কার্বনেটেড পানীয়, চিনি
সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। এটি স্থূলত্বের কারণ হতে পারে। যা ডায়াবেটিসে
আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। ডঃ তানেজা বলেন, “এ সব খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি
হতে পারে। বিশেষ করে পেটের চারপাশে। যা ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তে
শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে”।
ব্যায়াম না করা
যারা ডেস্ক জব করেন, তারা দিনের একটি দীর্ঘ সময় বসে থাকে। এতে
শরীরে চর্বি জমে যায়। চাকরিতে থাকা অবস্থায় অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, দুর্বল ঘুম এবং চাপ লেগেই থাকে। যা আমাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল
এবং ভ্যাসোপ্রেসিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এগুলো ডায়াবেটিসের ভিত্তি। তাই
সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন হাঁটাচলা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম, অ্যারোবিক্সের মতো ব্যায়াম করুন।
এগুলো ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করবে। ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সহায়তা
করবে।
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া
ময়দা এবং পরিশোধিত চিনি ডায়াবেটিসের জন্য সবচেয়ে বড়
অপরাধী। এ সব খাবার দ্রুত আমাদের রক্ত প্রবাহে শোষিত হয়। এতে ওজন বৃদ্ধি পায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাই এ ধরণের খাবার থেকে দূরে থাকুন।
ধূমপান
সিগারেট, বিড়ি, হুক্কা বা
ভ্যাপ টানা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। কারণ এগুলোতে
প্রচুর বিপজ্জনক রাসায়নিক এবং কার্সিনোজেন রয়েছে। যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে
প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি ইনসুলিন প্রতিরোধের
কারণও হতে পারে। তাই এই বদভ্যাস থাকলে এখনই ছেড়ে দিন।
স্ট্রেস
স্ট্রেস এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে
পারে। ডায়াবেটিসের বিকাশে অবদান রাখতে পারে। তাই এমন লাইফস্টাইল পরিচালনা করার
চেষ্টা করুন যেখানে নিজেকে স্ট্রেস মুক্ত রাখতে পারেন।