বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমার
সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষের জের ধরে রাখাইনের সীমান্ত এলাকা
বাংলাদেশের তুমব্রু ও টেকনাফের কাছাকাছি মিয়ানমারের হেলিকপ্টার মহড়া দিচ্ছে। এতে
মিয়ানমার থেকে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা করা হচ্ছে।
উখিয়া ও টেকনাফ
সীমান্তে কয়েক’শ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।
গত রবিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার
সীমান্ত এলাকায় মহড়া দিয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের
তুমব্রু বাজার থেকেই স্পষ্ট হেলিকপ্টার উড়তে দেখেছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।
এর আগে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) টেকনাফের সীমান্তবর্তী এক বাড়ির দেয়ালে গুলি লেগেছে।
সীমান্তের ওপারে গত কয়েক দিনে সংঘর্ষ বাড়ায় ও উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় বিজিবির পক্ষ
থেকে সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার কথা বলা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন,
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া, তুলাতুলি ও কাঞ্জরপাড়া সীমান্ত, উখিয়া
উপজেলার পালংখালির আনজুমান পাড়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম এলাকায়
বেশি গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
পালংখালী অনজুমান পাড়া
এলাকার বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমারের মংডু ও বলিবাজার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের
সীমানার কাছাকাছি অবস্থান করছেন রোহিঙ্গারা। আবার কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নৌকা করে নাফ
নদীতে অবস্থান করছে। তবে খবর পাওয়ার পর এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সবাই। মিয়ানমার
সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) রোহিঙ্গাদের কোনো ধরনের বাধাও দিচ্ছে না। এতে
বাংলাদেশ সীমান্তের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারি বলেন, বেশ
কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারে আবারো উত্তেজনা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন গুলির বিকট শব্দ শোনা
যাচ্ছে। গত শনিবার মায়ানমার থেকে ছোড়া গুলি আমার ইউনিয়নের এক বাসিন্দার ঘরে পড়ে।
এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সীমান্তের কাছাকাছি বসবাস করা মানুষরা। ইতোমধ্যে অনেক
মানুষ ঘর ছেড়েছে। মিয়ানমারে উত্তেজনা শুরু হলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে শঙ্কা
থাকে। শুনেছি কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তের কাছাকাছি আছে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
নাইক্ষছড়ির তুমব্রুর
কোণারপাড়া এলাকার বাসিন্দা জলাল জানান, গত রোববার দুপুর ১টার পর তুমব্রুর
কোণারপাড়া, ভাজাবনিয়া এবং তুমব্রু বাজার থেকেই ওপারে হেলিকপ্টার মহড়া দিতে দেখা
গেছে। অন্তত ২৫ মিনিটেরও বেশি সময় হেলিকপ্টারটি চক্কর দিতে থাকে এবং এ সময় ব্যাপক
গোলাগুলির শব্দও শোনা গেছে। তার আগে শনিবার দুটি মর্টারশেল এপারে এসে পড়ে। এতে
পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের উনছিপ্রাং এলাকার জেলে পুতু বলেন,
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি বিলার ডিলাতে কিছু রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
আমরা মাছ ধরতে গেলে তাদের সাথে দেখা হয়।
বিজিবির টেকনাফ
ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য
অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি বাড়ানো
হয়েছে। একজন রোহিঙ্গাকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমরা সব সময়ই সজাগ আছি।
টেকনাফ উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের
ওপারে গোলাগুলি হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরের
ঘটনা। রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সতর্ক করা
হয়েছে।